শ্রীরামকৃষ্ণ, নরেন্দ্র, কেশব সেন ও সাকারপূজা
[ঈশ্বর সাকার না নিরাকার ]
একদিন কেশবচন্দ্র সেন শিষ্যবৃন্দ লইয়া দক্ষিণেশ্বর-কালীবাড়িতে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণকে দর্শন করিতে গিয়াছিলেন। কেশবের সঙ্গে নিরাকার সম্বন্ধে অনেক কথা হইত। পরমহংসদেব তাঁহাকে বলিতেন, ‘আমি মাটির বা পাথরের কালী মনে করি না। চিন্ময়ী কালী। যিনি ব্রহ্ম তিনি কালী। যখন নিষ্ক্রিয়, তখন ‘ব্রহ্ম’; যখন সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয় করেন, তখন কালী, অর্থাৎ যিনি কালের সঙ্গে রমণ করেন। কাল অর্থাৎ ব্রহ্ম। তাঁহাদের নিম্নলিখিত কথাবার্তা একদিন হইতেছিল –
শ্রীরামকৃষ্ণ (কেশবের প্রতি) – কিরকম জানো? যেন সচ্চিদানন্দসমুদ্র – কূলকিনারা নাই। ভক্তিহিমে এই সমুদ্রের স্থানে স্থানে জল বরফ হয়ে যায়; স্থানে স্থানে যেন জল বরফ আকারে জমাট বাঁধে; অর্থাৎ ভক্তের কাছে তিনি সাক্ষাৎ হয়ে কখন কখন সাকাররূপ হয়ে দেখা দেন। আবার ব্রহ্ম-জ্ঞান-সূর্য উঠলে সে বরফ গলে যায় – অর্থাৎ ‘ব্রহ্ম সত্য জগৎ মিথ্যা’ এই বিচারের পর সমাধি হলে রূপ-টুপ সব উড়ে যায়। তখন কি তিনি, মুখে বলা যায় না – মন বুদ্ধি অহংতত্ত্ব দ্বারা তাঁকে ধরা যায় না।
“যে লোক একটা ঠিক জানে, সে আর একটাও জানতে পারে। যে নিরাকার জানতে পারে, সে সাকারও জানতে পারে। সে পাড়াতেও গেলে না – কোন্টা শ্যামপুকুর, কোন্টা তেলিপাড়া, জানবে কেমন করে!”
সকলে নিরাকার পূজার অধিকারী নয়, তাই সাকার পূজার বিশেষ প্রয়োজন, এ-কথাও পরমহংসদেব বুঝাইতেছেন। তিনি বলিলেন –
“এক মার পাঁচ ছেলে। মা মাছের নানারকম আয়োজন করেছেন, যার যা পেটে সয়। কারু জন্য মাছের পোলাও করেছেন। যার পেটের অসুখ তার জন্য মাছের ঝোল করেছেন। যেটা যার পেটে সয়।”
এ দেশে সাকার পূজা হয়। খ্রীষ্টান মিশনারীরা আমেরিকা ও ইওরোপে এদেশবাসীকে অসভ্য জাতি বলিয়া বর্ণনা করেন। তাঁহারা বলেন যে, ভারতবাসীরা পুতুল পূজা করেন – ও তাঁহাদের অবস্থা বড় শোচনীয়।
স্বামী বিবেকানন্দ এই সাকার পূজার অর্থ আমেরিকায় প্রথমেই বুঝাইলেন; বলিলেন, ভারতবর্ষে পুতুল পূজা হয় না।
“At the very outset I may tell you there is no polytheism in India. In every temple, if one stands by and listens, he will find the worshippers applying the attributes of God to these images.”
- Lecture on Hinduism (Chicago).
ঈশ্বরকে ভাবিতে গেলেই সাকার চিন্তা বই আর কিছু আসিতে পারে না, এ-কথা মনোবিজ্ঞান (Psychology) সাহায্যে স্বামী বুঝাইতে লাগিলেন। তিনি বলিলেন –
“Why does a Christian go to Church? Why is the Cross holy? Why is the face turned towards the sky in prayers? Why are there so many images in the Catholic Church? Why are there so many images in the minds of the Protestants when they pray? My brethren, we can no more think about anything without a material image than we can live without breathing. Omnipresence to almost the whole world means nothing. Has God superficial area? If not, then when we repeat the word we think of the extended earth; that is all.”
- Lecture on Hinduism (Chicago).
স্বামীজী আরও বলিলেন, “অধিকারীভেদে সাকার পূজা ও নিরাকার পূজা। সাকার পূজা কুসংস্কার নহে – মিথ্যা নহে, নিম্ন স্থানীয় সত্য।
“If a man can realise his divine nature most easily with the help of an image, would it be right to call it a sin? Nor even when he has passed that stage, should he call it an error? To the Hindu, man is not travelling from error to truth but lower to higher truth.”
স্বামীজী বলিলেন, সকলের পক্ষে এক নিয়ম হইতে পারে না। ঈশ্বর এক; কিন্তু তিনি নানা ভক্তের নিকট নানাভাবে প্রকাশ হইতেছেন। হিন্দু এইটি বুঝেন।
“Unity in variety is the plan of nature and the Hindu has recognised it. Other religions lay down certain fixed dogmas and try to force society to adopt them; they place before society one kind of coat which must fit Jack and John and Henry, all alike. If it does not fit John or Henry, he must go without a coat to cover his body. The Hindus have discovered that the Absolute can be realised, thought of or stated, only through the Relative.”