জমিদারের অত্যাচার।
পয়ার।
ভাদ্রমাসে জমিদার কাছারী আসিয়া।
অই সব বাচনিক শুনিলেন বসিয়া।।
গোমস্তা বলিল সব বাবুর গোচরে।
কৃষ্ণদাস কাছারী আসিয়া নিন্দা করে।।
সহজে বিনয় করি রামায়ণ কয়।
নিন্দা করিয়াছে তার মনে যত লয়।।
বিভীষণের উপাখ্যান কহে বার বার।
কলির ব্রাহ্মণ রাজা দুয়ের আচার।।
শুনে বলিলেন মজুমদার মহাশয়।
টাকাগুলি না দে’য়া ত’ বড়ই অন্যায়।।
গোমস্তা বলিল যদি টাকা নিতে পারে।
কাছারী আসিয়া কেন এত নিন্দা করে।।
আছে নয় কৃষ্ণদাস বড় মান্যমান।
তমে তম ভর্ৎসে মম কিসে থাকে মান।।
মজুমদার বলে চল যাইব এখনে।
এত নিন্দা করে কেন আসি গিয়া শুনে।।
নৌকায় চলিল দুই পেয়াদা লইয়া।
গোমস্তার সঙ্গে ঘাটে উত্তরিল গিয়া।।
গোমস্তা কহিছে’ কৃষ্ণদাসে ধ’রে আন।
দুই বৎসরের কর দেনা কি কারণ।।
পেয়াদা বাটীতে গিয়া বলে কৃষ্ণদাসে।
খাজনার জন্য বাবু ডাকে ঘাটে ব’সে।।
বড়কর্তা মাঝে মাঝে খাইতেন সিদ্ধি।
সিদ্ধি মন্ত্র জপিতেন হইবারে সিদ্ধি।।
যে সময় পেয়াদা আসিয়া ডাক দিল।
সিদ্ধি সেবনের আয়োজন ক’রেছিল।।
সাজিয়া গাঁজার কল্কি দিতেছে আগুণ।
সিদ্ধি সেবনের জন্য হইয়া নিপুণ।।
পেয়াদারে বলে থাক কিছুকাল বসি।
বল গিয়া জমিদারে গাঁজা খেয়ে আসি।।
ধরিল গাঁজার কল্কি করজপ করি।
গাঁজায় দিলেন টান বলে হরি হরি।।
ক্ষণকাল দোম করি না ছাড়ি নিঃশ্বাস।
হইল আরক্ত নেত্র যেন কৃত্তিবাস।।
পেয়াদাকে কহে বাণী অন্তর নির্মল।
কোথা আছে জমিদার চল দেখি চল।।
ঠাকুর চলিল বড় হরষিত চিতে।
টাকা বুঝি পা’ব আজ ভাবিল মনেতে।।
বড়কর্তা জমিদারে সবিনয় কন।
আ’জ মম সুপ্রভাত রাজ দরশন।।
আপনার বাড়ী এ যে আপনার ঘর।
দয়া করে আসুন এ বাড়ীর উপর।।
গোমস্তা কহিছে তুমি কর যে দিলে না।
কর্তা বলে আগে শোধ কর মম দেনা।।
গোমস্তা হুকুম দিল পেয়াদার পর।
কৃষ্ণদাস কাছে লও দুই সোনা কর।।
তব টাকা যেই জন হাওলাত নিছে।
আদায় করগে টাকা গিয়া তার কাছে।।
কর্তা কহে আগে কি তোমার টাকা দিব।
কিম্বা আমাদের টাকা অগ্রেতে পাইব।।
খোদ কর্তা জমিদার কহিল বিহিত।
আগে আগ পিছে পাছ এইত উচিৎ।।
বড়কর্তা কহে বার্তা এই কথা ভাল।
বাবুর হুকুম মম টাকা গুলি ফেল।।
গোমস্তা হুকুম দিল পেয়াদার ঠাই।
আন ধ’রে কৃষ্ণদাসে বাকী কর চাই।।
ঘাড় ধরে কৃষ্ণদাসে নৌকাপরে আন।
এতেক আস্পর্ধা ওরে কর অপমান।।
পেয়াদা এতেক শুনি গেল বাড়ীপরে।
ধরিবারে গেলে ধরে অপমান করে।।
পেয়াদার অপমানে গোমস্তা ধাইল।
ঠাকুরের কয় ভাই রাগিয়া উঠিল।।
গোমস্তারে ধ’রে দুই পেয়াদার সাথ।
মারিল চপেটাঘাত মুষ্টিক আঘাত।।
এমতি মারিল মার দুষ্ট গোমস্তারে।
মৃতপ্রায় হইয়া রহিল ভূমিপরে।।
মজুমদার মহাশয় নৌকাপরে ছিল।
নৌকা ধ’রে টেনে এনে কূলে উঠাইল।।
ভয় পেয়ে জমিদার থরহরি কাঁপ।
বলে ওরে কৃষ্ণদাস তুমি মোর বাপ।।
প্রভু হরিচাঁদ বলে ক্ষমা কর দাদা।
মার হইয়াছে যবে মেরেছ পেয়াদা।।
বিশেষ ব্রাহ্মণ জাতি ব্রাহ্মবীজে জন্ম।
বিশেষতঃ জমিদার মারিলে অধর্ম।।
প্রভুমাতা অন্নপূর্ণা নিষেধে তখন।
শুন ওরে কৃষ্ণদাস মেরনা ব্রাহ্মণ।।
আমি যাহা বলি তাহা শুনরে সকলে।
ভালভাবে নৌকা নামাইয়া দেও জলে।।
পেয়াদা গোমস্তা দেও নায় উঠাইয়া।
হোক্গিয়া বড় মানুষ এ টাকা না দিয়া।।
মাতৃআজ্ঞা পেয়ে শান্ত হ’ল পাঁচ ভাই।
আজ্ঞা অনুসারে কার্য করিলেন তাই।।
বড় অপমান হ’ল পেয়াদা-গোমস্তা।
বাবু বলে কাজ হ’ল বড় অব্যবস্থা।।
ভদ্রভাবে কৃষ্ণদাস কৈল সম্ভাষণ।
ধ’রে আন এ হুকুম দিলে কি কারণ।।
কি দোষেতে করি এ প্রজার অপমান।
না দেখি পাতকী আর আমার সমান।।
এখনে প্রজার ঠাই করি পরিহার।
ধর্ম থাকে শোধ হ’লে এই ঋণধার।।
এবে আর অন্য প্রজা মোরে না মানিবে।
এই অপমানে সবে অবজ্ঞা করিবে।।
ইহার বিধান কিবা করি বল তাই।
গোমস্তা চলরে চল আগে দেশে যাই।।
গোমস্তা ব্যবস্থাহীন প্রমাদ ঘটা’ল।
রসরাজ কহে কাজ নহে কভু ভাল।।