দুর্গো দু:খহরা তারা বিপদনাশিনী।
দুর্গমে স্মরি মা তারা শক্তি সনাতনী।।
পরাংপরা পরমা প্রকৃতি পুরাতনী।
দুরারাধ্য ধ্যান সাধ্যা বিন্ধাগিরি নির্বাসিনী।।
মহিষমর্দিনী মহামায়া মহাদেবী।
শিবা নিতম্বিনী শ্যামা সর্বানী শঙ্করী।।
গুণময়ী গুণাতীতা সারদা সুন্দরী।
ভ্রমরী ভবানী ভীমা ধুম ক্ষেমাঙ্করী।।
কালী কালহরা কালাকালে কর পার।
কুলকুণ্ডলিনী কর বিপদে নিস্তার।।
লম্বোদরী বাঘাম্বরা কলুষ নাশিনী।
কৃতান্ত দলনী কাল হর বিলাসিনী।।
স্বামী পুত্রপরিজন দীর্ঘজীবি হয়।
সদায় আনন্দে সে থাকিবে নিশ্চয়।।
নতশিরে মহামুণি জিজ্ঞাসে আবার।
পৃথিবীতে এই ব্রত করিতে প্রচার।।
ভক্তবাঞ্ছা পূর্ণ তবে আশুতোষ কহে।
যে ব্রত ভেজোরাশি সর্বপাপ দহে।।
বিদর্ভ দেশেতে ছিল এক নরপতি।
গুণবতী নামে পত্নী সাধ্বী ছিল অতি।।
দয়ামায়া সেবাগুণে সকলের প্রিয়।
প্রীতিবেশ পুরজনে করি রমণীয়।।
বিধির নিব্বন্ধ নারী খণ্ডাইতে নরে।
চর্ম্মকার-পত্নীকে ডাকাল চুপি সারে।।
তার সাথে হৃদতা স্থাপিলা যে নারী।
কহিল নিষিদ্ধ মাংস দেখাইতে আনি।।
চর্ম্মকার পত্নী তাঁরে করজোড়ে কহে।
এ খবর রাজ কর্ণে কোনমতে গেলে।
শাস্তির বিষম ফল পাবো শেষকালে।।
রাণী তারে নানা দ্রব্য দিলো ভারে ভার।
রাণীর কাকুতি দেখি মন টলে তার।।
গুণবতী দিল তারে চরম আশ্বাস।
একান্ত গোপনে থুবা আনিয়া যে মাংস।।
মহাভয়ে চামারিণী অতি সঙ্গোপনে।
বস্ত্রমধ্যে বাঁধি মাংস কোনরূপে আনি।
মহারাণী মাংস লয়ে গৃহেতে আপন।
সভয়ে আচ্ছাদি রাখে একান্ত গোপন।।
ভৃত্যের নয়নে এই মাংসটি পড়িল।
রাজ কর্ণে এ সংবাদ সে-ই নিবেদিল।।
রাজা শুনি রাণী পাশে ত্বরা ছুটে আসে।
রূঢ়ভাবে মাংস কথা রাণীরে জিজ্ঞাসে।।
এ কথা সঠিক হলে জেনো তুমি রাণী।
তোমাকে করাব আমি যমের ঘরণী।।
ধর্ম কার্য্যে তুমি মোর হও অংশীদার।
তোমার কুকর্ম্ম এই অসহ্য আমার।।
প্রাণভয়ে মিথ্যা কভু বলনা নিশ্চিত।
ধর্ম্মপানে চাহিয়ে সত্য যথোচিত।
রাণী কহে ফল মূল পূজা উপাচার।।
পূর্ণ করি রাখিয়াছে গৃহেতে আমার।
গৃহের সকল দ্রব্য দেখাব তোমায়।।
পূজার সময়টুকু দাওগো আমায়।
এই বলি রাণী করে দুর্গা আরাধনা।।
বিপদনাশিনী মাগো সদয় হওনা।
দুর্গা শিব ক্ষমা ধাত্রী দুর্গতি নাশিনী।।
এ ঘোর সঙ্কটে মোরে বক্ষ নারায়ণী।
অভয়া বরদা তুমি মাগো মহামায়া।।
দয়া করি দাও মাগো তব পদ ছায়া।
মোর দেহে যতদিন রহিবে পরান।।
তব ব্রত মমগৃহে রহিবে আপ্রাণ।
দানব দলনী মাগো হও তুমি প্রীত।
এত কহি রাণী তথা হইলা মূচ্ছিতা।।
ভক্তি হেরি মহামায়া আসে রাণী পাশে।
তাহারে নির্ভয় তিনি দেন মৃদুভাসে।।
আমার ভজনা যেবা করে একমনে।
কেশাগ্র স্পর্শিতে তার পারে না শমনে।।
তোমার ভক্তিতে আমি অতিশয় খুশি।
দেখগে মাংসের স্থলে ফল রাশি রাশি।।
রাজারে ডাকিয়া আনি দাওগো প্রসাদ।
সঙ্গে সঙ্গে দূর হবে সব পরমাদ।।
এত বলি দুর্গা দেবী গেল নিজ ধামে।
ধুলি হতে উঠি রাণী উদ্দেশ্যে প্রণামে।।
তখনি আনিল রাণী ডাকায়ে রাজারে।
গৃহমধ্যে কিবা আছে দেখবার তরে।।
রাজা দেখে গৃহ পূর্ণ পূজা উপাচারে।
সবিনয়ে রাজা কহে ক্ষমহ আমারে।।
রাণীর নিকটে রাজা প্রসাদ খাইল।
হরষিত চিত্তে রাজা কর্ম্মে মন দিল।।
বিপত্তারিণী ব্রত আচরণ করি।
দেহ অন্তে স্বর্গে গেল দিব্য কান্তি ধরি।।
শুক্লপক্ষ আষাঢ়ের তৃতীয়া হইতে।
ব্রতের সময় তুমি শুন মন মতে।।
শনি বা মঙ্গলবার নবমীর মাঝে।
উপযুক্ত হবে যেন এ ব্রতের কাজে।।
পূর্ব্বদিনে নিরামিষ করিবে আহার।
সাধ্যমত ফল ফুল করিবে যোগাড়।।
ব্রত দিনে প্রাত:কালে স্নান সমাপিয়া।
সংকল্প করিবে ঘট স্থাপন করিয়া।
আম্র-শাখা আর ডাব দিবে ঘটোপরে।
ফল-মূল মিষ্টি দিয়ে সাজাবে নৈবদ্যেরে।।
আপনার প্রিয়দ্রব্য সাজাবে যতনে।
ত্রয়োদশ করি ফল দিবে গুণে গুণে।
নৈবেদ্যের সাথে দিবে তাম্বুল ও জল।
ব্রাহ্মণে করিবে দান হইবে সফল।।
ব্রতশেষে দক্ষিণা অবশ্যই দিবে।
ইহা বিনা শুভকর্ম বিফল হইবে।।
তেরটি গাঁইট দিয়ে রক্তবর্ণ সূতা।
সকলে বাঁধিবে হস্তে না হয় অন্যথা।।
ভক্তিভরে এই ব্রত পালন করিলে।
স্বর্গের বিশ্রাম সুখ ধরাতেই মিলে।।
বিপত্তারিণী ব্রত করিলে পালন।
প্রিয়চক্ষে দেখিবে যে আত্মীয় স্বজন।।
পুত্রের ভক্তি আর স্বামীর সোহাগে।
আনন্দে কাটিবে দিন নব অনুরাগে।।
দু:খ দৈন্য দূরে যাবে তরিবে বিপদ।
আয়ুহীন আয়ুলাভ পাইয়া সম্পদ।।