গৌরাঙ্গপ্রেমে মাতোয়ারা ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ
অভিনয় সমাপ্ত হইল। ঠাকুর গাড়িতে উঠিতেছেন। একজন ভক্ত জিজ্ঞাসা করিলেন কেমন দেখলেন? ঠাকুর হাসিতে হাসিতে বলিলেন, “আসল নকল এক দেখলাম।”
গাড়ি মহেন্দ্র মুখুজ্জের কলে যাইতেছে। হঠাৎ ঠাকুর ভাবাবিষ্ট হইলেন। কিয়ৎক্ষণ পরে প্রেমভরে আপনা-আপনি বলিতেছেন, –
“হা কৃষ্ণ! হে কৃষ্ণ! জ্ঞান কৃষ্ণ! প্রাণ কৃষ্ণ! মন কৃষ্ণ! আত্মা কৃষ্ণ! দেহ কৃষ্ণ!” আবার বলিতেছেন, “প্রাণ হে গোবিন্দ, মম জীবন!”
গাড়ি মুখুজ্জেদের কলে পৌঁছিল। অনেক যত্ন করিয়া মহেন্দ্র ঠাকুরকে খাওয়াইলেন। মণি কাছে বসিয়া। ঠাকুর সস্নেহে তাঁহাকে বলিতেছেন, তুমি কিছু খাও না। হাতে করিয়া মেঠাই প্রসাদ দিলেন।
এইবার শ্রীরামকৃষ্ণ দক্ষিণেশ্বর-কালীবাড়িতে যাইতেছেন। গাড়িতে মহেন্দ্র মুখুজ্জে আরও দু-তিনটি ভক্ত। মহেন্দ্র খানিকটা এগিয়ে দেবেন। ঠাকুর আনন্দে যাইতেছেনও গান আরম্ভ করিলেন।
গৌর নিতাই তোমরা দু ভাই।
মণি সঙ্গে সঙ্গে গাইতেছেন।
মহেন্দ্র তীর্থে যাইবেন। ঠাকুরের সহিত সেই সব কথা কহিতেছেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ (মহেন্দ্রের প্রতি, সহাস্যে) – প্রেমের অঙ্কুর না হতে হতে সব শুকিয়ে যাবে।
“কিন্তু শীঘ্র এস। আহা অনেকদিন থেকে তোমার বাড়িতে যাব মনে করেছিলাম, তা একবার দেখা হল বেশ হল।”
মহেন্দ্র – আজ্ঞা, জীবন সার্থক হল!
শ্রীরামকৃষ্ণ – সার্থক তো আছেনই। আপনার বাপও বেশ! সেদিন দেখলাম; অধ্যাত্মে বিশ্বাস।
মহেন্দ্র – আজ্ঞা, কৃপা রাখবেন যেন ভক্তি হয়।
শ্রীরামকৃষ্ণ – তুমি খুব উদার সরল। উদার সরল না হলে ভগবানকে পাওয়া যায় না। কপটতা থেকে অনেক দূর।
মহেন্দ্র শ্যামবাজারের কাছে বিদায় লইলেন। গাড়ি চলিতেছে।
শ্রীরামকৃষ্ণ (মাস্টারের প্রতি) – যদু মল্লিক কি করলে?
মাস্টার (স্বগত) – ঠাকুর সকলের মঙ্গলের জন্য ভাবিতেছেন। চৈতন্যদেবের ন্যায় ইনিও কি ভক্তি শিখাইতে দেহধারণ করিয়াছেন?
-১৮৮৪, ২১শে সেপ্টেম্বর-
……………..
রামকৃষ্ণ কথামৃত : ষড়বিংশ অধ্যায় : অষ্টম পরিচ্ছেদ
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….