স্বপনে তারক চাঁদ
হরিচাঁদ গুরুচাঁদ করিয়া স্মরণ।
তারক চাঁদের কথা করিব বর্নণ।।
তারকের নাম নিলে শমন পালায়।
তাহার স্মরণে হয় সর্ব ব্যাধি ক্ষয়।।
তার কিছু তত্ত্ব কথা বলিব এখন।
আশ্চর্য্য ঘটনা এক করিব বর্ণন।।
যশোহর জেলা মধ্যে মাগুরার কাছে।
দোয়ানী নামেতে গ্রাম সেই খানে আছে।।
সেই গ্রামে বাস করে শ্রী নকুল নাম।
সরল হৃদয়খানি ভক্ত গুণধাম।।
তাহার রমণী ছিল নামে লক্ষ্মী দেবী।
মনেতে আনন্দ পায় স্বামী পদ সেবী।।
সর্বগুণে গুণান্বিতা লক্ষ্মী দেবী হয়।
সে নকুল সদা ভাসে আনন্দ দোলায়।।
জমা জমি যাহা কিছু ছিল যে তাহার।
ভালভাবে চলে যেত তাহার সংসার।।
এই ভাবে কত দিন গত হয়ে গেল।
লক্ষ্মীর গর্ভেতে এক পুত্র জনমিল।।
সে গ্রামের চারিপাশে যত গ্রাম আছে।
তারক গোঁসাই এসে গান করিতেছে।।
কবিগান করে সেথা তারক গোঁসাই।
তারকের গুণগান করিত সবাই।।
জ্ঞানীগুণী যারা ছিল শুনি তার গান।
প্রাণভরে শুনে তারা জুড়াইত কান।।
তাই শুনি লক্ষ্মী দেবী মনেতে ভাবিয়া।
তারকে হেরিব আমি কেমন করিয়া।।
তারকের নাম গুণে ঝরে আখি জল।
কেমনে হেরিব আমি চরণ যুগল।।
উদ্দেশে তারক পদে প্রণাম জানায়।
নামগুণে হৃদয়েতে প্রেমের উদয়।।
এই ভাবে কত দিন গত হয়ে গেল।
দৈব যোগে ছেলেটির রোগ দেখা দিল।।
প্রাণাধিক সেই ছেলে ভালবাসে তারা।
প্লিহা জ্বরে ক্রমে ক্রমে হল জীর্ণ জ্বরা।।
পাড়া গায় ডাক্তার ছিল না তখন।
ঝাড়া পোছা মুষ্টি যোগ করে সর্বক্ষণ।।
আজ মরে কাল মরে অস্থি চর্ম সার।
জীবনের আশা ছেড়ে দিল যে এবার।।
মনে মনে লক্ষ্মী দেবী তারকে স্মরিয়া।
এই ভাবে সেই নারী বেড়াত কান্দিয়া।।
একদিন স্বপনেতে দেখিতে পাইল।
তারক আসিয়া তার শিয়রে বসিল।।
হাসি মুখে সে তারক কহিল তখন।
আসিব তোমার ঘরে মোরা কয় জন।।
আগামী সকালে তুমি করিবে রন্ধন।
তব ঘরে ভোজন করিব চারি জন।।
স্বপনে দেখিয়া লক্ষ্মী প্রভাতে জাগিয়া।
স্বামীর নিকটে গিয়া কহিল কান্দিয়া।।
স্বপনেতে দেখিয়াছি মানুষ রতন।
মস্তকেতে উভ ঝুটি সুন্দর গঠন।।
মুখ ভরা শছতার প্রেমের মুরতী।
মম ঘরে আসিবেন হইয়া অতিথি।।
চারিজন খাব মোরা আমাকে বলেছে।
পাক করা অনুমতি চাই তব কাছে।।
নকুল বলেছে তুমি দেখেছ স্বপন।
তব মনে যাহা ইচ্ছা কর হে পালন।।
তাই শুনে সেই লক্ষ্মী রন্ধন করিল।
হেন ক্ষণে তিন জন তথায় আসিল।।
তারক কাঙ্গালী আর সূর্য্যনারায়ণ।
তাই দেখে সেই লক্ষ্মী ভাবে মনে মন।।
স্বপনেতে কহিয়াছে চারিজন কথা।
আসিয়াছে তিন জন আর জন কোথা।
স্বামীর চরণে গিয়ে কেন্দে কেন্দে কয়।
স্বপনে দেখেছি যারে এসেছ হেথায়।।
হেন কথা সেই মেয়ে বলিতে বলিতে।
তারকের পদধরি লাগিল কান্দিতে।।
তাই দেখে সে নকুল চরণে পড়িল।
চরণ ধরিয়া শেষে কান্দিতে লাগিল।।
তারক ধরিয়া তুলে কহিল তখন।
বড় ক্ষুধা লাগিয়াছে করিব ভোজন।।
তাই শুনে সেই মেয়ে উঠিয়া দাঁড়াল।
ছল ছল আখি দু’টি কান্দিয়া কহিল।।
স্বপনে বলেছ তুমি পাক করিবারে।
রন্ধন করিয়া আমি রাখিয়াছি ঘরে।।
এত বলি সেই মেয়ে কান্দিয়া কান্দিয়া।
ভোজনের ঠাই করে আসন পাতিয়া।।
তিনটি আসন পেতে করে দিল ঠাই।
তাই দেখে কহিলেন তারক গোঁসাই।।
আর এক খানি পিড়ি আনিয়ে পাতাও।
ঘরে আছে তব ছেলে তাহারে বসাও।।
এক সঙ্গে চার জন ভোজন করিব।
তার দেহে যত রোগ আমি নিয়ে যাব।।
তাই শুনে দুই জনে কান্দিয়া ভাসায়।
মৃতপ্রায় সেই ছেলে আনিয়া বসায়।।
লক্ষ্মী দেবী অন্য দেয় হরষিত মন।
আনন্দে ভোজন করে সেই চার জন।।
মুখে রুচি পেয়ে সেই ছেলেটি খাইল।
সবাই সমান খেল সকলে দেখিল।।
সেই হতে সে ছেলের রোগ দুরে গেল।
হরিবলে সেই ছেলে নাচিতে লাগিল।।
তাই দেখি স্বামী স্ত্রী কান্দিয়া ভাষায়।
তারকের পদে পড়ে গড়াগড়ি যায়।।
তারক বলেছে মাগো মন খাটি চাই।
হরিচাঁদের কৃপায় কোন চিন্তা নাই।।
সেই হতে তারা সবে হরিভক্ত হল।
এ দীন বিনোদ বলে হরি হরি বল।।