অন্নপূর্ণা মাতার যশোদা আবেশ
পয়ার
ধরিয়া গোপাল বেশ পিয়াইত স্তন।
এই সেই মায়াপুরী এই বৃন্দাবন।।
যশোদা আবেশ হ’য়ে অন্নপূর্ণা কয়।
মা বলে ডাকরে বাছা এ দুঃখিনী মায়।।
কোথা বাপ বিশ্বরূপ আয়রে কোলেতে।
দেখিনা ও চাঁদমুখ বহু দিন হ’তে।।
শান্ত্বনা করিছে শ্রীযশোমন্ত ঠাকুর।
কি কহিলি কি গাইলি শুনিতে মধুর।।
সুস্থিরা হইয়া পরে কহে ঠাকুরাণী।
কি কহিনু কি গাইনু কিছুই না জানি।।
দেখিলাম হেন সেই নন্দের নন্দন।
মা মা বলিয়া মোরে পান করে স্তন।।
সাধু বলে কৃষ্ণ গুণ গাইতে গাইতে।
ব্রজ ভাব হ’য়ে থাকে ভক্তের দেহেতে।।
তোমার কি ভাব হয় বুঝিতে না পারি।
কাহা কিছু না বলিয়া থাক চুপ করি।।
এ সময় ঠাকুরাণীর একটি কুমার।
কৃষ্ণদাস নাম বিশ্বরূপ অবতার।।
সেই পুত্র করিতেন লালন পালন।
কৃষ্ণ ধ্যান কৃষ্ণ জ্ঞান করে অনুক্ষণ।।
যে দিন যশোদা ভাব আবেশ হইল।
সেইদিন রামকান্ত বৈরাগী আসিল।।
শুভ দিন বেলা এক প্রহর সময়।
দেবী চিড়া বানিবারে ঢেঁকিশালে যায়।।
পশ্চিমাভিমুখ দেবী দক্ষিণেতে ঢেঁকি।
কৃষ্ণ বলে চিড়া আলে ঝরে দুটি আখি।।
হেন কালে রামকান্ত বৈরাগী আসিয়া।
স্তন্যদুগ্ধ পান করে গালে হাত দিয়া।।
পুত্রভাবে ঠাকুরাণী রাখিলেন কোলে।
স্নেহাবেশে ভাসে দুটি নয়নের জলে।।
বলে অদ্য পোহাইল কি সুখ যামিনী।
প্রভাত আবেশ বুঝি ফলিল এখনি।।
রামকান্ত বলে মাগো বলি যে তোমারে।
বাসুদেব জন্মিবেন তোমার উদরে।।
কিছুদিন পরে রামকান্ত আর দিনে।
বাসুদেব কোলে করি বসিল যতনে।।
বাসুদেব বলে যাব সফলা নগরে।
পূজাদি লইব মাতা অন্নপূর্ণা ঘরে।।
বাসুদেবে ল’য়ে সাধু পরম কুশলে।
যশোমন্ত গৃহে আসি উপনীত হ’লে।।
মুহূর্তেক দিবা আছে সন্ধ্যার অগ্রেতে।
অন্নপূর্ণা ঝাড়ু দেন ঝাঁটা ল’য়ে হাতে।।
ঠাকুরাণী ঝাঁট দেন পূর্ব্বাভিমুখেতে।
রামকান্ত আসিলেন পূর্ব্ব দিক হ’তে।।
সন্মুখে যাইয়া সাধু বলে যে মাতায়।
কোলে কর বাসুরে সময় বয়ে যায়।।
আস্তে ব্যস্তে ঠাকুরাণী বাসুদেবে ধরে।
রাখিলেন পুত্র স্নেহে বাম কক্ষ পরে।।
হইল অপূর্ব্ব শোভা দরশন করে।
রামকান্ত নাচে চারিদিকে ঘুরে ফিরে।।
সজল নয়ন সাধু প্রেমে পুলকিত।
হাতে তালি দিয়া নেচে নেচে গায় গীত।।
দেখরে নগরবাসী হ’ল কি আনন্দ।
অন্নপূর্ণা অনায়াসে পাইল গোবিন্দ।।
কিবা পূন্য করেছিল চৌধুরীর ঝি।
সেই পূণ্যে পুত্র পেল বাসুদেব জী।।
রামকান্ত কহে যশোমন্ত বৈরাগীরে।
কিছুদিন বাসুদেবে রাখ তব ঘরে।।
ওঢ়াকাঁদি মাচকাঁদি ঘৃতকাঁদি আদি।
বহু গ্রামে ভ্রমিতেন কান্ত গুণনিধি।।
দুই চারি দিন পরে অথবা সপ্তাহে।
মাঝে মাঝে আসিতেন অন্নপূর্ণা গৃহে।।
যে যে দিন না আসিত থাকিতেন দূরে।
অন্নপূর্ণা পূজিতেন বাসুদেব জীরে।।
তুলসী চন্দন মেখে নানা পুষ্প তুলে।
দিত রাণী বাসুদেবে লহ লহ বলে।।
এইরূপে পক্ষান্তর ভ্রমণ করিয়ে।
দেশে গেল রামকান্ত বাসুদেবে ল’য়ে।।
কিছুদিন পরে সেই অন্নপূর্ণা সতী।
স্ত্রী আচারে যে দিন হইল শুদ্ধমতি।।
শয়নে ছিলেন শ্রীযশোমন্ত বৈরাগী।
অন্নপূর্ণা বসিলেন পদসেবা লাগি।।
পদ সেবি প্রণমিয়া করি জোড়পাণি।
পদ পার্শ্বে শয়ন করিলা ঠাকুরাণী।।
যশোদা আবেশ বর দিলা রামকান্ত।
বিরচিল তারক রসনা এ বৃত্তান্ত।।
আদেশে গোলোকচন্দ্র নরহরি কায়।
পূর্ণ কর বাসনা রসনা গীত গায়।।