-জগদীশচন্দ্র রায়
একটা দেশ, সমাজ, জাতি, ধর্ম বা সংগঠন যাই বলুক না কেন, তার নিজস্ব কিছু নিয়মনীতি থাকে। সেটা না থাকলে বা নির্দিষ্টভাবে মেনে না চললে যে কারণের জন্য এই নিয়মনীতি বা আইন তৈরি করা হোক না কেন, সেসব অকার্যকরী হয়ে পড়ে।
তবে সেসব কার্যকরী করার জন্য এই দেশ, সমাজ, জাতি, ধর্ম বা সংগঠনের দায়িত্ব যাদের উপর ন্যাস্ত আছে তাদেরকে নিষ্ঠাবান হতে হয়। আর এই পরিচালকদের শুধু পুঁথিগত বিদ্যা থাকলেই চলবে না, সঙ্গে সামাজিক জ্ঞানও থাকা দরকার।
হরি–গুরুচাঁদ ঠাকুর প্রবর্তিত ‘মতুয়াধর্ম’ও বেশ কিছু নিয়মনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। যদিও আপাত দৃষ্টিতে মতুয়াদের জন্য হলেও সামগ্রীকভাবে সেসব প্রতিটি মানুষের জন্য প্রযোজ্য।
মতুয়া ধর্ম-দর্শনে হরিচাঁদ ঠাকুর ও গুরুচাঁদ ঠাকুর সমাজ ও জীবন দর্শনের যে প্রকৃত ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তা সূক্ষ্মভাবে লুকিয়ে রয়েছে মতুয়া-আকর গ্রন্থ ‘শ্রীশ্রীহরিলীলামৃত’ ও ‘শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ চরিত’-এ।
গভীরভাবে এই দু’টি গ্রন্থ অধ্যয়ন করলে সমাজ জীবন ও ব্যক্তি জীবনের যে দর্শন পাই তা বৌদ্ধ দর্শনের পঞ্চশীল, অষ্টাঙ্গিক মার্গ ও বাইশ প্রতিজ্ঞার সমতুল্য। যথা-
১. গার্হস্থ্য ধর্ম পালন বা এক নারী ব্রহ্মচারী।
২. সত্য কথা বলা।
৩. পর নারীকে মাতৃজ্ঞান করা। পর দু:খে দু:খী হওয়া এবং দু:খীকে সহযোগীতা দান করা।
৪. খাও বা না খাও সন্তানকে শিক্ষিত কর।
৫. হাতে কাম মুখে নাম।
৬. গৃহধর্ম ও গৃহকর্ম করা।
৭. কৃসংস্কার থেকে মুক্ত হওয়া।
৮. জীবের প্রতি দয়া করা ও মানুষের প্রতি নিষ্ঠা রাখা।
৯. উদ্ধারকর্তাকে (হরিচাঁদ) ঈশ্বর মনে করা।
১০. কর্ম ও ধর্মের সমন্বয় সাধন।
১১. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা ও দেহমন শুদ্ধ রাখা।
১২. চারিত্রিক সংযম রাখা।
মতুয়াদর্শনে নির্দেশিত এইসব গুণের অধিকারী একজন গৃহী হয়ে ওঠা আসল কথা। অর্থাৎ আচার নয়, কর্মই ধর্ম।
উপরে উল্লেখিত করণীয় নির্দেশগুলো ছাড়া এরকম আরো বেশ কিছু নির্দেশ বা উপদেশ আছে লীলামৃত ও গুরুচাঁদ চরিতের পাতায় পাতায়।
এই আদেশের সঙ্গে কিছু নিষেধাজ্ঞাও দেওয়া হয়। তারমধ্যে কয়েকটি হল-
১. ভিন্ন গুরু ও ভিন্ন দল না করা।
২. নারী দিয়ে অঙ্গ সেবা না করা।
৩. বাল্যবিবাহ না দেওয়া।
৪. মিথ্যা কথা না বলা।
৫. মদ গাঁজা না খাওয়া এবং চরি না করা।
৬. তাস-দাবা-জুয়া খেলা সব ছেড়ে দিতে হবে।
৭. কাউকে (অলীকতার প্রতি) ভয় করার দরকার নেই।
৮. জাতিভেদ প্রথা না মানা।
৯. সাধন, ভজন, দীক্ষা, তীর্থ পর্যটন প্রভৃতি আচার সর্বস্বতা পরিত্যাগ করা।
১০. বুদ্ধিহীন সরলতা ত্যাগ করা।
এছাড়া বৈদিকতার বিধান ও আচার বিচারকে না মানতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই আদেশ ও নিষেধগুলো পালন করার নির্দেশ এইজন্য দেওয়া হল যাতে মানুষ তার মনুষ্যত্বকে খুঁজে পায়। অলীকতার পিছনে বোকার মতো ঘুরে না বেড়ায়।
……………………………
গুরুচাদ ঠাকুরের সমাজসংস্কার ও মুক্তির দিশা
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….
……………………………
আরো পড়ুন:
গুরুচাঁদের বারো গোঁসাই: এক
গুরুচাঁদের বারো গোঁসাই: দুই
গুরুচাঁদের বারো গোঁসাই: তিন
শ্রীশ্রী গুরুচাঁদ ঠাকুর ও নবযুগের যাত্রা: এক
শ্রীশ্রী গুরুচাঁদ ঠাকুর ও নবযুগের যাত্রা: দুই
শ্রীশ্রী গুরুচাঁদ ঠাকুর ও নবযুগের যাত্রা: তিন
তারকচাঁদের চরিত্রসুধা
অশ্বিনী চরিত্রসুধা
গুরুচাঁদ চরিত
মহান ধর্মগুরু হরিচাঁদ নিয়ে প্রাথমিক পাঠ
হরিলীলামৃত
তিনকড়ি মিয়া গোস্বামী
শ্রী ব্রজমোহন ঠাকুর
……………………………
আরো পড়ুন:
মতুয়া ধর্ম দর্শনের সারমর্ম
মতুয়া মতাদর্শে বিবাহ ও শ্রদ্ধানুষ্ঠান
মতুয়াদের ভগবান কে?
নম:শূদ্রদের পূর্ব পরিচয়: এক
নম:শূদ্রদের পূর্ব পরিচয়: দুই
মতুয়া মতাদর্শে সামাজিক ক্রিয়া
বিধবাবিবাহ প্রচলন ও বর্ণবাদীদের গাত্রদাহ
ঈশ্বরের ব্যাখ্যা ও গুরুচাঁদ ঠাকুর
বিধবাবিবাহের প্রচলন ও গুরুচাঁদ ঠাকুর