জমিদারের অত্যাচার নিবারণ ও স্খুল স্থাপন
হুকড়ার জমিদার বাসাবাটী যার ঘর
বাগহাট শহরের কাছে।
জাতিকে কায়স্থ তারা বিদ্যা বুদ্ধি ধনে সেরা
নাগবংশ খ্যাতি বহু আছে।।
প্রজা যত হুড়কায় আদি বন্দোবস্ত লয়
জোৎ কবুলতি নাহি দিল।
তাই তারা জনে জনে জমি নিল অনুমানে
দশ স্থলে বিশ বিঘা হলে।।
বহু পরে তত্ত্ব তার জানিলেন জমিদার
উপায় নাহিক আর কিছু।
যদি কবুলতি দেয় তবে ত উপায় হয়
ধর প্রজা কর তারে নিচু।।
এ সব করিয়া সায় জমিদার মহাশয়
হুকুমাদি দিল নায়েবেরে।
‘‘চলে যাও হুড়কায় যদি কবুলতি দেয়
কিছু নাহি বলিও প্রজারে।।
যদি কথা নাহি শোনে ধরে এনে জনে জনে
কবুলতি করাবে কবুল।
জমা বৃদ্ধি করি দিবে জমি জমা মাপ হবে
তাতে ক্রুটি নহে এক চুল।।’’
নায়েব আসিয়া পরে এই কথা ঘরে ঘরে
জানাইয়া দিল অগ্রভাগে।
যেই শোনে সেই কয় এ কি কথা মহাশয়
কথা শুনে জ্বলে মরি রাগে।।
প্রজা সবে এক ঠাঁই হয়ে বলে শুন ভাই
এই কার্য্য কেহ না করিও।
খাল কেটে কুমীরকে নিজ ঘরে এনে ডাকে
সাধে সাধে কেহ না মরিও।।’’
সবে মিলে করে সায় নায়েবের কাছে কয়
‘‘কবুলতি নাহি দিব মোরা।।’’
নায়েব শুনিয়া তই বলে ‘‘আর রক্ষা নাই
এত বুদ্ধি কোথা পেলি তোরা?
কিসে হলি রাজা রঘু? ভিটায় চরাব ঘুঘু
দুষ্ট গরু চাহিনা গোহালে।
এখনো রয়েছে রাজা উচ্ছন্ন করিব প্রজা।
দেখি পানি কোন পথে চলে?’’
নায়েবের কথা শুনি মনে মনে শঙ্ক গণি
প্রজা সহ গৃহে ফিরে গেল।
সে দিনের নীতি যাহা প্রজার বিপক্ষে তাহা
বলবান জমিদার ছিল।।
প্রজা সবে এক সাথে যুক্তি করে নানামতে
কি উপায় হবে বা এখানে?
সীতানাথ নামে জানি ডাক্তারী করেন তিনি
ধন্য তিনি ধনে জনে দানে।।
শুন তাঁর পরিচয় ‘‘দানবীর আখ্যা পায়।
বহু দা করে বহু স্থানে।
খুলনা সভার কালে সীতানাথ দলেবলে
কার্য্য সেথা করে রাত্রি দিনে।।
মিলিয়া সবার সাথে ডেকে বলে সীতানাথ
‘‘আমাদের শক্তি কিছু নাই।
ইংরেজ দেশের রাজা অতিশয় মহাতেজা
এই কার্য্যে সে-সাহায্য চাই।।
যত জমিদার রয় সকলে রাজাকে ভয়
মনে প্রাণে করে সব জানে।
আমার পরাণে কয় পাই যদি সে-আশ্রয়
ব্যাধি দুর হবে একদিনে।।
এ কার্য্য সাধিতে হলে বলি আমি সভাস্থলে
মতুয়ারা পারে তা করিতে।
জানি আমি ওড়াকান্দী সাহেবে করেছে বন্দি
ঠাকুর শ্রীগুরুচাঁদ হাতে।।
কথা মুনি সবে কয় ‘‘ধন্য মুক্তি মহাশয়
রূপচাঁদ মতুয়ারে ডাক।
সব কথা বল তারে বল তারে জোর করে
‘‘আমাদের কথা তুমি রাখ।।’’
যুক্তি করি প্রজাগণে রূপচাঁদে ডেকে আনে
রূপচাঁদ আসিল সভায়।
শুনিয়া সকল কথা হেঁট করে রেখে মাথা
পরে কথা গোস্বামীজী কয়।।
‘‘দেশের মঙ্গল তরে তোমাদের বাক্য ধরে
ওড়াকান্দী আমি চলে যাই।।
গুরুচাঁদ দয়াময় যদি তাঁর ইচ্ছা হয়
আমি বলি শঙ্কা কিছু নাই।।’’
কথাতে হইয়া রাজী চলিলেন গোস্বামীজী
উদয় হইলা ওড়াকান্দী।
শ্রীগুরুচাঁদের হেরে ভাসিয়া নয়ন নীরে
কহিতে লাগিলা কান্দি কান্দি।।
যত কিছু সমাচার মালেকের অত্যাচার
নিবেদন করিল চরণে।
গুরুচাঁদ শুনি কয় ‘‘রমণি নাহিরে ভয়
সাহেবের ডাকিব এখানে।।
ডক্টর মীডেরে ডাকি বলিলেন কমলাখি
‘‘শোন মীড আমার বচন।
মম ভক্ত এই জন রূপচাঁদ মহাজন
দেশে তার বড় অঘটন।।
অত্যাচারী জমিদার করিতেছে অত্যাচার
সহায় সম্বল কেহ নাই।
এর কিছু প্রতীকার, কর তুমি এই বার,
এই কথা বলি তব ঠাঁই।।
প্রভুর বচন শুনি, সাধু মীড গুণমণি,
বলে ‘‘কর্তা কোন চিন্তা নাই।
সব মিশনারী মিলে এক সাথে দলেবলে
হুকড়াতে মোরা সবে যাই।।’’
গুরুচাঁদ শুনে তাই বলে ‘‘রমণী গোসাই
শীঘ্রগতি চলে যাও দেশে।
এই শুভ সমাচার বল গিয়ে ঘরে ঘর
যা শুনিলে সাহেবের পাশে।।’’
রূপচাঁদ গৃহে যায় সবে সমাচার কয়
শুনি সবে হল আনন্দিত।
মীড হেথা নানা স্থানে ডাকি মিশনারীগণে
সব কথা জানাল ত্বরিত।।
সবে মিলে খুলনায় পরে গেল হুকড়ায়
বারজন সাহেবের দল।
নায়েব কি জমিদার ভয়ে কাঁপে থর থর
বাক্যহারা দেহে নাহি বল।।
করিলেন পলায়ন যত অত্যাচারীগণ
দেশবাসী করে জয়ধ্বনি।
পাঠশালা করি তায় সাহেবেরা চলি যায়
শান্তি পেল রূপচাঁদ গুণী।।