-রাহুল সাংকৃত্যায়ন
সাইরাস এবং দরায়ুসের সময়ে যখন সমগ্র গ্রীস ইরানীদের অধিকারভুক্ত হয়েছিল তখন কতিপয় পণ্ডিত ব্যক্তি অন্যত্র চলে যান। পিথাগোরাসের অনুগামী কিছু ব্যক্তি ইতালিতে গিয়ে নিজেদের কেন্দ্র স্থাপন করেন। আবার একদল ব্যক্তি কোথাও স্থায়ীভাবে বাস না করে পর্যটকের জীবন বেছে নিয়েছিল।
তাদের বলা হয় সোফী বা জ্ঞানী। যদিও ইসলামী পরিভাষা থেকে সুফি (অদৈবতবাদী সম্প্রদায়) শব্দের উদ্ভব; তবুও এমন মনে করার কারণ নেই যে প্রাচীন গ্রীক সোফী এবং ইসলামীয় সুফি এক সম্প্রদায়ভুক্ত। তাই আমি সুফি না লিখে সোফী লিখলাম।
সোফী এক অশান্ত উন্মুক্ত সম্প্রদায় তথা রাজতন্ত্র কর্তৃক উৎপীড়িত সমাজ। তাই গতানুগতিক মতবাদে তাঁদের বিশ্বাস ছিল না, জ্ঞানের তৃজ্ঞা ছিল তাদের বড়ই প্রবল। সেই জ্ঞান তাঁরা নিজেরাই আহরণ করতেন এবং দিকে দিকে প্রচারিত করা অবশ্য কর্তব্য বলে মনে করতেন।
তাঁদের চেষ্টায় বিভিন্ন দিকে জ্ঞানের চর্চা শুরু হয়েছিল এবং বিস্তার লাভ করেছিল।
প্রাচীন মাত্রই যেহেতু প্রাচীন সেহেতু সঠিক এ কথা তারা মানতে চাননি। মানুষকে তারা বুঝিয়েছিলেন যে, বুদ্ধিকে বন্ধন-মুক্ত করে সত্যের অনুসন্ধান চালাতে হবে।
বুদ্ধের মহাপ্রয়াণের কিছুকাল পরেই তাঁরই মতো করে সোফীরাও সত্যকে রূঢ় ও বাস্তব এই দুই ভাগে বিভক্ত করেন ; রূঢ় সত্য হলো বুদ্ধের সংবৃত্তি সত্য (শঙ্করের ব্যবহার) এবং বাস্তবিক সত্য হলো পরমার্থ সত্য। সোফীস্ট দার্শনিকেদর একটি মূল্যবান উক্তি- ‘মানুষ্য বস্তুরই পরিমাপ।’
সোফীস্টদের সময়ে এথেন্স নগরী গ্রিক দর্শনের পঠন-পাঠনের কেন্দ্রে পরিণত হয় এবং তাঁদের শিক্ষাগুণেই সক্রেটিস, প্লেটো, অ্যারিস্টটল প্রমুখ দার্শনিকের আবির্ভাব সম্ভব হয়।
…………………………..
দর্শন দিগদর্শন: রাহুল সাংকৃত্যায়ন