ভবঘুরেকথা
তারক ঠাকুর

মধুসূধন সরকারের উপাখ্যান
হরিচাঁদ গুরুচাঁদ ভাবিয়া হৃদয়।
লিখিতে কলম ধরি করিনু আশায়।।
তারক চাঁদের কথা বরিব বর্ণন।
আশ্চর্য্য ঘটনা এক শুন দিয়া মন।।
কবিগান করে তিনি দেশ দেশান্তর।
হরিচাঁদ গুণগান করেন প্রচার।।
একদিন চলিলেন রাঙ্গা মাটি গায়।
দল বল সহ সেথা হলেন উদয়।।
বিপক্ষের সরকার ছিল এক জন।
কুটিশ্বরী বাড়ী নাম শ্রীমধুসূদন।।
জাতিতে পরামানিক ছিল পরিচয়।
তারকের সংগে গান করে মহাশয়।।
মনে মনে ভাবিতেছে সে মধুসূদন।
কাড়ারের সঙ্গে গান করিব এখন।।
ও জাতির ভাত কভু খাওয়া না যায়।
পরশ করিলে হয় পাপ সু-নিশ্চয়।।
ইতি উতি কত কিছু ভাবিতে লাগিল।
জাতি হিংসা অন্তরে জাগিয়া উঠিল।।
কবির খোলায় বসে কত নিন্দা করে।
বাহাদুরি নিতে চায় কবির আসরে।।
তাহা শুনি সে তারক আসরেতে যায়।
শাস্ত্রের মাধ্যমে তারে কত যে বুঝায়।।
তাহাতেও তার মনে বিকার রহিল।
বিধাতার বিধি যাহা কে খণ্ডাবে বল।।
গান শেষে সব দল বিদায় হইল।
যার যার বাড়ী সবে গমন করিল।।
পর দিন গৃহে গিয়ে সে মধুসূদন।
ইতি উতি কত কিছু ভাবে মনে মন।।
পেট ব্যাথা দেখা দিল সেই দিন হতে।
জুড়ায় না সেই ব্যাথা কোন ঔষুধেতে।।
ডাক্‌তার কবিরাজ দেখাইল কত।
দিন দিন সেই ব্যাথা বাড়ে অবিরত।।
আজ মরে কাল মরে অস্থিচর্ম সার।
মনে মনে ভাবে সদা আমি দুরাচার।।
একদিন স্বপনেতে দেখিতে পাইল।
হরিচাঁদ এসে তারে কহিতে লাগিল।।
শুন ওরে বাছাধন বলি আজ তোরে।
গুরু করে এস গিয়ে সেই তারকেরে।।
তারকের নিন্দা করে হল তোর ভোগ।
তারকের সনে গিয়ে কর যোগাযোগ।।
আমার ভক্তের নিন্দা করে যেই জন।
এই মত ভোগ তার হয় সর্বক্ষণ।।
তারকের বাড়ী গিয়ে খাও তার ভাত।
হেন কালে নিদ্রা ভঙ্গ হল অকস্মাৎ।।
মনে মনে কত যে কি ভাবিতে লাগিল।
নয়নের জলে বক্ষ প্লাবিত হইল।।
একি আজি দেখিলাম ঘুমের ঘরেতে।
অপূর্ব মুরতীখানি দেখিনু চোখেতে।।
আজানু লম্বিত ভূজ চৌরাশি কপাল।
স্বপনে দিলেন দেখা পরম দয়াল।।
আমি অতি মূঢ়মতি না জানি সাধন।
দয়াময় হরি আজ দিল দরশন।।
ধন্য ধন্য শ্রী তারক হরিচাঁদ ভক্ত।
হরিচাঁদ গুণনিধি তব অনুগত।।
হরিচাঁদে বাঁধিয়াছ ভক্তি গুণ দিয়া।
আমার জনম ধন্য তোমাকে নিন্দিয়া।।
এই ভাবে নিশি জাগি কান্দিতে লাগিল।
হেন কালে দিনমণি উদয় হইল।।
প্রভাত হইল দেখি সে মধুসূদন।
কারে কিছু না বলিয়া করিল গমন।।
বাড়ী থেকে যাত্রা করে পদ্মডাঙ্গা এল।
হেনকালে দীননাথ দেথিতে পাইল।।
দীননাথ বলে ভাই এত ভোর বেলা।
এই বেশে চলিয়াছ কোথায় একলা।।
দীননাথের সঙ্গেতে ভালবাসা ছিল।
সকল মনের কথা তাহাকে কহিল।।
যাব আমি জয়পুর তারকের বাড়ী।
যাত্রা করিয়াছি আমি বলে হরি হরি।।
দীননাথ বলে ভাই আমিও যাইব।
তারকেরে গুরু করি পদে লুটাইব।।
বহুদিন এই কথা জাগে সর্বক্ষণ।
যাব যাব মনে ভাবি হয়না কখন।।
যখন পেয়েছি ভাই তব দরশন।
আর না করিব দেরি করিব গমন।।
এই ভাবে দুই জনে কথপোকথন।
হেনকালে আসিলেন আর এক জন।।
শ্রীহরি ভজন নাম পদ্মডাঙ্গা বাড়ী।
শুনিয়া সকল কথা ফেলে অশ্রুবারি।।
বলে আমি তোমাদের সঙ্গেতে যাইব।
তারকের কাছে গিয়ে বাসনা পুরা’ব।।
তিন জনে এক আত্মা নাহি ভিন্ন ভাব।
বহু দিন হতে এই তিনের স্বভাব।।
হরিবোলে তিন জনে করিল গমন।
ভাবে গদ গদ চিত্ত ঝরে দু’নয়ন।।
পথে যেতে কত কিছু ভাবিতে লাগিল।
সন্ধ্যা বেলা জয়পুর উপনীত হল।।
তারকের পদে পড়ে কান্দিতে লাগিল।
তোমাকে নিন্দিয়া মোর হেন দশা হল।।
তারক দেখিয়া বলে হে মধুসূদন।
এহেন দীনতা তুমি হলে কি কারণ।।
মধু কহে যে গোঁসাই শুন সমাচার।
আচম্বিত পেট ব্যাথা হইল আমার।।
ওষুধ খাইয়া কোন না হল উপায়।
বেদনায় দিবারাত্রি করি হায় হায়।।
একদিন স্বপনেতে হরিচাঁদ কয়।
তারকে নিন্দিয়া তোর হেন দশা হয়।।
আমার ভক্তের নিন্দা করে যেই জন।
হেন দশা হয় তার শুন বাছাধন।।
মুক্তি যদি পেতে চাও তার কাছে যাও।
তারকেরে গুরু করি তার ভাত খাও।।
তাই বলি ওহে গুরু করি প্রণিপাত।
দয়া করে অধমেরে খেতে দাও ভাত।।
তারক বলেছে আমি কিছুই না জানি।
যার কাজ সেই করে হরি গুণমণি।।
আমি মাত্র নিমিত্তের ভাগি শুধু হই।
তার কৃপা পেয়ে আমি এ জগতে রই।।
হরিচাঁদ লীলা খেলা কে বুঝিতে পারে।
বলিতে বলিতে তারকের অশ্রু ঝরে।।
মহাভাব উথলিল এমন সময়।
তারকের পদে সবে গড়াগড়ি যায়।।
তারক বলেছে সবে সুস্থ কর মন।
ভাত রান্না করা আছে কর হে ভোজন।।
হেন বাক্য শ্রীতারক যখন বলিল।
মায়ের চরণে গিয়ে প্রসাদ মাগিল।।
হাসি মুখে ঠাকুরাণী দিলেন প্রসাদ।
কাচাঁ লঙ্কা পান্তা ভাত মধুর আস্বাদ।।
ভাত খেয়ে কহিতেছে সে মধুসূদন।
পেট ব্যাথা দুরে গেছে ধন্য এ জীবন।।
ভালবেসে তিনজন রাত্রি কাটাইল।
তারকেরে গুরু করি দেশেতে চলিল।।
যাই বার কালে সবে কেন্দে কেন্দে কয়।
তব শ্রীচরণ বিনে দাড়াব কোথায়।।
এই দেহ মন প্রাণ সকল তোমার।
যাহা ইচ্ছা তাহা কর তুমি গুরু সার।।
তব ভাত খেয়ে গুরু করিয়াছি মোরা।
ভাগ্যে যেন কিবা আছে মনে জাগে সাড়া।।
তারক বলেছে ভাগ্য সু-প্রসন্ন হল।
মতুয়া হয়েছ এবে হরি হরি বল।।
তারকের পদধুলি মস্তকে করিয়া।
তিন জনে আসিলেন দেশেতে চলিয়া।।
অধম বিনোদ বলে পাঁচালীর ছন্দে।
হরিচাঁদ ছবি খানি হৃদয়েতে বন্দে।।
তাই বলি ভাই সব বেলা ডুবে গেল।
হরিচাঁদ প্রীতে সবে হরি হরি বল।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!