ভবঘুরেকথা
শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব

১৮৮৬, ২২শে এপ্রিল

শ্রীরামকৃষ্ণ কেন কামিনী-কাঞ্চন ত্যাগ করেছেন?
ঠাকুর মাস্টারের সহিত কথা কহিতেছেন। ‘কামিনী’ সম্বন্ধে আপনার অবস্থা বলিতেছেন!

শ্রীরামকৃষ্ণ (মাস্টারের প্রতি) – এরা কামিনী-কাঞ্চন না হলে চলে না, বলছে। আমার যে কি অবস্থা তা জানে না।

“মেয়েদের গায়ে হাত লাগলে হাত আড়ষ্ট, ঝনঝন করে।

“যদি আত্মীয়তা করে কাছে গিয়ে কথা কইতে যাই, মাঝে যেন কি একটা আড়াল থাকে, সে আড়ালের ওদিকে যাবার জো নাই।

“ঘরে একলা বসে আছি, এমন সময় যদি কোন মেয়ে এসে পড়ে, তাহলে একেবারে বালকের অবস্থা হয়ে যাবে; আর সেই মেয়েকে মা বলে জ্ঞান হবে।”

মাস্টার অবাক্‌ হইয়া ঠাকুরের বিছানার কাছে বসিয়া এই সকল কথা শুনিতছেন। বিছানা হইতে একটু দূরে ভবনাথের সহিত নরেন্দ্র কথা কহিতেছেন। ভবনাথ বিবাহ করিয়াছেন; – কর্ম কাজের চেষ্টা করিতেছেন। কাশীপুরের বাগানে ঠাকুরকে দেখিতে আসিতে বেশি পারেন না। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ভবনাথের জন্য বড় চিন্তিত থাকেন, কেন না ভবনাথ সংসারে পড়িয়াছেন। ভবনাথের বয়স ২৩।২৪ হইবে।

শ্রীরামকৃষ্ণ (নরেন্দ্রের প্রতি) – ওকে খুব সাহস দে।

নরেন্দ্র ও ভবনাথ ঠাকুরের দিকে তাকাইয়া একটু হাসিতে লাগিলেন। ঠাকুর ইশারা করিয়া আবার ভবনাথকে বলিতেছেন – “খুব বীরপুরুষ হবি। ঘোমটা দিয়ে কান্নাতে ভুলোসনে। শিকনি ফেলতে ফেলতে কান্না! (নরেন্দ্র ও মাস্টারের হাস্য)

“ভগবানেতে মন ঠিক রাখবি; যে বীরপুরুষ সে রমণীর সঙ্গে থাকে, না করে রমণ! পরিবারের সঙ্গে কেবল ঈশ্বরীয় কথা কবি।”

কিয়ৎক্ষণ পরে ঠাকুর আবার ইশারা করিয়া ভবনাথকে বলিতেছেন, “আজ এখানে খাস।”

ভবনাথ – জে আজ্ঞা। আমি বেশ আছি।

সুরেন্দ্র আসিয়া বসিয়াছেন। বৈশাখ মাস। ভক্তেরা ঠাকুরকে সন্ধ্যার পর প্রত্যহ মালা আনিয়া দেন। সেই মালাগুলি ঠাকুর এক-একটি করিয়া গলায় ধারণ করেন। সুরেন্দ্র নিঃশব্দে বসিয়া আছেন। ঠাকুর প্রসন্ন হইয়া তাঁহাকে দুইগাছি মালা দিলেন। সুরেন্দ্রও ঠাকুরকে প্রণাম করিয়া সেই মালা মস্তকে ধারণ করিয়া গলায় পরিলেন।

সকলেই চুপ করিয়া বসিয়া আছেন ও ঠাকুরকে দেখিতেছেন। এইবার সুরেন্দ্র ঠাকুরকে প্রণাম করিয়া দণ্ডায়মান হইলেন; তিনি বিদায় গ্রহণ করিবেন। যাইবার সময় ভবনাথকে ডাকিয়া বলিলেন, খসখসের পর্দা টাঙিয়ে দিও। বড় গ্রীষ্ম পড়িয়াছে। ঠাকুরের উপরের হলঘর দিনের বেলায় বড় গরম হয়। তাই সুরেন্দ্র খসখসের পর্দা করিয়া আনিয়াছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!