এ পৃথিবীতে সকলেই বারবার আসছি। এর কারণ কি? যদি বলা যায় যে এ পৃথিবীই হলো মানুষ আসবার জগৎ, তাহলে তো বলতে হয় এই স্থূল দেহ ধরবার জন্য এ ব্রহ্মাণ্ডে কি অন্য কোন জগৎ নেই? আমরা সকলেই শুনেছি যে এই পৃথিবীর ন্যায় অসংখ্য জগৎ নাকি আরও আছে।
তাহলে আমরা শুধু এই রূপময় পৃথিবীতেই বারবার আসছি কেন? এই কেন’র উত্তর যদি কাকেও জিজ্ঞেস করা হয়, আমার মনে হয় অনেকেই এর উত্তর দিতে পারবে না। তাহলে কি এই রূপময় জগৎ এবং অন্যান্য জগৎ সম্বন্ধে সকল ধারণা মিথ্যা?
কিন্তু আমি জানি এসব মিথ্যা নয়। যদি মিথ্যাই হয়, তাহলে সত্যযুগ থেকে কলিযুগ পর্যন্ত আজও অসংখ্য বুদ্ধিজীবী মানুষ এই অনাদি অনন্তকে অনুসন্ধান করছে কেন? কেনই বা অসংখ্য মানুষের কেউ পাহাড়ের গুহায়, কেউ বনান্তরে, আবার কেউ বা সংসার ত্যাগ করে গৈরিক বসন পরে মালা-ঝোলা নিয়ে আশ্রম করে বসে আছে, আর কেনই বা অসংখ্য মানুষ অকৃতদার হয়ে এবং সংসারের যাবতীয় বস্তুর প্রতি বৈরাগ্য ভাবাপন্ন হয়ে আশ্রমের মধ্যে থেকে কৃচ্ছ্রসাধনে ব্রতী হয়েছেন?
এর কারণ কি হতে পারে? এর পশ্চাতে নিশ্চয়ই কোন কারণ আছে, যার জন্য এই সকল মানুষ সংসার, বাড়ি, গাড়ি, জমি-জায়গা, টাকা-পয়সা ইত্যাদি সমস্ত লোভনীয় সম্পদ ত্যাগ করে অনাহারে, অনিদ্রায় জীবনযাপন করছে এবং যার জন্য এসব ত্যাগ করতে কোন রকম দ্বিধাবোধও করছে না।
ওই সকল মানুষ নিশ্চয়ই এমন কোন এক অমৃতের সন্ধান পাবার জন্য ব্যাকুল হয়েছে, যা পৃথিবীর এই সকল পার্থিব বস্তু থেকে অনেক উন্নত স্তরের। তা না হলে মানুষ এই সব লোভনীয় বস্তু ছেড়ে এত কষ্টের মধ্যে থাকতে যাবে কেন?
যেমন বুদ্ধদেব রাজার ঘরে জন্মেছিলেন। তাঁর কোন জিনিষেরই অভাব ছিল না। তবে তিনি কিসের জন্য ওই সব রাজ ঐশ্বর্য ত্যাগ করে অনাদি অনন্তকে জানবার জন্য পাহাড়ের গুহায় অবস্থান করলেন? মনে হয় এই কথা আজ আর কারো জানতে বাকি নেই।
তারপর শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু তাঁর উপযুক্ত সুন্দরী স্ত্রীকে ত্যাগ করে কেনই বা ভগবৎ নাম বিতরণ করবার জন্য ঘর থেকে পথে নেমে এলেন? তবে কি বলা যায় যে তিনি অজ্ঞানী ছিলেন? কিন্তু তখনকার দিনে তাঁর মতো এত বড় জ্ঞানী বড়ো একটা ছিল না।
এসব দেখে কি মনে হয় ভগবান বলে যা এ পৃথিবীতে প্রচারিত, তা একদম অলীক অর্থাৎ মিথ্যা এবং গুজব?
এ ছাড়াও এ জগতে আরও অনেক সাধকের কথা প্রচারিত আছে। ভারতের সাধক সমাজেও দেখা যায়, কত সাধক এই পুণ্য তীর্থ ভারতবর্ষে এসে মানব কল্যাণ করার জন্য অমর হয়ে আছেন। এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য- বামাক্ষেপা, তৈলঙ্গস্বামী, রামপ্রসাদ, কমলাকান্ত, সন্তদাস বাবাজী, নিম্বাকাচার্য, তোতাপুরী, চণ্ডীদাস, রায়-রামানন্দ, জয়দেব, নিগমানন্দ, রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ ইত্যাদি।
এককথায় বলতে গেলে- ভারত কখনও সাধক শূন্য হয়নি। এঁনাদের নাম ভারতের সাধক সম্বন্ধীয় গ্রন্থে আছে। আবার এঁনাদের কৃপা প্রার্থী আরো কতজন আছে, সেও প্রায় কয়েক কোটি হবে।
………………………………………..
শ্রীশ্রী আচার্য জ্ঞানেশ্বরদেব প্রণীত ‘জ্ঞানেশ্বরোপনিষদ্’ (৪র্থ খণ্ড) থেকে
আরও আধ্যাত্মিক তথ্য পেতে ও জানতে :ভারতের সাধক-সাধিকা
পুণঃপ্রচারে বিনীত -প্রণয় সেন