ভবঘুরেকথা
মতুয়া সংগীত

মোহমুদগরোপখ্যান
পয়ার

পুনঃ বৈষ্ণবেরা বসিলেন একঠাঁই।
বলে ধন্য যশোমন্ত হেন দেখি নাই।।
মোহ মুদ্গরের বাটি শ্রীকৃষ্ণ অর্জুন।
কৃষ্ণভক্তি বুঝিবারে গেলেন দুজন।।
ব্রাহ্মণ বেশেতে গিয়া উপনীত অতিথি।
মুদ্গরে ডাকিয়া বলে আমরা অতিথি।।
অতিথিরে দিল সাধু পাক করিবারে।
তিন পুত্র পাঠাঁইল পরিচর্যা তরে।।
জ্যেষ্ঠ পুত্র গিয়াছিল জল আনিবারে।
অকস্মাৎ সেই পুত্র খাইল কুম্ভিরে।।
মধ্যম সন্তান গেল কাষ্ঠ আনিবারে।
বন মাঝে ব্যাঘ্র ধরি মারিল তাহারে।।
কনিষ্ঠ সন্তান গেল আনিবারে পাত্র।
কালসর্প তাঁর শিরে করিল আঘাত।।
পুত্রের বিলম্ব দেখি মুদ্গর চলিল।
সাপে বাঘে কুমিরে মেরেছে দেখে এল।।
এই ভাবে তিন পুত্র মরে গেল তাঁর।
নিজে এনে দ্রব্য দিল অতিথি সেবার।।
মুদ্গরের নারী আর পুত্রবধু তিন।
নহে তারা শোকাতুরা বিকারবিহীন।।
ছদ্মবেশে কৃষ্ণ বলে শুন মহাশয়।
কাষ্ঠ পাতা আনতে গেল তাহার কোথায়।।
মুদ্গর কহিছে তারা মহা ভাগ্যবান।
অতিথি সেবাতে তারা ত্যজিয়াছে প্রাণ।।
কৃষ্ণ বলে ম’ল তব তিনটি নন্দন।
পুত্র শোকে মুদ্গর কাঁদনা কি কারণ।।
মুদ্গর কহিছে কেন করিব রোদন।
পুত্র ম’ল ভাল হ’ল ঘুচিল বন্ধন।।
মায়ার বন্ধন কেটে দিলেন গোবিন্দ।
নির্বিঘ্নে বলিব হরি করিব আনন্দ।।
কৃষ্ণ বলে শীঘ্র যাও ডেকে আন ঘরে।
অতিথি সেবাতে কবে কার পুত্র মরে।।
যারে নিল কুম্ভীরেতে উপজিল আসি।
কৃষ্ণ অগ্রে এনে দিল জলের কলসী।।
এই মত তিন পুত্র হ’ল উপনীত।
হরি পদ ধরি সব ধূলায় লুণ্ঠিত।।
পরিচয় দিয়া হরি করিল গমন।
অভিমন্যু শোক পার্থ কৈল সম্বরণ।।
মুদ্গরের পুত্র দিল গোলোক গোঁসাই।
যশোমন্ত বৈরাগীর আজ হ’ল তাই।।
আর সাধু বলে শুন বৈষ্ণবের গণ।
কৃষ্ণলীলা সুধাধার মধুর বর্ষণ।।
অম্বরীষ গৃহে ছিল একটি নন্দন।
দশ বর্ষ পরমায়ু ছিল নিরূপণ।।
সংক্ষেপে বলিব এবে তাঁর বিবরণ।
সূতিকা আগারে যবে ছিল সে নন্দন।।
অদৃষ্ট লিখন যবে লেখে পদ্মাসন।
দাসী গিয়া ধরিল সে বিধির চরণ।।
দাসী বলে ওহে বিধি কি লিখিয়া যাও।
বালকের আয়ু কত মম ঠাঁই কও।।
অনেক স্তবেতে বিধি সন্তুষ্ট হইল।
দশ বর্ষ পরমায়ু দাসীকে বলিল।।
দাসী জানাইল রাজরানীর গোচরে।
রানী জানাইল তাহা মহারাজ তরে।।
অল্প আয়ু জানি নাহি দিল লিখিবারে।
মনে মনে চিন্তা করে রাজার কুমার।।
ভাবে আমি রাজকূলে একটি কুমার।।
পিতা না করেন যত্ন মোরে লেখাবার।।
রাজপুত্র জিজ্ঞাসিল পিতৃদেব স্থলে।
কেন পিতা মোরে নাহি দেন পাঠশালে।।
রাজা বলিলেন সেই বালকের ঠাঁই।
দশবর্ষ আয়ু আছে বাছা লেখাব কি ছাই।।
দশবর্ষ পরমায়ু তোমার যে ছিল।
নয় বর্ষ এই তার গত হয়ে গেল।।
রাজপুত্র বলে পিতা আর শুনিব কি।
এখনতো মরণের একবর্ষ বাকি।।
এই ভিক্ষা চাই পিতা আমি যদি মরি।
একবর্ষ প্রজা লয়ে বলি হরি হরি।।
খেতে দিবা প্রজাগণ না লইবা কর।
এই ভিক্ষা চাই পিতা একটি বৎসর।।
স্বীকার করিল রাজা সন্তোষ অন্তরে।
প্রজাবর্গ লয়ে শিশু হরিনাম করে।।
মরণের কাল তার হইল যখন।
তাহাকে লইতে এল রবির নন্দন।।
হরিভক্ত শিশু নিতে যম উপস্থিত।
ভক্ত বৎসল হরি অন্তরে দুঃখিত।।
হরি এসে বালকেরে করিলেন কোলে।
মুখ দেখে কমলাখি ভাসে আঁখি জলে।।
শমন বলেন হরি কারে কর কোলে।
আয়ু শেষ ফেলে দাও ল’য়ে যাই চলে।।
হরি ক’ন শেষে এ বালকে লয়ে যাও।
অগ্রেতে তলব খাতা আমাকে দেখাও।।
শমন তলব খাতা হরিকে দেখায়।
দশবর্ষ আয়ু দেখে কাঁদে দয়াময়।।
কৃষ্ণের নয়ন জলে কজ্জল যে ছিল।
নয়নের জলে তাহা গলিত হইল।।
সেই ত্রিভঙ্গের ভঙ্গি কেবা তাহা জানে।
কজ্জলাক্ত অশ্রু পড়ে আয়ুর দক্ষিণে।।
হরি কন শতবর্ষ পরমায়ু দেখি।
যম বলে তবে চিত্রগুপ্ত বলিল কি।।
চিত্রগুপ্ত হাঁতে নিয়া দেখে সেই খাতা।
ক্রোধেতে কম্পিত গুপ্ত ঝাকি দিল মাথা।।
চিত্রগুপ্ত কর্ণেতে লেখার তুলী ছিল।
আয়ুর দক্ষিণে মসি দুইবিন্দু প’ল।।
দুইশূন্য শতাঙ্কের দক্ষিণে পতন।
অযুত বৎসর আয়ু পাইল নন্দন।।
হরিলীলামৃত কথা অমৃত সমান।
তারক কহিছে সাধু সুখে কর পান।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!