ভবঘুরেকথা
শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব

১৮৮৫, ২৭শে অক্টোবর

গৃহস্থ ও নিষ্কাম কর্ম – Theosophy
শ্রীরামকৃষ্ণ (শ্যাম বসুর প্রতি) – সংসারধর্ম; তাতে দোষ নাই। কিন্তু ঈশ্বরের পাদপদ্মে মন রেখে, কামনাশূন্য হয়ে কাজকর্ম করবে। এই দেখ না, যদি কারু পিঠে একটা ফোঁড়া হয়, সে যেমন সকলের সঙ্গে কথাবার্তা কয়, হয়তো কাজকর্মও করে, কিন্তু যেমন ফোঁড়ার দিকে তার মন পড়ে থাকে, সেইরূপ।

“সংসারে নষ্ট মেয়ের মতো থাকবে। মন উপপতির দিকে, কিন্তু সে সংসারের সব কাজ করে। (ডাক্তারের প্রতি) বুঝেছ?”

ডাক্তার – ও-ভাব যদি না থাকে, বুঝব কেমন করে?

শ্রীরামকৃষ্ণ (হাসিতে হাসিতে) – আর ওই ব্যাবসা অনেকদিন ধরে করছেন! কি বল? (সকলের হাস্য)

শ্যাম বসু – মহাশয়, থিয়সফি কিরকম বলেন?

শ্রীরামকৃষ্ণ – মোট কথা এই, যারা শিষ্য করে বেড়ায়, তারা হালকা থাকের লোক। আর যারা সিদ্ধাই অর্থাৎ নানারকম শক্তি চায়, তারাও হালকা থাক। যেমন গঙ্গা হেঁটে পার হয় যাব, এই শক্তি। অন্য দেশে একজন কি কথা বলছে তাই বলতে পারা, এই এক শক্তি। ঈশ্বরে শুদ্ধাভক্তি হওয়া এই সব লোকের ভারী কঠিন।

শ্যাম বসু – কিন্তু তারা (থিয়সফিস্ট্‌রা) হিন্দুধর্ম পুনঃস্থাপিত করবার চেষ্টা করছে।

শ্রীরামকৃষ্ণ – আমি তাদের বিষয় ভাল জানি না।

শ্যাম বসু – মরবার পর জীবাত্মা কোথায় যায় – চন্দ্রলোকে, নক্ষত্রলোকে ইত্যাদি – এ-সব থিয়সফিতে জানা যায়।

শ্রীরামকৃষ্ণ – তা হবে আমার ভাব কিরকম জানো? হনুমানকে একজন জিজ্ঞাসা করেছিল, আজ কি তিথি? হনুমান বললে, ‘আমি বার, তিথি, নক্ষত্র এ-সব কিছু জানি না; কেবল এক রামচিন্তা করি।’ আমার ঠিক ওই ভাব।

শ্যাম বসু – তারা বলে, মহাত্মা সব আছেন। আপনার কি বিশ্বাস?

শ্রীরামকৃষ্ণ – আমার কথা বিশ্বাস করেন তো আছে। এ-সব কথা এখন থাক। আমার অসুখটা কমলে তুমি আসবে। যাতে তোমার শান্তি হয়, যদি আমায় বিশ্বাস কর – উপায় হয়ে যাবে। দেখছো তো, আমি টাকা লই না, কাপড় লই না। এখানে প্যালা দিতে হয় না, তাই অনেকে আসে! (সকলের হাস্য)

(ডাক্তারের প্রতি) – “তোমাকে এই বলা, রাগ করো না; ও-সব তো অনেক করলে – টাকা, মান, লেকচার; – এখন মনটা দিনকতক ঈশ্বরেতে দাও; আর এখানে মাঝে মাঝে আসবে, ঈশ্বরের কথা শুনলে উদ্দীপন হবে!”

কিয়ৎকাল পরে ডাক্তার বিদায় লইতে গাত্রোত্থান করিলেন। এমন সময় শ্রীযুক্ত গিরিশচন্দ্র ঘোষ আসিলেন ও ঠাকুরের চরণধূলি লইয়া উপবিষ্ট হইলেন। ডাক্তার তাঁহাকে দেখিয়া আনন্দিত হইলেন ও আবার আসন গ্রহণ করিলেন।

ডাক্তার – আমি থাকতে উনি (গিরিশবাবু) আসবেন না! যাই চলে যাব যাব হয়েছি অমনি এসে উপস্থিত। (সকলের হাস্য)

গিরিশের সঙ্গে ডাক্তারের বিজ্ঞানসভার (Science Association) কথা হইতে লাগিল।

শ্রীরামকৃষ্ণ – আমায় একদিন সেখানে লয়ে যাবে?

ডাক্তার – তুমি সেখানে গেলে অজ্ঞান হয়ে যাবে – ঈশ্বরের আশ্চর্য কাণ্ড সব দেখে।

শ্রীরামকৃষ্ণ – বটে?

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!