মহাপ্রভুর গোষ্ঠলীলা ও ফুলসজ্জা
পয়ার
পৌগণ্ড সময় করিতেন গোষ্ঠলীলা।
প্রথম কৈশোরে করিতেন সেই খেলা।।
রাখাল সঙ্গেতে করিতেন গোচারণ।
নূতন মাধুর্য খেলা খেলিত তখন।।
গোপাল রাখিতে হ’ত গোপাল আবেশ।
গোপালক সঙ্গে হ’ত গোপালের বেশ।।
খেলিতে খেলিতে সঙ্গীগণ সমিভ্যরে।
যাইতেন রত্নডাঙ্গা বিলের ভিতরে।।
বলিতেন সঙ্গীগণে থেকে বিলকূল।
উঠাইয়া আন গিয়া কস্তূরীর ফুল।।
আন ভাই অই ফুল আমি অঙ্গে পরি।
রাখালেরা এনে দিত কুসুম কস্তূরী।।
সেই কস্তূরীর ফুল পরিত কর্ণেতে।
পদ পরে পদ রেখে দাড়া’ত ভঙ্গিতে।।
বলিত রাখালগণে ওরে ভাই সব।
একবার কর সবে আবা আবা রব।।
ঠাকুরে ঘেরিয়া সবে দিত আবাধ্বনি।
গাভী বৎস্য নাচিত মধুর রব শুনি।।
বাঁকা সাজে দাঁড়াতেন কর্ণে ফুল দিয়া।
কটি বেড়ি দিত ফুল গুজিয়া গুজিয়া।।
উভ করি মস্তকেতে বাঁধিতেন চুল।
মাথা বেড়ি গুজে দিত কস্তূরীর ফুল।।
মনোহর বেশ দেখে কাঁদিত রাখাল।
গো-বৎস্য নাচিত চক্ষে অবিরত জল।।
কখন কখন ফুল আনিতেন নিজে।
অই ভাবে কস্তূরীর ফুল সাজে সেজে।।
বসিতেন গিয়া প্রভু রাখালের মাঝ।
ঠিক যেন বৃন্দাবনে রাখালের রাজ।।
পরিধান বসন জলেতে ভিজাইয়ে।
রাখালে প্রভুর পদ দিত ধোয়াইয়ে।।
ধোয়াইত পাদ-পদ্ম বস্ত্র চিপাড়িয়ে।
সেই ভিজা বসনেতে দিত মুছাইয়ে।।
সখাভাবে রাখালেরা করিত কাকুতি।
আমরা রাখাল তুই রাখালের পতি।।
জনমে জনমে ভাই সঙ্গেতে রাখিস।
এই ভাবে সাজিয়া মোদের দেখা দিস।।
এই ফুলে সাজিলে দেখায় কিবা শোভা।
সঙ্গে রেখ হরিরে! গোচারণ-বিহারী।
এই খেলা খেলিতে আমরা যেন পারি।।
প্রভু বলে গরু রাখি রাখালের সনে।
রাখাল রাজার রূপ পড়ে মোর মনে।।
সেই রাখালিয়া ভাব ক্রমে হয় বৃদ্ধি।
কস্তূরীর ফুলে সাজি রাখালিয়া বুদ্ধি।।
তোমরাও যে রাখাল আমি সে রাখাল।
কলিতে কস্তূরী ত্রেতাযুগে নীলোৎপল।।
ত্রেতাযুগে পুঁজে রাম দেবীর চরণ।
দেবীদহ হ’তে করে এ ফুল চয়ন।।
মর্তে এসে নীলোৎপল হইল কস্তূরী।
সাধারণ লোকে বলে কচড়ী কচড়ী।।
কালগুণে মহতেরা তেজ লুকাইয়া।
গোপনে থাকেন তারা ঈশ্বর ভাসিয়া।। (ভাবিয়া)
তাহাতে কি মহতের মান কমে যায়।
জহরী জহর পেলে চিনে সেই লয়।।
মাঝে মাঝে শুনে থাকি গীত রামায়ণ।
শ্রীরাম দেবীর পুজা করিল যখন।।
করিলেন দেবীর পূজা সংকল্প করিয়া।
শতাধিক অস্টপদ্ম দিলেন গণিয়া।।
ফুল হেরে প্রসন্না প্রসন্নময়ী দুর্গে।
এক পদ্ম হরণ করিল পূজা অগ্রে।।
সবে বলে রাম প্রতি দেবী প্রতিকুল।
নতুবা বল কে নিল নীল পদ্ম ফুল।।
সেই পদ্ম রামচন্দ্র পূরণ করিতে।
উদ্যত হইল নীলপদ্ম চক্ষু দিতে।।
চক্ষু লক্ষ্য করি কমলাক্ষ জুড়ে বাণ।
বলে এই পদ্মে কর পূজা সমাধান।।
তাহা দেখি মহামায়া হ’য়ে তুস্টমতি।
বলে ক্ষান্ত হও শান্ত ওহে রঘুপতি।।
নীলপদ্ম দেখি মম প্রফুল্লিত মন।
তাই এক পদ্ম অগ্রে করেছি গ্রহণ।।
না পূজিতে অগ্রে পূজা ল’য়েছি তোমার।
হাতে ধরি হও ক্ষান্ত ওহে রঘুবর।।
এই সেই রাজীব হে রাজীবলোচন।
এই কীর্তি তোমার ঘষিবে ত্রিভুবন।।
অকাল বোধন করে রাম দয়াময়।
কস্তূরী কুসুম পেয়ে দেবী তুস্টা হয়।।
বসন্তে বাসন্তী দুর্গা পূজিত সবায়।
রাম হ’তে আশ্বিনে অম্বিকা পূজা হয়।।
সেই নীলপদ্ম ফুল এই কলিকালে।
কস্তূরীর ফুল বিলে সাজি সেই ফুলে।।
এ বড় দুঃখের ফুল দুঃখের সময়।
হৃদয় ধরিলে হয় ভক্তি প্রেমোদয়।।
তাহা শুনি রাখালেরা ডাকে মা মা করি।
প্রেমানন্দে বলে জয় রাম দুর্গা হরি।।
শ্রীহরি ফুলসজ্জা কস্তূরীর কুসুমে।
রাখালের আনন্দ যেন বৃন্দাবন ধামে।।
শ্রীহরির ফুলসজ্জা ভুবনমোহন।
হরি ঘেরি, করে সবে হরি সংকীর্তন।।
রত্নডাঙ্গা বিলকূলে রত্ন উপজিল।
তারকের মহানন্দ হরি হরি বল।।
মৃত্যুঞ্জয় আজ্ঞা দিল রচনা কারণে।
অপারক তারক রচিল তার গুণে।।
কতক দিনের পরে হইল রচনা।
হরিচাঁদ প্রীতে হরি বল সর্বজনা।।