ভবঘুরেকথা
শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব

১৮৮৫, ২৯শে অক্টোবর
শ্রীরামকৃষ্ণ, ডাক্তার সরকার, ভাদুড়ী প্রভৃতি সঙ্গে
[ডাক্তার সরকার, ভাদুড়ী, দোকড়ি, ছোট নরেন, মাস্টার, শ্যাম বসু ]

ডাক্তার ও মাস্টার শ্যামপুকুরে আসিয়া দ্বিতল গৃহে উপস্থিত হইলেন। সেই গৃহের বাহিরের উপরে বারান্দাওয়ালা দুটি ঘর আছে। একটি পূর্ব-পশ্চিমে ও অপরটি উত্তর-দক্ষিণে দীর্ঘ। তাহার প্রথম ঘরটিতে গিয়া দেখেন, ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বসিয়া আছেন। ঠাকুর সহাস্য। কাছে ডাক্তার ভাদুড়ী ও অনেকগুলি ভক্ত।

ডাক্তার হাত দেখিলেন ও পীড়ার অবস্থা সমস্ত অবগত হইলেন। ক্রমে ঈশ্বর সম্বন্ধীয় কথা হইতে লাগিল।

ভাদুড়ী – কথাটা কি জান? সব স্বপ্নবৎ।

ডাক্তার – সবই ডিলিউসন্‌(ভ্রম)? তবে কার ডিলিউসন্‌আর কেন ডিলিউন্‌? আর সব্বাই কথাই বা কয় কেন, ডিলিউসন্‌ জেনেও? I cannot believe that God is real and creation is unreal. (ঈশ্বর সত্য, আর তাঁর সৃষ্টি মিথ্যা, এ বিশ্বাস করিতে পারি না।)

[সোঽহম্‌ ও দাসভাব – জ্ঞান ও ভক্তি ]

শ্রীরামকৃষ্ণ – এ বেশ ভাব – তুমি প্রভু, আমি দাস। যতক্ষণ দেহ সত্য বলে বোধ আছে, আমি তুমি আছে, ততক্ষণ সেব্য সেবকভাবই ভাল; আমি সেই, এ-বুদ্ধি ভাল নয়।

“আর কি জান? একপাশ থেকে ঘরকে দেখছি, এও যা, আর ঘরের মধ্যে থেকে ঘরকে দেখছি, সেও তাই।”

ভাদুড়ী (ডাক্তারের প্রতি) – এ-সব কথা যা বললুম, বেদান্তে আছে। শাস্ত্র-টাস্ত্র দেখ, তবে তো।

ডাক্তার – কেন, ইনি কি শাস্ত্র দেখে বিদ্বান হয়েছেন? আর ইনিও তো ওই কথা বলেন। শাস্ত্র না পড়লে হবে না?

শ্রীরামকৃষ্ণ – ওগো, আমি শুনেছি কত?

ডাক্তার – শুধু শুনলে কত ভুল থাকতে পারে। তুমি শুধু শোন নাই।

আবার অন্য কথা চলিতে লাগিল।

[‘ইনি পাগল’ – ঠাকুরের পায়ের ধুলা দেওয়া ]

শ্রীরামকৃষ্ণ (ডাক্তারের প্রতি) – আপনি নাকি বলেছো, ‘ইনি পাগল’? তাই এরা (মাস্টার ইত্যাদির দিকে দেখাইয়া) তোমার কাছে যেতে চায় না।

ডাক্তার (মাস্টারের দিকে দৃষ্টিপাত করিয়া) – কই? তবে অহংকার বলেছি। তুমি লোককে পায়ের ধুলা নিতে দাও কেন?

মাস্টার – তা না হলে লোকে কাঁদে।

ডাক্তার – তাদের ভুল – বুঝিয়ে দেওয়া উচিত।

মাস্টার – কেন, সর্বভূতে নারায়ণ?

ডাক্তার – তাতে আমার আপত্তি নাই। সব্বাইকে কর।

মাস্টার – কোন কোন মানুষে বেশি প্রকাশ! জল সব জায়গায় আছে, কিন্তু পুকুরে, নদীতে, সমুদ্রে, – প্রকাশ। আপনি Faraday-কেL যত মানবেন, নূতন Bachelor of Science-কেL কি তত মানবেন?

ডাক্তার – তাতে আমি রাজী আছি। তবে গড্‌ (God) বল কেন?

মাস্টার – আমরা পরস্পর নমস্কার করি কেন? সকলের হৃদয়মধ্যে নারায়ণ আছেন। আপনি ও-সব বিষয় বেশি দেখেন নাই, ভাবেন নাই।

শ্রীরামকৃষ্ণ (ডাক্তারের প্রতি) – কোন কোন জিনিসে বেশি প্রকাশ। আপনাকে তো বলেছি, সূর্যের রশ্মি মাটিতে একরকম পড়ে, গাছে একরকম পড়ে, আবার আরশিতে আর একরকম। আরশিতে কিছু বেশি প্রকাশ। এই দেখ না, প্রহ্লাদাদি আর এরা কি সমান? প্রহ্লাদের মন প্রাণ সব তাঁতে সমর্পণ হয়েছিল!

ডাক্তার চুপ করিয়া রহিলেন। সকলে চুপ করিয়া আছেন।

শ্রীরামকৃষ্ণ (ডাক্তারের প্রতি) – দেখ, তোমার এখানের উপর টান আছে। তুমি আমাকে বলেছো, তোমায় ভালবাসি।

[শ্রীরামকৃষ্ণ ও সংসারী জীব – “তুমি লোভী, কামী, অহংকারী” ]

ডাক্তার – তুমি Child of Nature, তাই অত বলি। লোক পায়ে হাত দিয়ে নমস্কার করে, এতে আমার কষ্ট হয়। মনে করি এমন ভাল লোকটাকে খারাপ করে দিচ্ছে। কেশব সেনকে তার চেলারা ওইরকম করেছিল। তোমায় বলি শোন –

শ্রীরামকৃষ্ণ – তোমার কথা কি শুনব? তুমি লোভী, কামী, অহংকারী।

ভাদুড়ী (ডাক্তারের প্রতি) – অর্থাৎ তোমার জীবত্ব আছে। জীবের ধর্মই ওই, টাকা-কড়ি, মান-সম্ভ্রমেতে লোভ, কাম, অহংকার। সকল জীবেরই এই ধর্ম।

ডাক্তার – তা বল তো তোমার গলার অসুখটি কেবল দেখে যাব। অন্য কোন কথায় কাজ নাই। তর্ক করতে তো সব ঠিকঠাক বলব।

সকলে চুপ করিয়া রহিলেন।

[অনুলোম ও বিলোম – Involution and Evolution – তিন ভক্ত ]

কিয়ৎক্ষণ পরে ঠাকুর আবার ভাদুড়ীর সহিত কথা কহিতেছেন।

শ্রীরামকৃষ্ণ – কি জানো? ইনি (ডাক্তার) এখন নেতি নেতি করে অনুলোমে যাচ্ছে। ঈশ্বর জীব নয়, জগৎ নয়, সৃষ্টির ছাড়া তিনি, এই সব বিচার ইনি কচ্ছে। যখন বিলোমে আসবে সব মানবে।

“কলাগাছের খোলা ছাড়িয়ে ছাড়িয়ে গেলে, মাঝ পাওয়া যায়।

“খোলা একটি আলাদা জিনিস, মাঝ একটি আলাদা জিনিস। মাঝ কিছু খোলা নয়, খোলাও মাঝ নয়। কিন্তু শেষে মানুষ দেখে যে খোলেরই মাঝ, মাঝেরই খোল। তিনি চতুর্বিংশতি তত্ত্ব হয়েছেন, তিনিই মানুষ হয়েছেন। (ডাক্তারের প্রতি) – ভক্ত তিনরকম। অধম ভক্ত, মধ্যম ভক্ত, উত্তম ভক্ত। অধম ভক্ত বলে, ওই ঈশ্বর। তারা বলে সৃষ্টি আলাদা, ঈশ্বর আলাদা। মধ্যম ভক্ত বলে, ঈশ্বর অন্তর্যামী। তিনি হৃদয়মধ্যে আছেন। সে হৃদয়মধ্যে ঈশ্বরকে দেখে। উত্তম ভক্ত দেখে, তিনি এই সব হয়েছেন। তিনিই চতুর্বিংশতি তত্ত্ব হয়েছেন। সে দেখে ঈশ্বর অধঃ ঊর্ধ্বে পরিপূর্ণ।

“তুমি গীতা, ভাগবত, বেদান্ত এ-সব পড়, – তবে এ-সব বুঝতে পারবে!

“ঈশ্বর কি সৃষ্টিমধ্যে নাই?”

ডাক্তার – না, সব জায়গায় আছেন, আর আছেন বলেই খোঁজা যায় না।

কিয়ৎক্ষণ পরে অন্য কথা পড়িল। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের ঈশ্বরীয় ভাব সর্বদা হয়, তাহাতে অসুখ বাড়িবার সম্ভাবনা।

ডাক্তার (শ্রীরামকৃষ্ণের প্রতি) – ভাব চাপবে। আমার খুব ভাব হয়। তোমাদের চেয়ে নাচতে পারি।

ছোট নরেন (সহাস্যে) – ভাব যদি আর একটু বাড়ে, কি করবেন?

ডাক্তার – Controlling Power-ও (চাপবার শক্তি) বাড়বে।

শ্রীরামকৃষ্ণ ও মাস্টার – সে আপনি বলছো (বলছেন।)

মাস্টার – ভাব হলে কি হবে, আপনি বলতে পারেন?

কিয়ৎক্ষণ পরে টাকা-কড়ির কথা পড়িল।

শ্রীরামকৃষ্ণ (ডাক্তারের প্রতি) – আমার তাতে ইচ্ছা নাই, তা তো জান? – কি ঢঙ্‌ নয়!

ডাক্তার – আমারই তাতে ইচ্ছা নাই – তা আবার তুমি! বাক্স খোলা টাকা পড়ে থাকে –

শ্রীরামকৃষ্ণ – যদু মল্লিকও ওইরকম অন্যমনস্ক, – যখন খেতে বসে, এত অন্যমনস্ক যে, যা তা ব্যান্নুন, ভাল মন্দ খেয়ে যাচ্ছে। কেউ হয়তো বললে, ‘ওটা খেও না, ওটা খারাপ হয়েছে’। তখন বলে, ‘অ্যাঁ, এ ব্যান্নুনটা খারাপ? হাঁ, সত্যই তো!’

ঠাকুর কি ইঙ্গিতে বলিতেছেন, ঈশ্বরচিন্ত্য করে অন্যমনস্ক, আর বিষয় চিন্তা করে অ্যমনস্ক, অনেক প্রভেদ?

আবার ভক্তদিগের দিকে দৃষ্টিপাত করিয়া ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ডাক্তারকে দেখাইয়া সহাস্যে বলিতেছেন, “দেখ, সিদ্ধ হলে জিনিস নরম হয় – ইনি (ডাক্তার) খুব শক্ত ছিলেন, এখন ভিতর থেকে একটু নরম হচ্চেন।”

ডাক্তার – সিদ্ধ হলে উপর থেকেই নরম হয়, কিন্তু আমার এ যাত্রায় তা হল না। (সকলের হাস্য)

ডাক্তার বিদায় লইবেন, আবার ঠাকুরের সহিত কথা কহিতেছেন।

ডাক্তার – লোকে পায়ের ধুলা লয়, বারণ করতে পার না?

শ্রীরামকৃষ্ণ – সব্বাই কি অখণ্ড সচ্চিদানন্দকে ধরতে পারে?

ডাক্তার – তা বলে যা ঠিক মত, তা বলবে না?

শ্রীরামকৃষ্ণ – রুচিভেদ আর অধিকারীভেদ আছে।

ডাক্তার – সে আবার কি?

শ্রীরামকৃষ্ণ – রুচিভেদ, কিরকম জানো? কেউ মাছটা ঝোলে খায়, কেউ ভাজা খায়, কেউ মাছের অম্বল খায়, কেউ মাছের পোলাও খায়। আর অধিকারীভেদ। আমি বলি আগে কলাগাছ বিঁধতে শেখ, তারপর শলতে, তারপর পাখি উড়ে যাচ্ছে, তাকে বেঁধ।

[অখণ্ডদর্শন – ডাক্তার সরকার ও হরিবল্লভকে দর্শন ]

সন্ধ্যা হইল। ঠাকুর ঈশ্বরচিন্তায় মগ্ন হইলেন। এত অসুখ; কিন্তু অসুখ একধারে পড়িয়া রহিল। দুই-চারজন অন্তরঙ্গ ভক্ত কাছে বসিয়া একদৃষ্টে দেখিতেছেন। ঠাকুর অনেকক্ষণ এই অবস্থায় আছেন।

ঠাকুর প্রকৃতিস্থ হইয়াছেন। মণি কাছে বসিয়া আছেন, তাঁহাকে একান্তে বলিতেছেন – “দেখ, অখণ্ডে মন লীন হয়ে গিছিল! তারপর দেখলাম – সে অনেক কথা। ডাক্তারকে দেখলাম, ওর হবে – কিছুদিন পরে; – আর বেশি ওকে বলতে টলতে হবে না। আর-একজনকে দেখলাম। মন থেকে উঠল ‘তাকেও নাও’। তার কথা পরে তোমাকে বলব।

[সংসারী জীবকে নানা উপদেশ ]

শ্রীযুক্ত শ্যাম বসু ও দোকড়ি ডাক্তার ও আরও দু-একটি লোক আসিয়াছেন। এইবার তাঁহাদের সহিত কথা কহিতেছেন।

শ্যাম বসু – আহা, সেদিন সেই কথাটি যা বলেছিলেন, কি চমৎকার।

শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে) – কি কথাটি গা?

শ্যাম বসু – সেই যে বললেন, জ্ঞান-অজ্ঞানের পারে গেলে কি থাকে।

শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে) – বিজ্ঞান। নানা জ্ঞানের নাম অজ্ঞান। সর্বভূতে ঈশ্বর আছেন, এর নাম জ্ঞান। বিশেষরূপে জানার নাম বিজ্ঞান। ঈশ্বরের সহিত আলাপ, তাতে আত্মীয়বোধ, এর নাম বিজ্ঞান।

“কাঠে আগুন আছে, অগ্নিতত্ত্ব আছে; এর নাম জ্ঞান। সেই কাঠ জ্বালিয়ে ভাত রেঁধে খাওয়া ও খেয়ে হৃষ্টপুষ্ট হওয়ার নাম বিজ্ঞান।”

শ্যাম বসু (সহাস্যে) – আর সেই কাঁটার কথা!

শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে) – হাঁ, যেমন পায়ে কাঁটা ফুটলে আর-একটি কাঁটা আহরণ করতে হয়; তারপর পায়ের কাঁটাটি তুলে দুটি কাঁটা ফেলে দেয়। তেমনি অজ্ঞানকাঁটা তুলবার জন্য জ্ঞানকাঁটা জোগাড় করতে হয়। অজ্ঞান নাশের পর জ্ঞান-অজ্ঞান দুই-ই ফেলে দিতে হয়। তখন বিজ্ঞান।

ঠাকুর শ্যাম বসুর উপর প্রসন্ন হইয়াছেন। শ্যাম বসুর বয়স হইয়াছে, এখন ইচ্ছা – কিছুদিন ঈশ্বরচিন্তা করেন। পরমহংসদেবের নাম শুনিয়া এখানে আসিয়াছেন। ইতিপূর্বে আর একদিন আসিয়াছিলেন।

শ্রীরামকৃষ্ণ (শ্যাম বসুর প্রতি) – বিষয়ের কথা একবারে ছেড়ে দেবে। ঈশ্বরীয় কথা বই অন্য কোনও কথা বলো না। বিষয়ী লোক দেখলে আসতে আসতে সরে যাবে। এতদিন সংসার করে তো দেখলে সব ফক্কিবাজি! ঈশ্বরই বস্তু আর সব অবস্তু। ঈশ্বরই সত্য, আর সব দুদিনের জন্য। সংসারে আছে কি? আমড়ার অম্বল; খেতে ইচ্ছা হয়, কিন্তু আমড়াতে আছে কি? আঁটি আর চামড়া খেলে অম্লশূল হয়।

শ্যাম বসু – আজ্ঞা হাঁ; যা বলছেন সবই সত্য।

শ্রীরামকৃষ্ণ – অনেকদিন ধরে অনেক বিষয়কর্ম করেছ, এখন গোলমালে ধ্যান ঈশ্বরচিন্তা হবে না। একটু নির্জন দরকার। নির্জন না হলে মন স্থির হবে না। তাই বাড়ি থেকে আধপো অন্তরে ধ্যানের জায়গা করতে হয়।

শ্যামবাবু একটু চুপ করিয়া রহিলেন, যেন কি চিন্তা করিতেছেন।

শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে) – আর দেখ, দাঁতও সব পড়ে গেছে, আর দুর্গাপূজা কেন? (সকলের হাস্য) একজন বলেছিল, আর দুর্গাপূজা কর না কেন? সে ব্যক্তি উত্তর দিলে, আর দাঁত নাই ভাই। পাঁঠা খাবার শক্তি গেছে।

শ্যাম বসু – আহা, চিনিমাখা কথা!

শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে) – এই সংসারে বলি আর চিনি মিশেল আছে। পিঁপড়ের মতো বালি ত্যাগ করে করে চিনিটুকু নিতে হয়। যে চিনিটুকু নিতে পারে সেই চতুর। তাঁর চিন্তা করবার জন্য একটু নির্জন স্থান কর। ধ্যানের স্থান। তুমি একবার কর না। আমিও একবার যাব।

সকলে কিয়ৎকাল চুপ করিয়া আছেন।

শ্যাম বসু – মহাশয়, জন্মান্তর কি আছে? আবার জন্মাতে হবে?

শ্রীরামকৃষ্ণ – ঈশ্বরকে বল, আন্তরিক ডাক; তিনি জানিয়ে দেন, দেবেন। যদু মল্লিকের সঙ্গে আলাপ কর, যদু মল্লিকই বলে দেবে, তার কখানা বাড়ি, কত টাকার কোম্পানির কাগজ। আগে সে-সব জানবার চেষ্টা করা ঠিক নয়। আগে ঈশ্বরকে লাভ কর, তারপর যা ইচ্ছা, তিনিই জানিয়ে দেবেন।

শ্যাম বসু – মহাশয়, মানুষ সংসারে থেকে কত অন্যায় করে, পাপকর্ম করে। সে মানুষ কি ঈশ্বরকে লাভ করতে পারে?

শ্রীরামকৃষ্ণ – দেহত্যাগের আগে যদি কেউ ঈশ্বরের সাধন করে, আর সাধন করতে করতে ঈশ্বরকে ডাকতে ডাকতে, যদি দেহত্যাগ হয়, তাকে আর পাপ কখন স্পর্শ করবে? হাতির স্বভাব বটে, নাইয়ে দেওয়ার পরেও আবার ধুলো-কাদা মাখে; কিন্তু মাহুত নাইয়ে দিয়ে যদি আস্তাবলে তাকে ঢুকিয়ে দিতে পারে, তাহলে আর ধুলো-কাদা মাখতে পায় না।

ঠাকুরের কঠিন পীড়া! ভক্তেরা অবাক্‌, অহেতুক-কৃপাসিন্ধু দয়াল ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ জীবের দুঃখে কাতর; অহর্নিশ জীবের মঙ্গলচিন্তা করিতেছেন। শ্যাম বসুকে সাহস দিতেছেন – অভয় দিতেছেন; “ঈশ্বরকে ডাকতে ডাকতে যদি দেহত্যগ হয়, আর পাপ স্পর্শ করবে না।”

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!