গঙ্গায় বাহিয়া সুখে যত কর্ণধরি।
দক্ষিণে চলে শ্রীগৌর নগর।।
জাহ্নাবী বাহিয়া সুখে কর্ণধারগণ।
কালিঘাটে আসি সাধু দিল দরশন।।
সিদ্ধপীঠ কালীঘঅট অখণ্ড নগরী।
কৈলাশ ছাড়িয়া যথা রহিল শঙ্করী।
তথায় করিয়া পূজা দেবী ভগবতী।
রন্ধন ভোজন করি চলে শীঘ্রগতি।
দিবারাত্রি বাহে তরী কর্ণধারগণ।
উপস্থিত সদাগর দক্ষিণ পাটন।।
তথায় আছেন রাজা জগৎ বিখ্যাত।
তাহার শহরে সাধু হইল উপস্থিত।
দুমদুমি বাজনা বাজে ডিঙ্গার উপর।
শুনিয়া চিন্তিত বড় হৈল নৃপবর।।
রাজা বলে পাত্র-মিত্র শুন দিয়া মন।
দক্ষিণ বাজারে শুনি কিসের বাজন।।
পাত্র-মিত্র বলে রাজা স্থির কর মতি।
বাণিজ্য করিতে এল সাধু নরপতি।
সুলভ সকল বস্তু তোমার ভুবনে।
সে কারণে সদাগর আইল এ স্থানে।
শুনিয়া পাত্রের বাক্য স্থির চিত্র করি।
আনন্দে রহিল রাজা আপনার পুরী।
সাধুর কথা, শুন হেথা, করি নিবেদন।
ডিঙ্গা হতে অবনীতে উঠাইল ধন।।
জবরদস্ত, সকল বস্তু, খরিদ করিয়া তথা।
রহিল আনন্দে, ত্যাজি সেন্দ, শ্বশুর জামাতা।
অনু-দিন নারায়ণ, কুপিত অন্তরে।
ধরিয়া শেষে, গণক বেশ, কহিল রাজারে।।
সভামাঝে, মহারাজ, করি নিবেদন।
সদাগররূপে চোর, তোমার ভুবন।
দিবসে আসি, বাজারে বসি, করে বিকিকিনি।
করি চুরি যায় ভারি, হইলে যামিনী।।
এতেক কহিয়া, ক্ষণেক রহিয়া, চোর রূপ ধরি।
নৃপ জায়ার, গলার হার, করিলেন চুরি।।
কপট করিয়া, বেশ ধরিয়া, বলিল সাধুরে।
পেয়ে তুল্য, উচিত মূল্য, দিল সদাগরে।।
লয়ে হার, সদাগর, ধরিল তখন।
বলে রাজা, কর সাজা, শ্বশুর জামাতা।।
জানি অদ্য, হইল সত্য, গণকের কথা।।
ধরি স্কন্ধ, কর বন্ধ, রাখ সদাগরে।
যত বিত্ত, নিছে নিত্য, আনহ ভাণ্ডারে।।
রাজঘরে, কারাগারে, বন্দি দুইজন।
সাধুর-আলয়, যতেক প্রলয়, করি নিবেদন।।
স্বর্গময় নিজালয় হইল ভস্মরাশি।
সব ধন, দস্যুগণ, নিয়া গেল নিশি।
দুহিতা সহিত, সাধুর বনিতা, থাকে ঘর বসি।
হইয়ে সধবা নিত্য বিধবা, করে একাদশী।
এক দিবা, সত্য সেবা, করে দ্বিজমণি।
উপনীতা হইল তথা সাধুর নন্দিনী।
সাধু-সূতা, কহে কথা, শুন দ্বিজগণ।
কত সত্য, কিবা অদ্য, করহ পূজন।।
দ্বিজ শ্রেষ্ঠ, হয়ে তুষ্ট, কহিল তাহারে।
নারায়ণ, ভগবান, সত্য অবতারে।।
মহাসমৃদ্ধি, মানসসিদ্ধি, দু:খ বিমোচন।
অতএব, এই দেব, করিহে পূজন।।
দ্বিজের বাণী, শুনিয়া ধ্বনি, হৃষ্ট বড় হইল।
একমনে, সেই স্থানে, মানস করিল।।
প্রসাদ নিয়া, সাধু তনয়া, আসি, নিজ ঘরে।
সকল কথা কহিল তথা, জননীর তরে।।