ভবঘুরেকথা
অসাম্প্রদায়িক ভারতবর্ষ

মানুষের প্রতিটি ভুল “থেকে” ফুল ফোটে! যদি সে ফুটাতে জানে! ভুল করে থাকলে “খুশি” হও, এবার তুমি “ফেরত” পাবে পুষ্পভরা বাগান! যে “সত্য” খুঁজেছে! সে “সত্য” পেয়েছে! জ্ঞান দিয়ে সত্য জানা যায় না, সত্য ধ্যান দিয়ে জানা যায়! আর ধ্যানের অর্থ হলোঃ মনকে অতিক্রম করা।

জাগতিক জগতের মোহের উর্ধ্বে বিচরণ করা! মন থেকে মুক্ত হয়ে যাওয়া, ছোট-লোক, বড়-লোক, এগুলো মনের খেলা। যেখানে মন সম্পূর্ণ রূপে চুপ হয়ে যায়, সেখানেই সত্যর উৎঘাটন হয়। তখন তুমি প্রথমবার জানবে “যিনি” সব সময় আছে। সত্যই পরম-পরমই সত্য।

সত্যই স্বর্গ! স্বর্গ কোন ভৌগলিক বিষয় নয়। যে সত্যকে জানলো, সেই স্বর্গে প্রবেশ করলো। সেটা এমনি “স্বর্গ” যেখান থেকে কাউকে বের করে দেওয়া হয় না। আর তোমরা যে “স্বর্গের” কথা বলো সেখান থেকে মানুষ পড়ে যায়। বইয়ে যে স্বর্গের কথা বলা হয়েছে সেটা ভৌগলিক স্বর্গ। তোমাদের স্বর্গ তোমাদের অপূর্ণ আশার কল্পনা।

যা তুমি এখানে পূর্ণ করতে পারনি, কিন্তু চেয়েছিলে এখানে সব পূর্ণ করতে! কিন্তু তুমি পারনি? জীবনে সব আশা কখনো পূর্ণ হয় “না” কারণ আশার শেষ নেই।

আর জীবন অনেক ছোট ৬০-৭০ বছরে জীবন, আর তোমার “ইচ্ছা” অসীম যার শেষ নেই। তোমাদের অনেক স্বপ্নই অপূর্ণ থেকে যায় আর এভাবে জীবন শেষ হয়। আর তখনই এই অপূর্ণ আশার জন্য কিছু আশার “তো” প্রয়োজন। এখানে যা পূর্ণ হয়নি আগে সেটা হবে।

স্বর্গ তোমাদের “অপূর্ণ” আশার উপর দাঁড়িয়ে আছে! এখানে তোমরা সুন্দর নারী “বা” সুন্দর পুরুষ চেয়েছিলে কিন্তু পাওনি। এখানে সবাই সুন্দরের পূজা করে। দূর থেকে দেখলে নারী “বা” পুরুষ সুন্দর মনে হয়! কাছে গিয়ে দেখ ফুল কিভাবে কাঁটা হয় বুঝতেই পারবে না।

সুন্দর সুন্দর ঠোঁট কিভাবে কঠোর শব্দ বলে, সুন্দর সুন্দর দেহ কিভাবে কারাগার হয়ে যায়। এই বিষয় তোমাদের সবার অনুভূতি আছে।

তখনই মানুষ “আশার” মালা গলায় পরন, স্বর্গে হুর হবে, তাদের কণ্ঠ কোকিলের মত হবে। তাদের জীবনে সুগন্ধি আর সুগন্ধী থাকবে, তারা কখনো বৃদ্ধ হবে না। তার রূপ লাবন্য নিত্য নতুন ভাবে বাড়িতে থাকবে!

এই জগৎতে ধন-সম্পদ যতই হয় “অভাব” শেষ হয় না। ধন-সম্পদের পাহাড় হয় কিন্তু মৃত্যু সেটা কেড়ে নিয়ে যায়। তখনি স্বর্গের কল্পনা শুরু হয়।

সুফি সাধকরা বলেন, “সত্যের মধ্যে বাঁচাই স্বর্গ।” স্বর্গ তো মানুষের মন পরিশুদ্ধ সত্যশ্রয়ী মানুষরা-ই সত্যকে আঁকড়ে ধরে তাইতো তারা স্বর্গে থাকেন- সত্যর সাথে স্বর্গের সম্পর্ক-মিথ্যার সাথে নরকের! সত্যের মাঝে সবাই ডুব দিতে জানেনা, সত্যের মাঝে বাঁচার মানেই স্বর্গ।

এটা ভূগলের সাথে কোন সম্পর্ক নেই। বাইরের সাথে স্বর্গের কোন সম্পর্ক নেই, এটা সম্পূর্ণ ভেতরের বিষয়। মনের পার হওয়াই স্বর্গ আর তোমাদের স্বর্গ তোমাদের মনেরই আকাঙ্ক্ষা। সেটা “তো” মনেরই আশা এখানে হয়নি মৃত্যুর পরে হবে।

মানুষের এই আশায় আশায় হাজার রকমে দুঃখ বয়ে যায়। এই আশায় আশায় আমরা কত জন্মের চিন্তা করছি কারণ এক জনমে “তো” ভরসা নেই, এই অন্ধকার পার হবে। তখন আমরা চুরাশি লক্ষ যোনি ভ্রমণ করার কল্পনা করছি।

তুমি একটু চিন্তা করে দেখ, চুরাশি লক্ষ যোনি! মানে কখনো না কখনো এই অন্ধকার পার হবে। কিন্তু সব সময় এটাই হয় যে অন্ধকার-ই কাটে না।

তোমাদের সব আশা হতাশায় পরির্বতন হয়ে যায়। তখনই মানুষ নতুন নতুন আশা বাঁধে; আবার স্বর্গের কল্পনা করে। ধর্মীও গ্রন্থে যে স্বর্গের কথা বলা হয়েছে সেটা হোক না কেন হিন্দুর, মুসলমানের, ইহুদী, বৌদ্ধ বা খৃষ্টানদের সেটা মানুষের কল্পনার প্রতিফলন। কিন্তু সুফি সাধকরা যে স্বর্গের কথা বলে সেটা হল, সত্যের মধ্যে বাঁচাই স্বর্গ।

একটা কথা মনে রাখবে দুঃখের কোন শুরু নেই, কিন্তু শেষ আছে! আর আনন্দের শুরু আছে শেষ নেই। দুঃখের কোন শুরু নেই কারণ তুমি অনন্তকাল ধরে দুঃখ ভোগ করছ। দুঃখ আছে কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ সেটা লুকিয়ে রাখে। তুমি কোন ব্যাক্তিকে জিজ্ঞাসা কর কেমন আছেন? সে উত্তর দিবে অনেক ভালো।

অথচ তার চেহারার দিকে দেখ কোন আনন্দ আছে? তুমি যাকেই জিজ্ঞাসা কর না কেন সেই বলবে, প্রভু কৃপায় আনন্দে আছি এবং সব ঠিকঠাক আছে। পাশাপাশি তুমি নিজেও একই কথাই বল? আসলে কোথাও কোন ঠিকঠাক চলছে না। পুরো পৃথিবীতে দুঃখে ভরা নরক হয়ে রয়েছে।

আর প্রতিটা ব্যক্তি বলছে সব “ঠিকঠাক” আছে। সবাই মিথ্যা বলছে শুধু উপড়ে উপড়ে দেখায় আমি ভালো আছি। এটা হলো মানুষের ভদ্রতা।

আমরা কখনও দুঃখকে শিকারই করিনা। আর আমরা যদি দুঃখকে শিকার না করি তাহলে আগের সফর আর আগে বাড়বে না। দুঃখের কারণ বের করতে হবে অকারণে দুঃখ হতে পারে না। ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিও না, ভাগ্য “তো” একটা বাহানা।

এই কথা বলিও না যে বিধাতা লিখে দিয়েছে আর এই কথা বলিও না যে অন্যের কারণে আজ আমি দুঃখি। দুঃখের কারণ হলো তুমি তোমার ভেতরে, তোমার অজ্ঞানের কারণে।

“তোমার ভেতরে যদি লোভ হিংসা থাকে তাহলে তুমি দুঃখ পাবে না তো কি পাবে?”

অন্যজনকে তুমি দুঃখ দেবে, আর তুমি চিন্তা করবে তোমার জীবনে সুখের বীণা বাজবে? তুমি যা অন্যকে দেবে সেটা তোমার কাছে ফেরৎ আসবে। এই জগৎ প্রতিফলন করে এই জগৎকে তুমি যা দেবে ঠিক সেটাই তুমি ফেরৎ পাবে। তুমি হতাশ হয়ে যেও না, এই দুঃখকে শেষ করা যায়। স্রষ্টা হতাশ নিরাশ হতে নিষেধ করেছেন!!

একবার যদি দুঃখের মূলকে খোঁজ করতে পার। আর এই খোঁজের নামই- ধর্ম, ধ্যান, মোরাকাবা, ইয়োগা! আলাদা আলাদা নাম কিন্তু প্রক্রিয়া বা কাজ একই। কোন না কোনভাবে নিজেকে চিনে নেওয়া যায় তখনই দুঃখের শেষ হবে। এটা আমার নিজের প্রমাণ থেকে বলছি তোমাকে!

সত্যের মধ্যে বাঁচাই স্বর্গ। আসলে সত্য কি? মহাপুরুষের ভেতরের যে অবস্থান সেটাই আসল সত্য, সত্য তোমার জীবনের অনুভূতি। তুমি কে এই অনুভূতি হয়ে যায়। এই সত্যকে কোরান-পুরাণ-বেদ-বেদান্ত-বাইবেল-ত্রিপিটক-জেন্দাবেস্তা পড়ে পাওয়া যায় না।

যদি সত্য পেতে চাও তাহলে নিজের ভেতরে খোঁজ করো। যে “সত্য” খুঁজেছে! সে “সত্য” পেয়েছে! আর তোমার নিজ স্বরূপের উপরে অন্য ব্যক্তিরা ময়লা দিয়ে ডেকে রেখেছে। এটা সরাতে হবে।

ময়লার উপর ময়লা পরে তোমার নিজ স্বরূপ হারিয়ে গেছে, আমাদের সমাজের মানুষ আজ শিশু জন্ম হওয়ার আগেই বলে তাকে হিন্দু বানাও। শিশু জন্মই হয় নাই তাড়াতাড়ি খাৎনা করো মুসলমান বানাও।

শিশু জন্মই হয়নি তাড়াতাড়ি “ঈসা-ই” বানাও লোকজন তোমার উপড়ে একটার পর একটা পদবী দিতে থাকবে। পৃথিবীতে যখনই কোন শিশু জন্ম হয় সাথে সাথে বলে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ বা খৃষ্টান।

শিশু জন্মগ্রহণ এরপর সে, না হয়- হিন্দু, না মুসলিম হয়, না বৌদ্ধ হয়, নয় খৃষ্টান! শিশু তো এক চৈতন্য নিয়ে জন্মায় বা খালি বই হয়ে জন্ম নেয়। কিন্তু লোকজনের একদিক দিয়ে শিশু জন্ম নেয় অন্যদিক দিয়ে তারা তার খালি বই লেখা শুরু করে দেয়। কেউ লেখে কোরান- কেউ লেখে-বেদ-বেদান্ত- কেউ লেখে বাইবেল-কেউ লেখে -ত্রিপিটক।

করে দিল খারাপ তার খালি বইকে, শিশুটাকে কোন সুযোগই দিল না “নিজেকে চেনার, নিজেকে জানার।” নিজেকে চেনার আগেই তার উপর তোমরা বিভিন্ন ধারণা চাপিয়ে দিচ্ছ। যে তুমি বাংলাদেশী, তুমি ভারতীয়, তুমি পাকিস্তানী, তুমি ইংরেজ।

মানুষ তো শুধুই মানুষ, কেন তোমরা তার উপর ভূগোল-ইতিহাস এনে চাপিয়ে দাও? যদি তুমি কাউকে বলো যে, সত্য উপলদ্ধি জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় হিন্দু হওয়া, মুসলমান হওয়া, তাহলে সে ঝগড়া শুরু করে দেবে। কিন্তু সে একটু চিন্তা করে দেখে না যে এগুলো চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা ধার্মীকতা না ধার্মীক “তো” শুধুই ধার্মীক হবে।

ধার্মীক ব্যক্তির কোন রাষ্ট্র হয় না। ধার্মীক ব্যাক্তি নিজে কাউকে, না কালো মনে করে না সাদা মনে করে। কারণ সে নিজেকে দেহ মনে করে না শুধুই চেতনা। ধার্মীক ব্যক্তি নিজেকে না নারী মনে করে না পুরুষ মনে করে কারণ আত্মা কী কখনো নারী বা পুরুষ হয়?

জৈনদের ধারণা নারীদেহে মুক্তি সম্ভব না। মুক্তি কী দেহের হয়? দেহ তো এখানেই পরে থাকে সেটা নারীর হোক বা পুরুষের হোক। মুক্তি যদি হয় তা হবে আত্মার। আহা!! আমরা কী কী কথায় নিজ স্বরূপ বা আত্মাকে হারিয়ে ফেলেছি। নিজের স্বরূপ হারিয়ে ফেলছি, আর সামাজিক কুসংস্কারকে আমরা জরিয়ে রেখেছি। আমাদের সত্যের বোধ নেই, কিন্তু সিদ্ধান্তে অটল।

সত্যের মধ্যে যে বাঁচে সেই সদগুরু। একটা বিষয় মনে রাখবে গুরু যদি বলে আমি হিন্দু “বা” মুসলমান তাহলে সে সদগুরু নয়! সদগুরু তো সেই যে সত্যের মধ্যে বাঁচে ।

“আর” সত্য “না” হিন্দু “না” মুসলমান। সত্য না মন্দিরে না মসজিদে, সত্য “তো” তোমার ভেতরে। তুমি আমার কথায় থেমে যেও না। এটাকে একটা ইশারা মনে করো। যদি এমনি হয়, তাহলে তুমিও খুঁজবে আশা করি! এই বিষয়কে একটা প্রশ্ন বানিয়ে এগিয়ে যেও!

……………………………
প্রচারে বিনীত -প্রণয় সেন
ছবিসূত্র: 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!