ভবঘুরেকথা
ত্রিনাথ

[পয়ার]

কলির প্রারম্ভকালে দেব নারায়ণ।
নদীয়ায় শ্রীগৌরাঙ্গ রূপ করেন গ্রহণ।।
প্রতি ঘরে দ্বারে নাম সংকীর্তণ।
হরিবোল বিনা আর নাহিক কথন।।
কলির নরের পাপ তবু নাহি যায়।
শ্রীহরি ভাবেন তবে কি হবে উপায়।।
নদীয়ায় ত্রিনাথ মূর্তি পরিগ্রহ করে।
কেমনেতে জগজ্জন পূজিবে আমারে।।
কোনরূপে হবে ইহা ব্রহ্মাণ্ডে প্রচার।।
সবিস্তার পরিচয় শুন সবে তার।।
সেই গ্রামে থাকে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ।
অতি সে আতুর দ্বিজ না মিলে ওদন।।

গাভী চরাইয়া ফিরে মাঠের উপর।
সহসা হইল হারা সে গাভী তৎপর।।
অন্বেষণ করি দ্বিজ ভ্রমে স্থানে স্থান।
কোথাও না পায় দ্বিজ করিছে রোদন।
মনে মনে ভাবিতেছে দেব-নারায়ণ।।
হেনকালে দেখি তথা এক সরোবর।
মরিব ইহাতে মনে ভাবে দ্বিজবর।।
আচম্বিতে দৈববাণী দিল নারায়ণ।
ত্রিনাথে করহ পূজা অবোধ ব্রাহ্মণ।
গাভী হেতু কেন মিছে জীবন ত্যজিবে।
পুনরায় ধন-রত্ন গাভী তবে পাবে।।

তটিনীর তটে গিয়া করহ খনন।
তিন পয়সা প্রাপ্ত হবে শুনহ ব্রাহ্মণ।।
এক পয়সা গাঁজা আর এক পয়সা পান।।
তৈল লবে এক পয়সার শুন মতিমান।।
বিলম্ব না কর দ্বিজ শুনহ বচন।
ত্বরা গিয়া তিন দ্রব্য কর আনয়ন।
এত শুনি দ্বিজবর গমন করিল।
নদীর তীরেতে আসি মৃত্তিকা খুদিল।।
সেইখানে তিন পয়সা পাইল দেখিতে।
আনন্দে বিহ্বল বিপ্র লাগিল ভাবিতে।।
ভাবে কোন্ দেব ইনি না জানি কারণ।
কখনও তাহার সঙ্গে নাহি দরশন।।

যে হোক সে হোক তাঁরে করি নমস্কার।
মনোবাঞ্ছা পূর্ণ যেন হয় সে আমার।।
এত ভাবি দোকানেতে গমন করিল।।
মৃদুস্বরে দোকানীরে কহিতে লাগিল।।
শুনহ দোকানদার তিন পয়সা লহ ভাই।
তিন পয়সা ভিতরেতে তিন দ্রব্য চাই।।
তৈল গাঁজা দেহ আর এক পয়সার পান।
বিলম্ব সহিতে নারি করিব প্রস্থান।।
দোকানী বলিল শুন নির্বোধ ব্রাহ্মণ।
কিসেতে লইবে তৈল বলহ এখন।।
তৈলপত্র কিছু নাহি এনেছ সঙ্গেতে।
কিসে করি লবে তৈল বলহ ত্বরিতে।।

ব্রাহ্মণ বলেন শুন হে দোকানী ভাই।
কিসেতে লইব তৈল ঠাকুরে শুধাই।।
এত বলি দ্রুত গতি করিল গমন।
দেখেন সেখানে আর নাহি কোনজন।।
না দেখিয়া দ্বিজবর করেন রোদন।
বলি প্রভু কোথা তুমি করিলা গমন।।
কান্দিতে লাগিল দ্বিজ ভাবিয়া না পায়।
হেনকাল দৈববাণী হইল তথায়।।
তৈল আন বস্ত্রমধ্যে করিয়া বন্ধন।
আমার বচন কভু না হবে লংঘন।।
এত শুনি দ্বিজবর গমন করিল।
গিয়া তবে দোকানীরে ব্রাহ্মণ কহিল।।

কোঁচার কাপড়ে তৈল বাঁধি দেহ মোরে।
কি কার্য পাত্রেতে বল কহিনু তোমারে।।
এত শুনি সে দোকানী ভাবে মনে মনে।
নিশ্চয় উম্মাদ এই ব্রাহ্মণ-নন্দন।।
ঠকাইয়া দেয় তৈল বিপ্রের কুমারে।।
দেখিয়া কুপিত হইলেন গদাধরে।।
তৈলের কলসী লৈল করিয়া হরণ।
দেখিয়া বিস্ময় মুদি হইল তখন।।
দোকানী ভাবেন মনে এ ব্রাহ্মণ নয়।
বুঝিনু দেবতা ইনি হবেন নিশ্চয়।।
ব্রাহ্মণের পদ মুদি করিয়া ধারণ।
বলে প্রভু ক্ষম মোরে, আমি অভাজন।
ঠকায়ে দিয়েছি তৈল তোমারে আপনি।
সে দোষে ক্ষমহ মোরে, শুন দ্বিজমণি।।

ব্রাহ্মণ বলেন বাছা কিছু জানি নাই।
ইহার বৃত্তান্ত জানে ত্রিনাথ গোসাঞ্চি।।
মানহ তাঁহার পূজা পুন: তৈল পাবে।
তোমার মনের বাঞ্ছা তিনি পুরাইবে।।
মুদি বলে কোথা তিনি বলগো আমায়।
তোমার চরণে ধরি করিগো বিনয়।।
আদি অন্ত কথা তারে ব্রাহ্মণ কহিল।
শ্রবণ করিয়া মুদি আশ্চর্য হইল।।
মনে মনে মানস করিয়া ততক্ষণ।
মুদি দুরাচার পূজা করিল মনন।।
পূর্নবার তৈলকুম্ভ মুদি যে পাইল।
হরষিত হয়ে মুদি নিজগৃহে এল।।
কবিবর কহে শুন শুনে ভক্তগণ।
ত্রিনাথ প্রকাশ করে আপন পূজন।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!