কঙ্কালে সাধনা
হরিচাঁদ গুরুচাঁদ করিয়া স্মরণ।
ঘটনা প্রবাহ এক করিব বর্নণ।।
সাধনা ভাই সব কোলা গ্রামে ছিল।
সবে মিলে ভিটা ছেড়ে জয়পুরে এল।।
পশ্চিম পাড়ায় এসে বসত করিত।
ভ্রাতৃ অন্নে একসনে সাধনা থাকিত।।
শ্রীতারক যখনেতে ত্যাজিল জীবন।
কি যেন কি হয়ে গেল সাধনার মন।।
বিরহ আগুণে পুড়ে মন ঠিক নাই।
তারক তারক বলে সদা ছাড়ে হাই।।
হাহুতাসে কান্দে সদা তারক বলিয়া।
পাগলিনী প্রায় শেষে বেড়াত কান্দিয়া।।
অল্প দিন পরে শেষে ত্যাজিল জীবন।
তারকের পিছে পিছে করিল গমন।।
শোক পাশরিয়া সবে সমাধি করিল।
অবিলম্বে শতকাজ সকল হইল।।
বাড়ী পরে রাখিলেন যতন করিয়া।
ধুপ দ্বীপ দেখাইত সকলে মিলিয়া।।
এই ভাবে কত দিন গত হয়ে যায়।
তারপর কি হইল লিখিব ভাষায়।।
ভারত বিভাগ হয়ে দুই খন্ড হল।
পাকিস্তান ছেড়ে কেহ ভারতে চলিল।।
সাধনার ভাই সব এমন সময়।
ভিটা বাড়ী বিক্রি করি ভারতেতে যায়।।
মুসলমান কিনিল সেই বাড়ী ঘর।
তাহারা বসতি করে সেই বাড়ী পর।।
সাধনার সমাধিটি বাড়ীর পাশেতে।
তুলসীর বৃক্ষ ছিল তাহার পরেতে।।
মিয়ারা কবর ভাবি সেখানে না যায়।
জঙ্গলেতে পরিণত হইল তথায়।।
এই ভাবে কতদিন গত হয়ে যায়।
তারপর কি হইল লিখিব ভাষায়।।
তেরশত আশি সাল হবে অনুমান।
আশ্চর্য্য ঘটনা এক হয়েছে প্রমাণ।।
রাজেন্দ্র নামেতে ছিল জয়পুর বাসি।
তারক চাঁদের নামে হইল উদাসি।।
সাধনাকে মনে মনে মা বলে ডাকিত।
ধ্যানে জ্ঞানে মনে প্রাণে ভকতি করিত।।
একদিন নিশি যোগে স্বপনে দেখিল।
সাধনা আসিয়া তারে কহিতে লাগিল।।
শুন শুন বাছাধন বলি যে তোমায়।
আমার সমাধি পরে ভক্তি যেন রয়।।
সকালে বিকালে তুই সেই খানে যাবি।
পরিস্কার করে সেথা ভকতি করিবি।।
সন্ধ্যা বেলা ধুপ দ্বীপ সেখানে দেখাবি।
আমার কৃপায় তুই মঙ্গলে থাকিবি।।
এই ভাবে তিন দিন স্বপনে কহিল।
পরদিন ভোর বেলা তথায় চলিল।।
সমাধির পরে যেই আবর্জনা ছিল।
নিজ হাতে পরিস্কার তখনে করিল।।
ছল ছল আখি দু’টি প্রণাম করিয়া।
পুনরায় আসিলেন গৃহেতে ফিরিয়া।।
সন্ধ্যা বেলা সে রাজেন্দ্র ধুপ ধুনা নিয়ে।
আরতি করিল সেথা কান্দিয়ে কান্দিয়ে।।
একদিন এক মিয়া তাড়াইয়া দেয়।
তার পর সে রাজেন্দ্র সেখানে না যায়।।
এই ভাবে কিছুদিন গত হয়ে যায়।
উদ্দেশ্যে প্রণাম করি কান্দিয়া বেড়ায়।।
মা সাধনা মা সাধনা বলিয়া কান্দিত।
পাগলের মত প্রায় ঘুরিয়া বেড়াত।।
আর দিন স্বপনেতে কহিল সাধনা।
আমার জন্যেতে বাছা দুঃখ করিও না।।
সমাধি হইতে মোরে তুলিয়া আনিবে।
তোমার বাড়ীতে এনে যতনে রাখিবে।।
পরদিন কহিলেন রমণীর কাছে।
স্বপনেতে মা সাধনা আমাকে বলেছে।।
সমাধি হইতে মোরে তুলিয়া আনিবে।
আজি নিশি যাব তথা তুমি সঙ্গে যাবে।।
তাই শুনি তার নারী স্বীকার করিল।
নিশি যোগে দুই জনে তথায় চলিল।।
কোদাল সঙ্গেতে আর ঝুড়িটি লইল।
আধ আধ অন্ধকারে খুড়িতে লাগিল।।
উরু সম গর্ত করে খুজিয়া না পায়।
তাই দেখে তার নারী ক্রোধ ভরে কয়।।
তোমার এ পাগলামী কেমনে বুঝাই।
কেহ না দেখিতে চল ঘরে ফিরে যাই।।
তারপর দুইজনে ঘরে ফিরে এল।
ঘরে গিয়ে সে রাজেন্দ্র কান্দিতে লাগিল।।
ঘরের পিছন থেকে কহিল সাধনা।
শুন শুন বাছাধন আর কান্দিওনা।।
যেখানে কাটিলে মাটি তাহার দক্ষিণে।
বিঘাত প্রমাণ দুরে আছি সেই খানে।।
এই কথা দুই জন যখনে শুনিল।
কান্দিতে কান্দিতে তারা তথায় চলিল।।
কোদাল ধরিয়া মাটি কাটিল যখন।
সাধনার অস্থি গুলি পাইল তখন।।
যত্ন করি অস্থি গুলি ঝুড়িতে করিয়া।
মহানন্দে আসিলেন ঘরেতে ফিরিয়া।।
বাড়ী পরে অস্থি গুলি সমাধি করিল।
তারপর ঘর করি মাথাটি রাখিল।।
আসন পাতিয়া মাথা রাখিল যতনে।
সকাল সন্ধ্যায় পুজা করে এক মনে।।
এখনও সেই মাথা আসনেতে রয়।
শত শত মানুষেতে দেখিবারে যায়।।
অধম বিনোদ বলে আর কিবা চাও ।
সাধনা তারক প্রীতে হরিগুণ গাও।।