শ্যামপুকুর বাটীতে ভক্তসঙ্গে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ
১৮৮৫, ১৮ই অক্টোবর
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ শ্যামপুকুরের বাটীতে ভক্তসঙ্গে
শ্রীশ্রীবিজয়া দশমী। ১৮ই অক্টোবর, ১৮৮৫ খ্রীষ্টাব্দ (৩রা কার্তিক, ১২৯২, রবিবার)। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ শ্যামপুকুরের বাটীতে আছেন। শরীর অসুস্থ – কলিকাতায় চিকিৎসা করিতে আসিয়াছেন। ভক্তেরা সর্বদাই থাকেন, ঠাকুরের সেবা করেন। ভক্তদের মধ্যে এখন কেহ সংসারত্যাগ করেন নাই – তাঁহারা নিজেদের বাটী হইতে যাতায়াত করেন।
[সুরেন্দ্রের ভক্তি – ‘মা হৃদয়ে থাকুন’ ]
শীতকাল সকাল বেলা ৮টা। ঠাকুর অসুস্থ, বিছানায় বসিয়া আছেন। কিন্তু পঞ্চমবর্ষীয় বালকের মতো, মা বই কিছু জানেন না। সুরেন্দ্র আসিয়া বসিলেন। নবগোপাল, মাস্টার ও আরও কেহ কেহ উপস্থিত আছেন। সুরেন্দ্রের বাটিতে ৺দুর্গাপূজা হইয়াছিল। ঠাকুর যাইতে পারেন নাই, ভক্তদের প্রতিমা দর্শন করিতে পাঠাইয়াছিলেন। আজ বিজয়া, তাই সুরেন্দ্রের মন খারাপ হইয়াছে।
সুরেন্দ্র – বাড়ি থেকে পালিয়ে এলাম।
শ্রীরামকৃষ্ণ (মাস্টারকে) – তাহলেই বা। মা হৃদয়ে থাকুন!
সুরেন্দ্র মা মা করিয়া পরমেশ্বরীর উদ্দেশে কত কথা কহিতে লাগিলেন।
ঠাকুর সুরেন্দ্রকে দেখিতে দেখিতে অশ্রু বির্সজন করিতেছেন। মাস্টারের দিকে তাকাইয়া গদ্গদস্বরে বলিতেছেন, কি ভক্তি! আহা, এর যা ভক্তি আছে!
শ্রীরামকৃষ্ণ – কাল ৭টা-৭৷৷টার সময় ভাবে দেখলাম, তোমাদের দালান। ঠাকুর প্রতিমা রহিয়াছেন, দেখলাম সব জ্যোতির্ময়। এখানে-ওখানে এক হয়ে আছে। যেন একটা আলোর স্রোত দু-জায়গার মাঝে বইছে! – এবাড়ি আর তোমাদের সেই বাড়ি!
সুরেন্দ্র – আমি তখন ঠাকুর দালানে মা মা বলে ডাকছি, দাদারা ত্যাগ করে উপরে চলে গেছে। মনে উঠলো মা বললেন, ‘আমি আবার আসব’।
[ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ও ভগবদ্গীতা ]
বেলা এগারটা বাজিবে। ঠাকুর পথ্য পাইলেন। মণি হাতে আঁচাবার জল দিতেছেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ (মণির প্রতি) – ছোলার ডাল খেয়ে রাখালের অসুখ হয়েছে। সাত্ত্বিক আহার করা ভাল। তুমি গীতা পড় না?
মণি – আজ্ঞা হাঁ, যুক্তাহারের কথা আছে। সাত্ত্বিক আহার, রাজসিক আহার, তামসিক আহার। আবার সাত্ত্বিক দয়া, রাজসিক দয়া, তামসিক দয়া। সাত্ত্বিক অহং ইত্যাদি সব আছে।
শ্রীরামকৃষ্ণ – গীতা তোমার আছে?
মণি – আজ্ঞা, আছে।
শ্রীরামকৃষ্ণ – ওতে সর্বশাস্ত্রের সার আছে।
মণি – আজ্ঞা, ঈশ্বরকে নানারকমে দেখার কথা আছে; আপনি যেমন বলেন, নানা পথ দিয়ে তাঁর কাছে যাওয়া – জ্ঞান, ভক্তি, কর্ম, ধ্যান।
শ্রীরামকৃষ্ণ – কর্মযোগ মানে কি জান? সকল কর্মের ফল ভগবানে সমর্পণ করা।
মণি – আজ্ঞা, দেখছি, ওতে আছে। কর্ম আবার তিনরকমে করা যেতে পারে, আছে।
শ্রীরামকৃষ্ণ – কি কি রকম?
মণি – প্রথম – জ্ঞানের জন্য। দ্বিতীয় – লোকশিক্ষার জন্য। তৃতীয় – স্বভাবে।
ঠাকুর আচমনান্তে পান খাইতেছেন। মণিকে মুখ হইতে পান প্রসাদ দিলেন।