১৮৮৬, ১২ই এপ্রিল
কাশীপুর বাগানে ভক্তসঙ্গে
শ্রীরামকৃষ্ণ কাশীপুরের বাগানে সেই উপরের ঘরে শয্যার উপর বসিয়া আছেন। ঘরে শশী ও মণি। ঠাকুর মণিকে ইশারা করিতেছেন – পাখা করিতে। তিনি পাখা করিতেছেন।
বৈকাল বেলা ৫টা-৬টা। সোমবার চড়কসংক্রান্তি, বাসন্তী মহাষ্টমী পূজা। চৈত্র শুক্লাষ্টমী, ৩১শে চৈত্র, ১২ই এপ্রিল, ১৮৮৬।
পাড়াতেই চড়ক হইতেছে। ঠাকুর একজন ভক্তকে চড়কের কিছু কিছু জিনিস কিনিতে পাঠাইয়াছিলেন। ভক্তটি ফিরিয়া আসিয়াছেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ – কি কি আনলি?
ভক্ত – বাতাসা একপয়সা, বঁটি – দুপয়সা, হাতা – দুপয়সা।
শ্রীরামকৃষ্ণ – ছুরি কই?
ভক্ত – দুপয়সায় দিলে না।
শ্রীরামকৃষ্ণ (ব্যাগ্র হইয়া) – যা যা, ছুরি আন। মাস্টার নিচে বেড়াইতেছেন। নরেন্দ্র ও তারক কলিকাতা হইতে ফিরিলেন। গিরিশ ঘোষের বাড়ি ও অন্যান্য স্থানে গিয়াছিলেন।
তারক – আজ আমরা মাংস-টাংস অনেক খেলুম।
নরেন্দ্র – আজ মন অনেকটা নেমে গেছে। তপস্যা লাগাও।
(মাস্টারের প্রতি) – “কি Slavery (দাসত্ব) of body, – of mind! (শরীরের দাসত্ব – মনের দাসত্ব!) ঠিক যেন মুটের অবস্থা! শরীর-মন যেন আমার নয়, আর কারু।”
সন্ধ্যা হইয়াছে; উপরের ঘরে ও অন্যান্য স্থানে আলো জ্বালা হইল। ঠাকুর বিছানায় উত্তরাস্য হইয়া বসিয়া আছেন; জগন্মাতার চিন্তা করিতেছেন। কিয়ৎক্ষণ পরে ফকির ঠাকুরের সম্মুখে অপরাধভঞ্জন স্তব পাঠ করিতেছেন। ফকির বলরামের পুরোহিতবংশীয়।
প্রাগ্দেহস্থো যদাসং তব চরণযুগং নাশ্রিতো নার্চিতোঽহং,
তেনাদ্যেঽকীর্তিবর্গৈর্জঠরজদহনৈর্বধ্যমানো বলিষ্ঠৈঃ,
স্থিত্বা জন্মান্তরে নো পুনরিহ ভবিতা ক্বাশ্রয়ঃ ক্বাপি সেবা,
ক্ষন্তব্যে মেঽপরাধঃ প্রকটিতবদনে কামরূপে করালে! ইত্যদি।
ঘরে শশী, মণি, আরও দু-একটি ভক্ত আছেন।
স্তবপাঠ সমাপ্ত হইল। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ অতি ভক্তিভাবে হাতজোড় করিয়া নমস্কার করিতেছেন। মণি পাখা করিতেছেন। ঠাকুর ঈশারা করিয়া তাঁহাকে বলিতেছেন “একটি পাথরবাটি আনবে। (এই বলিয়া পাথরবাটির গঠন অঙ্গুলি দিয়া আঁকিয়া দেখাইলেন।) একপো, অত দুধ ধরবে? সাদা পাথর।”
মণি – আজ্ঞা হাঁ।
শ্রীরামকৃষ্ণ – আর সব বাটিতে ঝোল খেতে আঁষটে লাগে।