ভবঘুরেকথা

শ্রী শ্রী হরিচাঁদের তিরোভাবে
ভক্ত মনোভাব প্রসঙ্গ

নর দেহ ছাড়ি হরিগুরুচাঁদে যায়।
দেশ বাসী নর নারী করে হায় হায়।।
কেহ বলে ছেড়ে গেল সোনার মানুষ।
বাঁচিয়া থাকিতে কেহ করি নাই হুষ।।
কেহ বলে ‘অকস্মাৎ হল ইন্দ্র পাত।
বিনা মেঘে শিরে হল দৃঢ় বজ্রাঘাত।।
কেহ বলে ‘নমঃশূদ্র জাতি ডুবে গেল।
আপদে বিপদে রক্ষা কে করিবে বল।।
আর জনে কহে “ভাই বড় দুঃখ মনে।
হরি বিনা রোগে শোকে বাঁচিব কেমনে।।
মহাব্যাধি লয়ে এল শ্রী হরির ঠাঁই।
শ্রী মুখের আজ্ঞা মাত্র ছাড়িত বালাই।। “
কেহ বলে “ ভাই সবে শোন দিয়া মন।
মহাপাপী সবে মোরা অতি অভাজন।।
তাই যদি নাহি হবে তবে বল দেখি।
এমন সোনার হরি কেন দিল ফাঁকি।।
নারী গণে জনে জনে করে আলাপন।
“ওলো দিদি কেন মোর হল না মরণ।।
কত দিন দেখিয়াছি শ্রী হরি চাঁদেরে।
রূপের ঝলকে হায় মন প্রাণ কাঁদেরে।।
দূর হতে মনহরা রূপ দেখিয়াছি।
মন খুলে মনো কথা কিছু না বলেছি।।
আজি কালি করি দিদি বলা হল নারে।
হরি চলে গেছে কথা আর বলি কারে।।
কোন লোকে বলে “ভাই,মোরা সবে অন্ধ।
এত দিন মনে কত করিয়াছি সন্দ।।
অকথা কু কথা কত বলিয়াছি তাঁরে।
হরি বিনে আজ দেখ যেন শূন্য ঘরে।।
থাকিতে মানুষ মোরা কেহ চিনি নাই।
শান্তি পতি বিনে বল কোথা শান্তি পাই।।
হরি যবে ছিল বেঁচে করেছি বিদায়।
অমূল্য পরশ মণি হারানু হেলায়।।
থাকিতে মানুষ বেঁচে কেহ নাহি চায়।
ছেড়ে গেলে সবে মিলে করে হায় হায়।।
দিন মানে সূর্য জ্বলে আকাশের গায়।
‘অসয্য অগ্নির কুণ্ড ‘ বলি লোকে কয়।।
সূর্য যবে ডুবে যায় কালো রাত্রি আসে।
সেই কালে বিশ্ববাসী সূর্য ভাল বাসে।।
যুগে যুগে পলে পলে নরে করে ভুল।
ফল খায় ডালে বসি নাহি চেনে মূল।।
রাম এল কৃষ্ণ এল এল গোরা রায়।
নর – রূপ – ধারী হয়ে অবতীর্ণ হয়।।
মানুষের সাথে মিশি মানব আচারে।
মানুষের খেলা খেলে থাকিয়া সংসারে।।
অন্ধ নরে মনে করে এই বুঝি মানুষ।
বোঝে না’ক এ মানুষ নয় সে মানুষ।।
আপনার মত তারে সবে মনে করে।
নিজ তুল্য মনে করে দেয় তাঁরে দূরে।।
নর রূপে নর সাথে করে নর খেলা।
যারা জানে তারা দেখে সেত প্রেম লীলা।।
নর রূপ ছাড়ি যবে প্রভু ফাঁকি দেয়।
নরে তবে বুঝে পরে করে হায় হায়।।
মনে ভাবে এই ভুল আর না করিব।
এবারে আসিলে প্রভু ধরিয়া রাখিব।।
ছলা কলা লীলাময় পুনঃ নরাকারে।
দেখা দেয় নর হয়ে আমাদের ঘরে।।

হয়ে সন্দ করে দ্বন্দ “এই কিরে সেই। “
তেমন মোহন রূপ এর দেখি কই?
চুল চিরে স্ববিচারে করে আনাগোনা।
ভুল করে পুনঃ তাঁরে চিনিতে পারেনা।।
সৃষ্টি মূলে আদি ভুল ব্রহ্মের বিকার।
ভুলে ভরা সসাগরা জগৎ সংসার।।
যার ভুল কাটিয়াছে চোখে নাহি কালি।
আব্রহ্ম তাহাতে ভরা দেখে যে সকলি।।
ভুলে তারে নাহি পায় ভুল ভুলে যায়।
নর মধ্যে সেই দেখে হরি রসময়।।
সেই ত দেখেছে সত্য সোনার মানুষ।
সেই মানুষের রসে হয়েছে বেহুঁশ।।
লীলা সাঙ্গ করিলেন প্রভু হরিচন্দ্র।
‘সব বলে অস্ত গেল পূর্ণিমার চন্দ্র’।।
জীব কালে যারা কভু দেখে নাই চাহি।
তারাও কাঁদিয়া কহে কেন দেখি নাহি।।
ঘরে ঘরে জনে জনে করে আলাপন।
হায় হায় কিবা হবে উপায় এখন।।
সবে বলে গুরুচাঁদে বলি “বড় কর্ত্তা।
তাঁর কাছে মিলিবে কি সেই সব বার্ত্তা।।
কেহ বলে বড় কর্ত্তা বলে যারে ডাকি।
হরিচাঁদ তারে কিছু দিয়া গেছে নাকি?
হরিচাঁদ পুত্র বটে তিনি মহাশয়।
তবু বল মূল সম ডাল কভু হয়?
কেহ বলে “ শোন ভাই কথা বল ফাঁকা।
আগুন কি রাখা যায় কাপড়েতে ঢাকা।।
হরিচাঁদ যদি কিছু দিয়া থাকে তাঁরে।
ক্রমে পরিচয় পাবে তার ব্যবহারে।।
কেহ বলে “ওরে ভাই কিবা দিবে হরি।
তাঁর শক্তি নিল সব ভক্তে লুট করি।।
হীরামনে দেখেছে ত জলে হেঁটে যায়।
গোলক পাগল দেখ মহাশক্তি ময়।।
মৃত্যুন গোঁসাই ছিল, ছিল দশরথ।
টুণ্ডা প্রভু শ্রী লোচন গোঁসাই সাক্ষাৎ।।
আর যত ম’তো ছিল আরো আছে বেঁচে।
সবে মিলে হ ‘রি হতে শক্তি লুটে নিছে।।
বড় কর্ত্তা দেখ নাই সে ধার ধারে না।
উনি যেন দিন রাত কি করে ভাবনা।।
বড় কর্ত্তা সেই শক্তি কোথা পাবে বল।
মোট কথা হরি গেলে সব চলে গেল”।।
কেহ বলে ‘ওরে ভাই বাজে বকো ‘ নারে।
ফাঁকা ফাঁকা কথা বলে পরে ঠকোনারে।।
সিংহে জন্ম দেয় সিংহ, বাঘে দেয় বাঘ।।
যেমন বাপের বেটা ধরে সেই রাগ।
কিবা বল বড় কর্ত্তা কি শক্তি পেয়েছে।।
হরিচাঁদ তোমারে কি বলে কিছু গেছে?
পরমার্থ তত্ত্ব দেখ নহে ত সরল।
বুদ্ধি দিয়ে তার শেষ কেবা পায় বল?
তোমার আমার ভাই কতটুকু জ্ঞান।
তাহা ছাড়া ধর্ম্ম পথে মোরা যে অজ্ঞান।।
বাহির দেখিয়া কভু বিচার চলে না।
না দেখি অন্তর, জ্ঞানী বচন বলে না।।
কথা শুনে আর জনে বলে ক্রোধ ভরে।
জ্ঞানের কথা ত ভাই বলিলে প্রকারে।।
যেমনি বাপ তেমনি বেটা বলিলে ত সব।
পশু মধ্যে সত্য বটে নরে কি সম্ভব?
ঈশ্বর বিদ্যাসাগর শুনিয়াছি নাম।
বিখ্যাত পণ্ডিত তিনি অতি গুণধাম।।
প্রাতঃস্মরণীয় বলি কহে নাম তাঁর।
কেমন তাঁহার পুত্র বল একবার।।
সে সব ছাড়িয়া তবে ধর্ম্ম পথে কই।
কৃষ্ণ পুত্র কেবা ছিল বল শুনে লই।।
মহারাজ যুধিষ্ঠির ধর্ম্ম অবতার।
কেবা তাঁর পুত্র ছিল কেমন প্রকার?

বঙ্গ দেশে রাজা ছিল নাম সীতারাম।
কেবা তার পুত্র ছিল কিবা তার নাম।।
প্রতাপ আদিত্য নাম হিন্দু রাজ চূরা।
বিখ্যাত বসন্ত রায় ছিল তার খুড়া।।
প্রতাপের পুত্র কেবা জান নাকি তাই।
যেমনি বাপ তেমনি বেটা কোথা পেল ভাই!
বড় ঘরে বড় ভাব যদি দাও ছেড়ে।
এক ভাব সবখানে আছে দেশ জুড়ে।।
তাই ভেবে দুই কথা বলিয়াছি ভাই।
বড়কর্ত্তা গুরুচাঁদে নিন্দা করি নাই।।
হাসিয়া বলিল তবে দ্বিতীয় সুধীর।
সামান্য দুইটি কথা শোন বাক্য বীর।।
যেমনি বাপ তেমনি বেটা বলি নাই ভুল।
ডালে ডালে ঘুরে তুমি দেখ নাই মূল।।
ধর্ম্ম ক্ষেত্রে রাজ বংশে গৃহস্থ-আশ্রমে।
যেমনি বাপ তেমনি বেটা দেখ ক্রমে-ক্রমে।।
পরাশর মুনি পুত্র ব্যাস মহামুনি।
তিনি এক অবতার শাস্ত্রের কাহীনি।।
তাঁর পুত্র শুকদেব গুণে সীমা নাই।
অবিকারী মায়াত্যাগী সাধু শাস্ত্রে পাই।।
মুনি বংশে মুনি জন্মে অসংখ্য প্রমাণ।
কশ্যপের ঘরে অবতার শ্রী বামন।।
ভৃগু পুত্র ভার্গব সে এক অবতার।
ভরদ্বাজ – পুত্র দ্রোন বিদিত সংসার।।
মৃত্যুজয়ী অশ্বত্থামা পুত্র হল তার।
বিশ্বামিত্র মহামুনি গাধীর কুমার।।
অর্জুনের পুত্র নাম অভিমন্যু বীর।
গৌতমের পুত্র সতানন্দ ধর্ম্মে স্থির।।
সূর্য বংশ চন্দ্র বংশ বিখ্যাত ভারতে।
বংশ পরিচয় আছে নানা গ্রন্থ মতে।।
অজ পুত্র দশরথ তার পুত্র রাম।
রাম পুত্র লব কুশ বীর অনুপম।।
চন্দ্র বংশে যত ছিল মহারাজা গণ।
গুণে শীলে হীন কেহ ছিল কি কখন?
নমঃশূদ্র কুলে দেখ হরি বংশ হতে।
কোন বংশে নহে শ্রেষ্ঠ দেখ কোন মতে।।
যত যত রাজ বংশ আছে দেখ ভাই।
বংশ মূলে মুনি ঋষি ইথে ভুল নাই।।
আমি শুনিয়াছি কথা হরি গেছে বলে।
নমঃশূদ্র কুলে রাজা হবে কালে কালে।।
হরি বাক্য কভু নাহি হইবে লঙ্ঘন।
হরি বংশে হবে রাজা নিয়তি লিখন।।
এই বংশে পূর্ব্বে পূর্ব্বে জন্মিল যাহারা।
সাধু কি সন্যাসী সবে প্রেমে মাতোয়ারা।।
সজ্জনের সাধনাতে হরি এল বংশে।
তাঁর বাক্য মিথ্যা নাহি হবে কোন অংশে।।
বড় কর্ত্তা কোন ভাবে চলে দেখ তাই।
সকলের মধ্যে থেকে যেন তা’তে নাই।।
ইতর জনের মত কভু কোন দিন।
বাক্য কিবা কার্যে তারে দেখিয়াছ হীন?
কোন দোষ কোন দিনে যারে স্পর্শে নাই।
তাঁর মধ্যে কিবা শক্তি বল দেখি ভাই।।
তা ‘তে বলি হরি কারে কিবা দিয়া গেছে?
সেই তত্ত্ব পরচার হবে ক্রমে পিছে।।
সেই তত্ত্ব দিয়ে ভাই কোন কার্য নাই।
তামাক সাজিয়া আন টেনে বাড়ি যাই।।
এই ভাবে ঘরে ঘরে চলে আলাপন।
এবে শুন ভক্তগণে কি করে মনন।।
যেই দিন হরিচাঁদ লীলা সম্বরিল।
তারক গোস্বামী বটে কাছে নাহি ছিল।।
বড়দিয়া বন্দরেতে কবি গান তরে।
আছিলেন শ্রীতারক গানের আসরে।।
সারা রাত্রি গান করে সেই মহাশয়।
অতি প্রাতেঃ কেহ আসি সংবাদ জানায়।।

নদী তটে আছে বটে শ্রী হরি ঠাকুর।
তারকেরে দেখিবারে ইচ্ছা সে প্রভুর।।
শ্রুত মাত্র এই বাণী তারক সুজন।
সভা ফেলি দ্রুত পদে করেন গমন।।
দূর হতে দেখে প্রভু আছে দাঁড়াইয়া।
ভুবন মোহন রূপে আঁধার নাশিয়া।।
প্রেমে ভোর অশ্রু লোর বহিছে নয়নে।
স্বেদ কম্প পুলকাশ্রু সাত্ত্বিক লক্ষণে।।
বৎস- হারা ধেনু যথা বৎসে দেখা পায়।
অথবা তটিনি যথা সাগরেতে ধায়।।
সেই মত হরি প্রতি ছুটিছে তারক।
হরি দরশনে প্রাণে অনন্ত পুলক।।
বাহু প্রসারিয়া ছুটে আনন্দে মাতিয়া।
মনে ভাবে বক্ষে হরি রাখে সাপুটীয়া।।
“এই বুঝি হরি অঙ্গ ধরিলাম বুকে।”
মহোল্লাসে হস্ত বেড়ি ধরিল তাঁহাকে।।
কই কোথা কেহ নাই এ যে শূন্য বুক।
বজ্রাহত প্রায় সাধু রহে হয়ে মূক।।
বড়ই আশ্চর্য লাগে সাধুর হৃদয়।
কিবা হ’ল কি দেখিনু ভোজবাজী প্রায়।।
এই চোখে দেখিয়াছি এই বালু পরে।
দাঁড়াইয়া ছিল হরি অপরূপ ধরে।।
জীবন্ত মূরতী ধারী নাহিক সন্দেহ।
সেই রূপ হৃদি মধ্যে হেরি অহরহ।।
এই হরি কোথা গেল শূন্যে মিলাইয়া।
কি ছল ছলিল প্রভু আমাকে ডাকিয়া।।
ভাবিতে ভাবিতে সাধু বালু ‘ পরে চায়।
বালু পরে পদ চিহ্ন দেখিবারে পায়।।
পদ চিহ্ন হেরি তার দূরে গেল সন্দ।
কেন্দে কয় “ হায় হায় মোর ভাগ্য মন্দ।।
বড়ই অভাগা আমি দৃষ্টি শক্তি নাই।
পেয়ে ধন হারা ইহা কাহারে জানাই।।
কেন হেন দেখিলাম ভাবিছে তারক।
বুঝি বা ছেড়েছে হরি এই মর্ত্ত লোক।।
ইতি উতি মনে ভাবি সেই মহাশয়।
কাঁদিতে কাঁদিতে সাধু পড়িল ধরায়।।
ভক্তের দুঃখ হেরি শূন্য বাণী ভরে।
দয়াময় হরিচাঁদ বলিল তাঁহারে।।
“সত্য সত্য বুঝিয়াছ তারক রসনা।
লীলা সাঙ্গ করিয়াছি তুমি তা জাননা।।
কায়া ছাড়িয়াছি বটে নহে তাহা ভুল।
শক্তি আছে গুরুচাঁদে এই জান মূল।।
পরাজ্ঞানী তুমি জানি ভকত নিপুণ।
বৃথা শোক কর সাধু ভাবিয়া বিগুণ।।
কাট মায়া ধাঁধাঁ ভক্ত দেখ দিব্য চোখে।
গুরুচাঁদ কায়া মধ্যে পাইবে আমাকে”।।
এত বলি শূন্য বাণী হল অন্তর্দ্ধান।
শোক সম্বরিয়া সাধু শেষ করে গান।।
গৃহে ফিরি তাড়াতাড়ি দেরি নাহি কৈল।
ওড়াকান্দী শ্রী ধামেতে উপনীত হৈল।।
গুরুচাঁদে দেখি সাধু ফুকারিয়া কাঁন্দে।
শ্রী তারকে দেখি ছলে বলে গুরুচান্দে।।
“তারক হে! দেখ চাহি হরি গেছে ছাড়ি।
কি কারণে তবে আর এস এই বাড়ি।।
তোমাদের সে ঠাকুর আর বেঁচে নাই।
ছেড়ে গেছেন হরিচাঁদ ক্ষীরোদ গোঁসাই।।
আর কেন তবে সবে আস ওড়াকান্দী।
কার গুণে রবে সবে প্রেমে হয়ে বন্ধি।।
আমিত সংসারী লোক সংসারে আবদ্ধ।
কোন গুণে বলো সবে করিব বা বাধ্য।।
হরি গেছে আার ওড়াকান্দী কিছু নাই।
খুঁজিয়া সে হরিচাঁদে লহরে সবাই।।
শ্রী গুরুর মুখে শুনি হেন খেদ বাণী।
পদে পড়ে সে তারক লোটায় ধরণী।।
কেন্দে বলে গুরুচাঁদে জগৎ গোঁসাই।
কে বলে গিয়াছে হরি, হরি যায় নাই।।
পরাণ হরণ হরি এই খানে দেখি।
তোমা মধ্যে হরিচাঁদ দেয় ঝিকিমিকি।।
তোমার মধ্যেতে হরি রহিয়াছে মিশি।
“ হরি গুরুচাঁদ, মিলি হল পূর্ণ শশী।।
পিতা পুত্র অভিন্নাত্মা দোহে এক প্রাণ।
তারিলে জগৎ জীবে সাধিলে কল্যাণ”।।
গলে বস্ত্র জোড় হস্ত করি সে তারক।
স্তব করে মনোসাধে হইয়া পুলক।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!