ভবঘুরেকথা
শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব

১৮৮৫, ২৪শে এপ্রিল
শ্রীরামকৃষ্ণ ও নরেন্দ্র – হাজরার কথা – ছলরূপী নারায়ণ
ঠাকুর, ভাব উপশমের পর ভক্তসঙ্গে কথা কহিতেছেন।

নরেন্দ্র (শ্রীরামকৃষ্ণের প্রতি) – হাজরা এখন ভাল হয়েছে।

শ্রীরামকৃষ্ণ – তুই জানিস নি, এমন লোক আছে, বগলে ইট, মুখে রাম রাম বলে।

নরেন্দ্র – আজ্ঞা না, সব জিজ্ঞাসা করলুম, তা সে বলে, ‘না’।

শ্রীরামকৃষ্ণ – তার নিষ্ঠা আছে, একটু জপটপ করে। কিন্তু অমন! – গাড়োয়ানকে ভাড়া দেয় না!

নরেন্দ্র – আজ্ঞা না, সে বলে তো ‘দিয়েছি’ –

শ্রীরামকৃষ্ণ – কোথা থেকে দেবে?

নরেন্দ্র – রামলাল টামলালের কাছ থেকে দিয়েছে, বোধ হয়।

শ্রীরামকৃষ্ণ – তুই সব কথা জিজ্ঞাসা কি করেছিস?

“মাকে প্রার্থনা করেছিলাম, মা, হাজরা যদি ছল হয়, এখান থেকে সরিয়ে দাও। ওকে সেই কথা বলেছিলাম। ও কিছুদিন পরে এসে বলে, দেখলে আমি এখনও রয়েছি। (ঠাকুরের ও সকলের হাস্য) কিন্তু তারপরে চলে গেল।

“হাজরার মা রামলালকে দিয়ে বলে পাঠিয়েছিল, ‘হাজরাকে একবার রামলালের খুড়োমশায় যেন পাঠিয়ে দেন। আমি কেঁদে কেঁদে চোখে দেখতে পাই না।’ আমি হাজরাকে অনেক করে বললুম, বুড়ো মা, একবার দেখা দিয়ে এস; তা কোন মতে গেল না। তার মা শেষে কেঁদে কেঁদে মরে গেল।”

নরেন্দ্র – এবারে দেশে যাবে।

শ্রীরামকৃষ্ণ – এখন দেশে যাবে, ঢ্যামনা শালা! দূর দূর, তুই বুঝিস না। গোপাল বলেছে, সিঁথিতে হাজরা কদিন ছিল। তারা চাল ঘি সব জিনিস দিত। তা বলেছিল, এ ঘি এ চাল কি আমি খাই? ভাটপাড়ায় ঈশেনের সঙ্গে গিছল। ঈশেনকে নাকি বলেছে, বাহ্যে যাবার জল আনতে। এই বামুনরা সব রেগে গিছল।

নরেন্দ্র – জিজ্ঞাসা করেছিলুম, তা সে বলে, ঈশানবাবু এগিয়ে দিতে গিছল। আর ভাটপাড়ায় অনেক বামুনের কাছে মানও হয়েছিল!

শ্রীরামকৃষ্ণ (হাসিতে হাসিতে) – ওইটুকু জপতপের ফল।

“আর কি জানো, অনেকটা লক্ষণে হয়। বেঁটে, ডোব কাটা কাটা গা, ভাল লক্ষণ নয়। অনেক দেরিতে জ্ঞান হয়।”

ভবনাথ – থাক্‌ থাক্‌ – ও-সব কথায়।

শ্রীরামকৃষ্ণ – তা নয়। (নরেন্দ্রের প্রতি) – তুই নাকি লোক চিনিস, তাই তোকে বলছি। আমি হাজরাকে ও সকলকে কিরকম জানি, জানিস? আমি জানি, যেমন সাধুরূপী নারায়ণ, তেমনি ছলরূপী নারায়ণ, লুচ্চরূপী নারায়ণ! (মহিমাচরণের প্রতি) – কি বল গো? সকলই নারায়ণ।

মহিমাচরণ – আজ্ঞা, সবই নারায়ণ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!