১ লাখ ৪০ হাজার ১২ কিমি? বাড়ির কাছের কথা নারে ভাই… এসব ভাবতে ভাবতেই দেখি সালেহ ভাই টমটম থামিয়ে একে ওকে জিজ্ঞেস করছেন রামনাথের বাড়িটা কোন দিকে। তারমানে তিনিও ঠিক জানেন না রামনাথের বাড়ি কোথায়? গুড… ভেরি গুড ম্যান… অবশেষে বিদ্যাভূষণ পাড়ার নির্জন সুন্দর এক মেঠোপথ পেরিয়ে আমরা একটি প্রাচীন স্থাপত্যের সামনে এসে দাঁড়ালাম। বেশি বড় নয় একটি ছোট ইটের বর্গাকৃতির ঘর। তবে ঘরটি বেশ অভিজাত ছিল তা এখনো বোঝা যায়। এখন ঘরটির ভগ্নদশা। দেয়ালে হাত ছুঁয়ে যখন একটি উপলদ্ধি করার চেষ্টা করছিলাম আমি স্বপ্ন দেখছি নাকি বাস্তবে আছি ঠিক সে সময় ছোটখাটো এক বেশ সুঠামদেহী লোক রে রে করে এসে উপস্থিত। আমরা কেন অনুমতি না নিয়ে ছবি তুলছি তার কারণ তিনি জানতে চান। রাগে তিনি থরথর করে কাপছেন। আমরা আমাদের পরিচয় দেয়ার পরও তিনি থামতে চাইছেন না। সাহেল ভাই তার পরিচয় দিয়ে কিছুটা শান্ত করলো ভদ্রলোককে। তারপর আমাদের বেশ খাতির করলো ভদ্রলোক কিন্তু তিনি একটি কথা ভাবতে নারাজ। সেটি হলো এটি রামনাথের বাড়ি তা তিনি মানবেন না। কারণ এটি নাকি তার পরিবার কিনেছেন। তার কাছে পাকা দলিল আছে। আমাদের পরোক্ষভাবে বোঝারার কসরত ছাড়লেন না যে তিনি বেশ ক্ষমতা রাখেন। আমরা দুই পয়সার ভ্রমণকারী তার কিচ্ছুটি করতে পারবো না। রামনাথের ঘরটি তিনি এখন ব্যবহার করেন না। পাশেই পাকা বাড়ি বানিয়েছেন। রামনাথের ঘরটিতে এখন গরু থাকে। কৃষি যন্ত্রাংশের ভগ্নাংশ থাকে এই ঘরে। হ্যায় রামনাথ তোমার ঘরে আজ গরুর বাস। এটিও দেখতে হলো আমাদের। ঘরটি এখনো যা আছে তাতে তা সংরক্ষণ করা সম্ভব। অবশ্যই সম্ভব। কিন্তু কে করবে? কারা কাঁধে তুলে নেবে এই দায়িত্ব। এতো চমৎকার এই স্থাপত্যটি হয়তো কিছুদিনের মধ্যে ভেঙ্গে ফেলা হবে। দখলকারী ভদ্রলোক হয়তো এখানে একটি নতুন ভবন বানাবেন। কে জানে। আমরাদের তো ভাই হাতে সময় নেই… আমরা এখন যাবো লক্ষ্মীবাউর সোয়াম্প ফরেস্ট দেখতে। সেখান থেকে হাওর পারি দিয়ে বিথঙ্গল আখড়া। কত্তো কাজ আমাদের। আমাদের কি আর সময় হবে রামনাথের দখল হয়ে যাওয়া ভিটা উদ্ধারের কাজে নেমে পরবার।
রামনাথের বাড়ি থেকেই একটা সাইকেল জার্নি শুরু হতে পারে না প্রতি মাসে বা বছরে? একটা ম্যারাথন… নিদেন পক্ষে ভ্রমণকারীরা বছরে একদিন আসতে মিলিত হতে পারে না রামনাথের ভিটায়? ছোট্ট ছোট্ট দল গুটি গুটি পায়ে এসে উপস্থিত হতে পারে না রামনাথের ঘরের সামনে।
ধিক্ ধিক এই আধুনিক নগর জীবনের যেখানে আমাদেরকে পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। এখন আমরা বড়জোর রামনাথের বাড়িকে পেছনে রেখে সেলফি তুলতে পারি। তারপর সেটা ফেসবুকে আপ দিয়ে লাইকের অপেক্ষায় প্রহর গুনতে পারি। কিন্তু পারি কি এই ভূ-পর্যটককে তার যোগ্য সম্মান দিতে। এই যে দেশে এতো ভ্রমণ দল হয়েছে। এতো ভ্রমণ ক্লাব, সাইকিলিস্ট হয়েছে দেশে… তারা কি পারে না। রামনাথের বাড়ি থেকেই একটা সাইকেল জার্নি শুরু হতে পারে না প্রতি মাসে বা বছরে? একটা ম্যারাথন… নিদেন পক্ষে ভ্রমণকারীরা বছরে একদিন আসতে মিলিত হতে পারে না রামনাথের ভিটায়? ছোট্ট ছোট্ট দল গুটি গুটি পায়ে এসে উপস্থিত হতে পারে না রামনাথের ঘরের সামনে। সকলে মিলে মানুষকে বোঝাতে পারবে না এ ঘর খানা গরু পালার জায়গা নয়। এটি ভ্রমণপিয়াসীদের তীর্থ।
এমন করে ভাবছি কেন… হয়তো এক কোন এক পুর্ণমা রাতে ঠিক ঠিকই সাইকিলিস্টরা এসে উপস্থিত হবে রামনাথের ভিটায়। খবির সাহের রে রে করে এসে থমকে যাবে। এত্তোগুলো সাইকিলিস্ট এসেছে তার বাড়িতে এই ভাঙা ঘর ছুয়ে সাইকেল যাত্রা শুরু করতে? চাঁদের আলোয় ভুয়া দলিল করে দখলকারী খবির সাহেবও হয়তো বিভ্রান্ত হয়ে উঠবেন। এই ঘরে যে থাকতো তার প্রতি এতো ভালাবাসা দেখে তিনিও হয়তো বিগলিত হযে বলবেন এই ঘরটি তিনিই ধ্বংসযজ্ঞ থেকে রক্ষা করবেন। পর্যটকদের তীর্থ বানিয়ে দেবেন। যে বিশাল জমি পাঁচ পাঁচটি পুকুর তিনি দখল করে রেখেছেন তাও দিয়ে দেবেন এই তীর্থ রক্ষার্থে। কোনো এক মধ্যরাতে দেশের সকল সাইকিলিস্ট উপস্থিত হলে এমনটি হতেই পারে। ডাকু রত্নাকরও বাল্মিকি হয়েছিলেন। খাবির সাহেব কেনো দাতা খবির হবেন না। কিন্তু আমাদের সাইকিলিস্টরা কি পারবে এক পূর্ণিমায় উপস্থিত হতে রামনাথের ভিটায়। হয়তো একবারে হবে না কিন্তু শুরু হলে বাকিটা হবেই। হতেই হবে। এই আমার দেশ। আমার স্বদেশ। আমাদের ইচ্ছা শক্তির বলেই এদেশ থেকে ইংরেজ গেছে, পাকিস্তানিরা গেছে দখলদারেরাও যাবে। অবশ্যই যাবে।