হরি দর্শণ
হরিচাঁদ প্রিয় ভক্ত মহানন্দ নাম।
নারিকেলবাড়ী জন্ম ভক্ত গুণধাম।।
গৌরাঙ্গ লীলায় ছিল নামে নিত্যানন্দ।
এ লীলায় হইলেন নামে মহানন্দ।।
একদিন চলিলেন গঙ্গাচর্ণা গায়।
হরিভক্ত শিরোমণি মদনমোহন।।
তাহার বাড়ীতে গিয়ে করে সংকীর্ত্তন।
পাগোল আসিল সেথা শুনিল কার্ত্তিক।।
আনন্দেতে আত্মহারা হইল বিদিক।
জলে ভরা আখি দু’টি হাটিতে হাটিতে।।
ব্যস্ত হয়ে গেল তথা পাগলে আনিতে।
কাঁদিয়া ধরিল গিয়া পাগলের পায়।।
দয়া করে চল তুমি আমার আলয়।
পাগল চলেছে তুমি সুস্থ কর মন।।
সেবা করাইবে হেথা মদনমোহন।।
মদনের বাড়ী হল নাম সংকীর্ত্তন।
নামে প্রেমে মত্ত হল ভকতের গণ।।
মদনের ঘরে বসে ভোজন করিয়া।
কার্ত্তিকের বাড়ী এল ভক্তগণ নিয়া।।
কার্ত্তিকের বাড়ী যবে হইল উদয়।
পরিবার সহ এসে চরণ ধোয়ায়।।
উলুধ্বনি হরিধবনি করে সবে মিলে।
সবাকার অন্তরেতে আনন্দ উথলে।।
অশ্বিনী পড়িল এসে পাগলের পায়।
নয়নের জলে তার বক্ষ ভেসে যায়।।
কার্ত্তিক আসিয়া বলে পাগলের ঠাই।
শুন শুন ও পাগল তোমাকে জানাই।।
আজি হতে অশ্বিনীকে তোমার চরণে।
সমর্পন করিলাম মঙ্গল কারণে।।
আজ হতে অশ্বিনীর গুরু তুমি হও।
আমার মনের বাঞ্ছা তুমি হে পুরাও।।
তাই শুনি মহানন্দ আনন্দ হৃদয়।
অশ্বিনীকে হস্ত ধরে কোলেতে বসায়।।
হরিনাম মহামন্ত্র করিলেন দান।
সেই হতে গুরুপদে সপিলেন প্রাণ।।
মহানন্দ বলে শুন ওহে বাছাধন।
হরিচান্দ পদে যেন থাকে তব মন।।
হরি ধ্যান হরি জ্ঞান হরি সর্বসার।
মন প্রাণ সপে দিয়ে হও নির্বিকার।।
গুরুবাক্য শুনি রত্ন প্রণাম করিল।
ভক্তগণে বলে সবে হরি হরি বল।।
সেই হতে মহানন্দ গুরুরূপে হয়।
গুরু সেবা করে রত্ন আনন্দ হৃদয়।।
তাই দেখে ভক্তগণে করে সংকীর্ত্তন।
হরিনামে মাতোয়ারা ঝরে দু’নয়ন।।
এইভাবে সারাদিন হরিনাম হয়।
বাহ্যজ্ঞান হারা সবে হরিগুণ গয়।।
শতাধিক হরিভক্ত হইল গণনা।
মাত্র দুই সের চাউল হইল রান্না।।
কার্ত্তিক কাঁদিয়া বলে পাগলের ঠাই।
কেমনে হইবে সেবা বলহে গোঁসাই।।
তাই শুনি মহানন্দ দ্রুত গতি ধায়।
অন্ন পাত্র কাছে গিয়ে হইল সদয়।।
হরিচাঁদ গুরুচাঁদ করিয়া স্মরণ।
অন্না পাত্রে হস্ত দিয়া কহিল তখন।।
এই অন্নে হয়ে যাবে নাহি কোন ভয়।
ভোজন করিল সবে আনন্দ হৃদয়।।
আশ্চর্য দেখিয়া সবে হরি হরি বলে।
কার্ত্তিক ঢলিয়া পড়ে ভক্ত পদতলে।।
তাহা দেখি মহানন্দ কার্ত্তিকে ধরিয়া।
কোলাকুলি করে শেষে প্রেমেতে মাতিয়া।।
হরিচাঁদ লীলা খেলা বড় চমৎকার।
হয় নাই হবে নাক এ বিশ্ব মাঝার।।
অল্প অন্ন অল্প ডাল ঠাকুর কৃপায়।
শতাধিক ভক্ত তাহা প্রাণ ভরি খায়।।
এহেন আশ্চর্য লীলা করি দরশন।
হরি বলে কাঁদে যত হরি ভক্তগণ।।
কার্ত্তিক অমনি সেথা গড়াগড়ি যায়।
পরিবারসহ এসে পড়িল ধরায়।।
কিছু পরে প্রেমনিধি হইলেন ক্ষান্ত।
হরি গুণগানে সেথা নিশি হল হস্ত।।
ভোরবেলা এল তথা শ্রীরাইচরণ।
পাগল চরণে এসে করে নিবেদন।।
আমার বাড়ীতে চল মতুয়ার সব।
এ দীনের গৃহে গিয়ে কর মহোৎসব।।
তাই শুনি মহানন্দ বাক্য দিল সায়।
ভক্তগণ লয়ে সেথা হইল উদয়।।
হরিনামে মাতোয়ারা মতুয়ার গণ।
প্রেমে গদ গদ চিত্ত ঝরে দু’নয়ন।।
অশ্বিনীকে ডেকে বলে সে রাইচরণ।
কদলির পত্র কেটে আন বাছাধন।।
তোমার উপর আমি দিলাম এ ভার।
কদলীর পাতা এনে দিও ত সত্ত্বর।।
তাই শুনে সে অশ্বিনী করিল গমন।
কদলীর বনে গিয়ে দিল দরশন।।
মহাভাব উথলিল তাহার অন্তরে।
ছল ছল আখি দু’টি হরিনাম করে।।
হরিচাঁদ হরিচাঁদ বলিয়া কাঁদিল।
প্রকান্ড শার্দুল এক তথায় আসিল।।
শার্দুলের গলা ধরি হরি হরি বলে।
ভক্তের পরশে ব্যাঘ্র ভাসে আখি জলে।।
আকস্মাৎ সেই ব্যাঘ্র হল অন্তর্ধান।
তাই দেখে সে অশ্বিনী হারাইল জ্ঞান।।
কিছু পরে মহারত্ন দেখিল চাহিয়া।
কতগুলি নারীমুর্ত্তি নাচিছে আসিয়া।।
ষোড়শী যুবতী তারা নৃত্য গীত গায়।
তাই দেখে সে অশ্বিনী পড়িল ধরায়।।
মা বলিয়া সম্বোধন করিল তখন।
ভক্তি গদ গদ চিত্ত ঝরে দু’নয়ন।।
শুন শুন মাতাগণ আমার বচন।
অধমেরে কৃপা করি দিও শ্রীচরণ।।
সাধন ভজন আমি কিছুই না জানি।
জলে ভরা আখি দু’টি কহে স্তুতি বাণী।।
হরিভক্ত মুখে শুনি এহেন বচন।
অদৃশ্য হইয়া গেল সেই নারীগণ।।।
হরি বলে কাঁদিতেছে ভক্ত শিরোমণি।
আসিয়া দিলেন দেখা হরি গুণমণি।।
হরিচাঁদ বলে শুন হে বাছাধন।
ভক্তি পথে থাকে যেন সদা তব মন।।
হরি মুর্ত্তি দরশন করিয়া তখন।
কাঁদিয়া ধরায় পড়ে হল অচেতন।।
হরিচান্দ লীলাখেলা কে বোঝে ধরায়।
অশ্বিনীকে দেখা দিয়া লুকাইয়া যায়।।
কিছু পরে সে অশ্বিনী চৈতন্য পাইয়া।
নয়নের জলেতে বক্ষ যেতেছে ভাসিয়া।।
তারপর সে অশ্বিনী কালাপাতা কাটি।
অতঃপর আসিলেন রাইচাদ বাটি।।
কাঁদিয়া বিনোদ বলে বেলা বেশী নাই।
হরিচান্দ প্রীতে সবে হরি বল ভাই।।