ভবঘুরেকথা

জজের পুত্র লাভ তারকের কৃপালাভ
ফাঁসি থেকে মুক্তি পেয়ে করিল গমন।
পথে যেতে সেই মতি ভাবে মনে মন।।
জজের কাছেতে শুনে তারকের কথা।
হৃদয় জাগিল তার বিরহের ব্যাথা।।
তারক তারক বলে ছাড়িতেছে হাই।
দয়ার সাগর মোর তারক গোঁসাই।।
ফাঁসি থেকে মুক্তি পাই যাহার কৃপায়।
এহেন দরদী আমি পাইব কোথায়।।
মনে ভাবে আর আমি গৃহেতে না যাব।
জনমের মত আমি দাস হয়ে রব।।
ভাবে গদ গদ চিত্ত চলেছেন পথে।
জলে ভরা আখি দু’টি লাগিল হাটিতে।।
তারকের ছবি খানি হৃদয় ধরিয়া।
নয়নের জলে বক্ষ যেতেছে ভাসিয়া।।
ভাবা বেশে সেই জয়পুর গিয়া।
তারকের পদে পড়ে কহিছে কান্দিয়া।
শুন শুন শুন বাবা চরণে জানাই।
গৃহে যেতে কহিও না ধর্মের দোহাই।।
এ জীবনে আমি আর গৃহে নাহি যাব।
চরণের দাস হয়ে তব গৃহে রব।।
জীবন পেয়েছি আমি তোমার স্মরণে।
কৃপা করে ওগো বাবা রাখিও চরণে।।
এ জীবনে ওগো বাবা অন্য আশা নাই।
পদে যেন থাকে ভক্তি এই ভিক্ষা চাই।।
এই ভাবে সেই মতি কান্দিতে লাগিল।
তাই দেখে তারকের দয়া উপজিল।।
তারক কহিছে মতি শুন বাছাধন।
ভক্তি পথে থাকে যেন সদা তব মন।।
মুখে কর হরি নাম হাতে কর কাম।
মানব জীবনে হয় শেষ পরিনাম।।
মম গৃহে থেকে তুমি সত্য কথা কও।
মুখে হরি হরি বলে জীবন কাটাও।।
তাই শুনে সেই মতি তথায় রহিল।
ওদেকে জজের ঘরে পুত্র জনমিল।।
পুত্র কোলে করে সেই জজের রমনী।
তারক তারক বলে কান্দে সেই ধনী।।
উদ্দেশ্য তারক পদে প্রণাম জানায়।
আনন্দেতে আত্মহারা জজের হৃদয়।।
জজ বাবু মনে মনে তারকে স্মরিয়া।
তারকের গুণগান বেড়ায় গাহিয়া।।
এই ভাবে কত দিন গত হয়ে গেল।
দিনে দিনে সেই পুত্র বাড়িতে লাগিল।।
ছয় মাস পরে সেই জজের রমনী।
জজের পাশেতে বসে কহিল তখনি।।
তারক চাঁদের বরে পেয়েছি তনয়।
জননী হয়েছি আমি তাহার কৃপায়।।
পুত্রধন লয়ে যাই তারকের বাড়ী।
আশীর্বাদ দিবে তিনি বলে হরি হরি।।
তাই শুনে জজ বাবু কহিল তখন।
কল্য প্রাতে চল মোরা করিব গমন।।
তাই শুনে সেই নারী আনন্দে মাতিয়া।
সারা নিশিগত হয় তারকে ভাবিয়া।।
পরদিন ভোর বেলা করিল গমন।
পুত্র কোলে করে চলে আনন্দিত মন।।
তারকের গুণগান করিতে করিতে।
আনন্দেতে আত্মহারা লাগিল হাটিতে।।
সন্ধ্যার অগ্রেতে গিয়ে হইল উদয়।
সেই মতি বসে আছে দেখিবার পায়।।
ফাঁসি থেকে মুক্তি পেয়ে যেই দিন এল।
সেই দিন হতে মতি দাঁড়ি না কাটিল।।
তারক চাঁদের প্রায় দেখিবার পায়।
বসে বসে সেই মতি হরিগুণ গায়।।
মতির কোলেতে সেই পুত্র ধন দিয়ে।
দুই জনে কান্দিতেছে চরণে পড়িয়ে।।
তাই দেখে সেই মতি ভাবিল হৃদয়।
জজ বাবু চেনে নাই করি কি উপায়।।
কেন্দে কেন্দে সেই মতি কহিল তখন।
শুন শুন জজ বাবু আমার বচন।।
আমি তব সেই মতি তোমাকে জানাই।
ভেবেছ কি আমি সেই তারক গোঁসাই।।
তাই বলে জজ বাবু মতিকে কহিল।
ফাঁসি থেকে মুক্তি পেলে আমি জানি ভাল।।
তুমি যদি নাহি যেতে আমার কোর্টেতে।
আমাদের ঘরে পুত্র হইত কি মতে।।
আগে তুমি মম পুত্রে কর কৃপা দান।
আগে আশীর্বাদ কর ওহে মতিমান।।
তাই শুনে সেই মতি কান্দিতে লাগিল।
নয়নের জলে বক্ষ প্লাবিত হইল।।
সেই ছেলে বুকে ধরে তারকে স্মরিয়া।
আশীর্বাদ দেয় তারে কান্দিয়া কান্দিয়া।।
হেনকালে সে তারক আসিল তথায়।
জজ বাবু পড়িলেন তারকের পায়।।
পুত্র কোলে করে সেই জজের রমণী।
নয়নের জলে ভেসে কহিতেছে বাণী।।
ওগো বাবা বলি তোমা আমার বচন।
তোমার কৃপায় পাই এই পুত্র ধন।।
কৃপাকর ওগো বাবা চরণে জানাই।
পদে যেন থাকে ভক্তি এই ভিক্ষা চাই।।
এত বলি পুত্র দিয়ে তারকের কোলে।
চরণে পড়িয়া সতী ভাসে আখি জলে।।
তাই দেখি তারকের ঝরে আখি জল।
আধ আধ ভাসা দিয়ে বলে হরিবল।।
হরিচাঁদ ছবিখানি হৃদয়ে ধরিয়া।
শিশু মুখে চুমু দেয় আনন্দ পাইয়া।।
দয়ার সাগর মোর তারক সুজন।
আশীর্বাদ দিয়ে সবে দেয় প্রেমধন।।
অধম বিনোদ বলে পাঁচালীর ছন্দে।
তারকের ছবিখানি হৃদয়েতে বন্দে।।
তাই বলি ভাই সব বেলা বেশী নাই।
হরিচাঁদ প্রীতে সবে হরিবল ভাই।।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!