-স্বামী জয়ানন্দ
ক্ষিপ্রং ভবতি ধর্মাত্মা
শশচ্ছান্তিং নিগচ্ছতি,
কৌন্তেয় প্রতিজানীহি ন মে
ভক্তঃ প্রণশ্যতি।।
অর্থাৎ তিনি (ভক্ত) শীঘ্রই ধার্মিক হন এবং চিরশান্তি লাভ করেন। হে কৌন্তেয় নিশ্চিতরূপে জেনো যে, আমার ভক্ত কখনো বিনষ্ট হন না।
ভগবান যেমন নিত্য তার সাথে তার ভক্তও নিত্য। ভক্তের দেহের বিনাশ আছে কিন্তু তার দেহের ভেতর যে আত্মা তার বিনাশ নেই। তাছাড়া ভগবান তার ভক্তকে কখনও নষ্ট করেন না। ভক্তের মধ্য দিয়েই ভগবান নিজেকে আস্বাদন করতে পারেন। ভক্ত জন্মে জন্মে ভগবানের দাস হয়ে সেবক হয়ে পৃথিবীতে আসেন।
ভক্ত নিজের দেহকে সর্বদা তুচ্ছ জ্ঞান করেন। ভগবানের সাথে মিলনের জন্য যদি দেহটা বাধা হয় তখন ভক্ত তার দেহটাকেই ছেড়ে দেন। ভাগবতে আছে; ভগবান শ্রীকৃষ্ণ রাতে গভীর অরণ্যে বাঁশি বাজাচ্ছেন। যারা ভক্ত যারা কেবল তাঁকেই চায় তাদের কানে গিয়ে সেই ধ্বনি পৌঁছচ্ছে। যারা সংসার নিয়ে মত্ত তাদের কাছে সে ধ্বনি শোনার মতো সময় কোথায়!
শ্রীকৃষ্ণের ভক্তদের কানে গোপীদের কানে সে ধ্বনি ঠিকই পৌঁছায়। ভাগবতে আছে, গোপীদের মধ্যে কেউ হয়তো স্বামীর সেবা করেছেন। কেউ হয়তো রান্নার কাজে ব্যস্ত। আবার কেউ হয়তো সন্তানের দেখভাল করছেন। কেউ হয়তো প্রসাধনের কাজে ব্যস্ত।
যখনই শ্রীকৃষ্ণের বাঁশির ধ্বনি তারা শুনতে পেলেন তখনই তারা নিজেদের কাজ ফেলে যে যেমন অবস্থায় ছিলেন সে সেভাবেই ভগবানের কাছে দৌড়ে গেলেন।
ভাগবতের বর্ণনায় আছে; একজন গোপীকে ঘরের মধ্যে দরজা বন্ধ করে জোর করে আটকে রাখা হয়েছিল বলে তিনি ঘর থেকে বেরুতে পারছিলেন না। অথচ ভগবানের জন্য তার প্রাণ ছট্ফট্ করছে। তিনি দেখলেন ভগবানের কাছে পৌঁছানোর জন্য তার দেহটা অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ফলে তিনি দেহত্যাগ করে ভগবানের সাথে মিলিত হতে চলে গেলেন। ভক্তের বিনাশ নেই। তাই ভক্ত যেখানে ভগবানও সেখানে। ভক্তের হৃদয়ে ভগবানের বাস। সেখানে তিনি অধিষ্ঠান রত।
তবে ভগবানের জন্য আমাদের ক্ষুধা তৃষ্ণা নেই। ফলে ভগবানের বাঁশির শব্দ আমরা শুনতে পাই না। আমাদের কান খোলা আছে। কিন্তু আমরা শুনছি অন্য কিছু। ওটি হলে চলবে না। মনের মধ্যে আগ্রহ নিয়ে আসতে হবে। তাঁকে জোর করে ভালোবাসার চেষ্টা করতে হবে।
বিফলে বারে বারে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। ভগবানের জন্য ক্ষুধা তৃষ্ণা নিয়ে আসতে হবে। তবেই না তিনি আমাদেরকে ধরা দেবেন। তবেই না আমরা তাঁর বংশী ধ্বনি শুনতে পাব। যেদিন দেখবেন তাঁকে ছাড়া অন্য কোনো কিছু আর ভালো লাগছে না। ৱ
তাঁর কথা ছাড়া অন্য কোন কথা শুনতে ভালো লাগছে না। তাঁর প্রসাদ ছাড়া অন্য কোন কিছু খেতে পারছেন না। তাঁকে ছাড়া আর অন্য কোন কিছু দেখতে পারছেন না। এরূপ অবস্থা হলে জানাবেন; আপনার তাঁর প্রতি ভালোবাসা জন্মেছে।
হরি ওম তৎসৎ। আপনি এগিয়ে যান। পেছন ফিরে আর তাকাবেন না। তিনি আপনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। আপনার আর বিনাশ হবে না। হবে কি করে? আপনি যে তাঁর সঙ্গে জুড়ে গেছেন। তিনি আপনার। আপনিও যে তাঁর।