ব্যাস মুনিই শ্রী তারক
হরিচাঁদ গুরুচাঁদ করিয়া স্মরণ।
তারকের পূর্ব কথা করিব বর্ণন।।
ভাগবত পুরাণাদি লিখে ব্যাসমুনি।
ভাগবতে লেখা আছে এসব কাহিনী।।
একদা নারদ মুনি আসিল ধরায়।
ব্যাসের আশ্রমে এসে হইল উদয়।।
ব্যাস মুনি দেখিলেন গুরু আগমন।
ব্যাস্ত হয়ে ব্যাস মুনি করিল যতন।।
আসনে বসায়ে মুনি ধোয়ায় চরণ।
ভক্তি গদ গদ চিত্ত ঝরে দু’ নয়ন।।
কান্দিতে লাগিল ব্যাস পড়িয়া ধরায়।
নয়নের জলে তার বক্ষ ভেসে যায়।।
নারদ বলিল ব্যাস কান্দ কি কারণ।
তব মনে কিবা দুঃখ বল বাছাধন।।
গুরু বাক্য শুনে কানে ব্যাস তপধন।
করজোড়ে কহিতেছে মধুর বচন।।
তোমার কৃপায় আমি এ জগতে আসি।
বহু গ্রন্থ লিখিলাম আশ্রমেতে বসি।।
চৌদ্দ খানি শাস্ত্র লিখি আঠার পুরাণ।
কোন কিছুতেই মোর জুড়ায় না প্রাণ।।
কি করিব কোথা যাব ভাবিয়া না পাই।
বলে গুরু কি করিব তোমাকে জানাই।।
নারদ বলিল তুমি শুন বাছাধন।
শ্রী শ্রী হরি লীলামৃত করহে লিখন।।
লীলামৃত লেখ তুমি ভক্তি রস দিয়া।
ভক্তগণে পাবে শান্তি সে গ্রন্থ শুনিয়া।।
তুমিও পাইবে শান্তি সে গ্রন্থ লিখিয়া।
হরি লীলামৃত লেখ শ্রী হরি ভাবিয়া।।
এত কহিলেন যদি ব্রাহ্মণ নন্দন।
ব্যাস মুনি করিলেন চরণ বন্দন।।
তুষ্ঠ হয়ে সে নারদ স্বর্গ পথে গেল।
আশ্রমে আসিয়া ব্যাস ভাবিতে লাগিল।।
গুরুর আদেশ বাণী শুনিয়া কর্ণেতে।
হরি লীলামৃত কথা লিখিব কি মতে।।
তারপর ভাববত সংহিতা লিখিল।
শ্রী শ্রী লীলামৃত লেখা না হইল।।
তারপর কত দিন গত হয়ে যায়।
কি লিখিব কি লিখিব ভাবিয়া না পায়।।
তারপর ব্যাসদেব লীলা সাঙ্গ করি।
সূক্ষ্ম দেহ ধরি গেল বৈকুন্ঠ নগরী।।
কালেতে দ্বাপর যুগ হয়ে গেল শেষ।
তারপর হইলে যে কলির আবেশ।।
বৈকুন্ঠে থাকিয়া ব্যাস ভাবে মনে মন।
আত্মার অশান্তি কভু ছাড়ে না কখন।।
এক দিন বৈকুন্ঠেতে নারদ উদয়।
নারদে হেরিয়া ব্যাস ধরিলেন পায়।।
কেন্দে বলে ওহে গুরু করি নিবেদন।
অধমেরে ক্ষমা করে দেহ শ্রী চরণ।।
তব আজ্ঞা না পালিয়া শান্তি নাহি পাই।
এবে আমি কি করিব চরণে জানাই।।
ব্যাসেরে কাতর দেখি বিধি পুত্র কয়।
হরি অবতারে গিয়ে জন্মিবে ধরায়।।
হরি লীলামৃত কথা লিখিও যতনে।
তাহা হলে পাবে শান্তি যত ভক্তগণে।।
সেই হেতু ব্যাস মুনি জনম লভিল।
তারক নামেতে তার এ জনম হল।।
সুবোধ চরিত ভাগবতে লেখা আছে।
এগারশ চার পৃষ্ঠা মোর দেখা আছে।।
অধম বিনোদ বলে বেলা বেশি নাই।
হরিচাঁদ প্রীতে সবে হরি বল ভাই।।