পরিশিষ্ট খণ্ড : চতুর্থ তরঙ্গ
বন্দনা
জয় জয় হরিচাঁদ জয় কৃষ্ণদাস।
জয় শ্রী বৈষ্ণব দাস জয় গৌরী দাস।।
জয় শ্রী স্বরূপ দাস পঞ্চ সহোদর।
পতিত পাবন হেতু হৈলা অবতার।।
জয় জয় গুরুচাঁদ জয় হীরামন।
জয় শ্রী গোলোকচন্দ্র জয় শ্রী লোচন।।
জয় জয় দশরথ জয় মৃত্যুঞ্জয়।
জয় জয় মহানন্দ প্রেমানন্দময়।।
(জয় শ্রীসুধন্যচাঁদ সভ্যভামাত্মজ।
প্রেমানন্দে হরি গুরু শ্রীপতিচাঁদ ভজ।।)
জয় নাটু জয় ব্রজ জয় বিশ্বনাথ।
নিজ দাস করি মোরে কর আত্মসাৎ।।
প্রস্তাবনা
রামকান্ত বলে হরি ধরাতে উদয়।
যশোমন্তদেব গৃহে সফলাডাঙ্গায়।।
প্রশস্ত গার্হস্থ ধর্ম জীবে শিক্ষা দিতে।
অবতীর্ণ হরিচাঁদ আসি অবনীতে।।
ধর্মের নামেতে জীব অধর্ম করয়।
ধর্ম দুঃখী তাই দেখি শ্রীহরি উদয়।।
নামধর্ম নিয়ে এল শ্রীগৌরাঙ্গ রায়।
‘অনিত্য সংসার’বলি জীব শিক্ষা দেয়।।
আদর্শ দেখাতে গোরা সন্ন্যাসী হইল।
সংসারের জীব কিন্তু সংসারে রহিল।।
‘রাইপ্রেম’ ‘রাধারস’ বলি গোরা কাঁদে।
‘নারীপ্রেমে’ বুঝি ভক্ত পড়ে মোহ ফাঁদে।।
জগত তারিতে এসে সংসার ছাড়িল।
সংসার ‘সং’ সার হ’ল জগত ডুবিল।।
সংসারের মাঝে তাই গৃহস্থ সাজিয়া।
হরিচাঁদ অবতীর্ণ নামধর্ম নিয়া।।
শৌচাচার, কুটিনাটি শিক্ষাদীক্ষামন্ত্র।
সংকীর্তন মধ্যে যথা ডুগডুগি যন্ত্র।।
বজ্রস্বরে ঘরে ঘরে হরিচাঁদ কয়।
“শোনরে কলির জীব, আর নাই ভয়।।
সংসারে সংসারী থাক তা’তে ক্ষতি নাই।
চরিত্র পবিত্র রাখি সত্য বলা চাই।।
গৃহ ধর্ম রক্ষা কর বাক্য সত্য কও।
হাতে কাম মুখে নাম দেল্-খোলা হও।।
অসতের সঙ্গ ছাড়ি হরি হরি বল।
কুফল বিফল হবে পাবে প্রেমফল।।
পুরুষে করিবে ভক্তি পিতামাতা ভাই।
নারী পক্ষে পতি ভিন্ন অন্ন গতি নাই।।
পরপতি পরসতী স্পর্শ না করিবে।
না ডাক হরিকে হরি তোমাকে ডাকিবে।।
গৃহ ধর্ম গৃহকর্ম সকলি করিবে।
হাতে কাম মুখে নাম ভকতি রাখিবে।।
গৃহধর্ম রক্ষা করে বাক্য সত্য কয়।
যোগী, ন্যাসী কি সন্ন্যাসী কেহ তুল্য নয়।।
গৃহেতে থাকিয়া যার হয় ভাবোদয়।
সেই যে পরম সাধু জানিও নিশ্চয়।।”
তারস্বরে প্রভু যবে এই ভীর দিল।
রোগী ভোগী দুঃখী পাপী সকলি আইল।।
বাল্যেতে করিল প্রভু গোচারণের খেলা।
গার্হস্থ ধর্মের ভিত্তি গোধনের মেলা।।
ধ্যানমগ্ন হরিচাঁদ বালক বয়সে।
ছত্ররূপে শিররক্ষা করে ফণী এসে।।
প্রতিবেশী নারী এক তাহা দৃষ্টি করে।
অন্নপূর্ণামাতা ভীতা মন্দ চিন্তা করে।।
শীঘ্র করি হরিচাঁদে বক্ষেতে লইল।
সর্পেতে দংশিল নাকি জিজ্ঞাসা করিল।।
হরিচাঁদ বলে “মাগো! বৃথা কর ভয়।
আমাকে দংশিবে সর্প একি কভু হয়।।”
বালকের ছলা ভাবি জননী আশ্বস্ত।
চক্ষু নাহি দেখে কভু ললাট প্রশস্ত।।
কৈশোরে রাখাল সনে সখ্য ভাবে লীলা।
অন্তরঙ্গ বিশ্বনাথে প্রাণদান দিলা।।
কৈশোরের শেষ হ’ল প্রথম যৌবনে।
শান্তিদেবী আসি মিলে শান্তিময় সনে।।
ব্রজনাথ দেহে যেই কৃষ্ণশক্তি ছিল।
হরিচাঁদ অঙ্গে আসি মিলিত হইল।।
‘বার’ করে বিষ্ণুশক্তি সফলাডাঙ্গায়।
আকর্ষণে হরিচাঁদ দেহে হ’ল লয়।।
ক্রমে ক্রমে বিকশিত ঈশ্বরীয় শক্তি।
ভবিষ্যৎ বলে স্বপ্নে কুষ্ঠব্যধিমুক্তি।।
জমিদার সঙ্গে বাদ দেশ ত্যাগী হ’ল।
পূর্ণ লীলাক্ষেত্র ওঢ়াকাঁদিতে আসিল।।
ভাই ভাই ঠাই ঠাই বাড়ী হ’ল ভিন্ন।
জ্যেষ্ঠ পুত্র গুরুচাঁদ হয় অবতীর্ণ।।
ব্যবসায় কৃষিকার্য করে ইতিপূর্বে।
শেষ করিলেন হরি গৃহস্থালি পর্বে।।
আপন আত্মাকে হরি আপনি দেখিলা।
কত লীলা করে হরি চটকার তলা।।
কল্পবৃক্ষ মূলে বসে শ্রীহরিঠাকুর।
অকামনা, নামে রুচি কামবাঞ্ছা দূর।।
অকামনা বৃক্ষমূলে মিলে সর্বফল।
অকামনা ব্রত সাধে ভকত বৎসল।।
একা প্রভু বহু হ’ল ভক্তের দেহে।
ভক্তি আকর্ষণে চলে ভক্তগণ গৃহে।।
প্রথম নিশানা করে রাউৎখামার।
শ্রীবংশীবদন শ্রীরামলোচন আর।।
ওঢ়াকাঁদি রামচাঁদ চৌধুরী সুজন।
পদে পদ্ম দেখি মত্ত হ’ল সেইজন।।
রোগী, ভোগী, ভকত, বাদী সকলে জুটিল।
যুগাবতারের কাজ আরম্ভ হইল।।
যুগে যুগে অবতার জীবের কারণ।
শ্রীহরিরূপেতে ওঢ়াকাঁদি আগমন।।