উভয় সংকট
লোহারগাতী বাড়ী যাদব চন্দ্র ঢালী।
তারকের প্রিয় ভক্ত জানিত সকলি।।
গুরুপদে ভক্তি করি হরিগুণ গায়।
মাঝে মাঝে সে যাদব ওড়াকন্দি যায়।।
গুরুচাঁদ চরণেতে প্রণাম করিয়া।
ছল ছল আখি দু’টি কহিত কান্দিয়া।।
ওগো বাবা গুরুচাঁদ চরণে জানাই।
পদে যেন থাকে ভক্তি এই ভিক্ষা চাই।।
তাই শুনে গুরুচাঁদ কহিত তখন।
শুনরে যাদব তুমি আমার বচন।।
আমার বাবার ভক্ত ভালবাসে যেই।
প্রাণভরে সব কিছু আমি তারে দেই।।
যাও বাছা গৃহে চলে কোন চিন্তা নাই।
এই ভাবে ভক্তি পথে মন খাটি চাই।।
তাই শুনে সে যাদব গৃহেতে আসিত।
হাতে কাম মুখে নাম সংসার করিত।।
একদিন সে যাদব ভাবে মনে মন।
তারকেরে গৃহে এনে করাব ভোজন।।
বিলে আছে কই মাছ আনিব ধরিয়া।
গুরু সেবা করাইব সেই মাছ দিয়া।।
তাই ভেবে সে যাদব প্রভাতে জাগিয়া।
বিল মধ্যে চলিলেন পোলা হাতে নিয়া।।
পোলা দিয়া কই মাছ ধরিতে লাগিল।
বড় বড় কই মাছ অনেক ধরিল।।
তিন কুড়ি কই মাছ গণনায় হল।
তাই নিয়ে সে যাদব গৃহেতে আসিল।।
তাহার নারীকে ডেকে কহিল তখন।
ভাল ভাবে এই মাছ কর হে যতন।।
বড় বড় কই মাছ বাছিয়া বাছিয়া।
অন্য পাত্রে রাখ তুমি যতন করিয়া।।
গুরুসেবা করাইব মনেতে ভেবেছি।
তাই ভেবে এই মাছ ধরিয়া এনেছি।।
যেই দিন মম গৃহে আসিবে গোঁসাই।
এই মাছ দিয়া সেবা করাইব তাই।।
তাই শুনে তার নারী তাহাই করিল।
প্রধান প্রধান কই বারটি হইল।।
অন্য এক হাড়ী মধ্যে তাতে জল দিয়া।
সাবধানে রাখিলেন যতন করিয়া।।
মনে মনে সে যাদব তারকে ভাবিয়া।
আশা পথ পানে থাকে সতত ভাবিয়া।।
কবে মোর মনবাঞ্ছা হইবে পূরণ।
এই মাছ কবে এসে করিবে ভোজন।।
এই ভাবে পাঁচ দিন গত হয়ে গেল।
যাদবের নারী সেই আরোপে দেখিল।।
পদুমায় আসিয়াছে তারক গোঁসাই।
তথা হতে আসিতেছে দেখিলেন তাই।।
তাই দেখে সেই নারী ভাবে মনে মন।
আমাদের মনবাঞ্ছা হইবে পূরণ।।
ব্যস্ত হয়ে করিতেছে পাক আয়োজন।
সেই মাছ কুটিতেছে আনন্দিত মন।।
হেনকালে যে যাদব কোথা হতে এল।
সেই মাছ কুটিতেছে দেখিতে পাইল।।
ক্রোধভরে গালাগালি করিয়া কহিল।
গোঁসাইকে খাওয়াইব মনে আশা ছিল।।
নিজে খাবি বলে তুই এ মাছ কাটিলি।
আমার মনের আশা পুরাতে না দিলি।।
এত বলি সে যাদব জষ্টি নিয়ে হাতে।
প্রহার করেছে তার নারীর পৃষ্ঠেতে।।
প্রহার করি কত গালাগালি দিয়ে।
স্নান করিতেছে গিয়ে নদীতে নামিয়ে।।
মা’র খেয়ে সে নারী কিছু না ভাবিল।
কেন্দে কেন্দে সে নারী রন্ধন করিল।।
কাঙ্গালীকে সঙ্গে করি তারক গোঁসাই।
হেনকালে উপনীত দেখিলেন তাই।।
তাই দেখে সে নারী চরণে পড়িল।
চরণ ধরিয়া শেষে কান্দিতে লাগিল।।
কেন্দে বলে ওগো বাবা বলি তব ঠাই।
মোর মত অভাগিনী এ জগতে নাই।।
করিয়াছি অপরাধ ক্ষমা কর মোরে।
চরণ ধরিয়া বাবা বলি যে তোমারে।।
তাই দেখে তারকের চোখে আসে জল।
আধ আধ ভাষা দিয়া বলে হরি বল।।
তারক বলেছে মাগো কান্দ কি কারণ।
বড় খুধা লাগিয়াছে করিব ভোজন।।
তাহা শুনে সেই নারী চরণ ধোয়ায়ে।
বসিতে দিলেন সেথা আসন পাতিয়ে।।
স্নান করি সে যাদব গৃহ পানে ধায়।
দুর থেকে তারকেরে দেখিবারে পায়।।
তার নারী তারকের পদে পড়ে কান্দে।
তাই দেখে সে যাদব পড়িল বিপদে।।
কি যেন ভাবিয়া শেষে পালাইয়া গেল।
অন্য বাড়ী গিয়ে এক ঘরে লুকাইল।।
তারকের আজ্ঞা পেয়ে সে নারী তখন।
ছল ছল আখি দু’টি করিল রন্ধন।।
রন্ধন করিয়া সতী করি আয়োজন।
তারকের পদে গিয়ে কহিল তখন।।
সেবা করিবারে বাবা করিয়াছি ঠাই।
তোমাকে করাতে সেবা কোন ভক্তি নাই।।
তাই শুনি শ্রীতারক কহিল তখন।
কাঙ্গালীকে ডেকে বলে মধুর বচন।।
শুন শুন ও কাঙ্গালী বলি যে তোমায়।
যাদবেরে ডেকে আন গেল সে কোথায়।।
তাই শুনে সে কাঙ্গালী করিল গমন।
প্রতি ঘরে ঘরে গিয়ে করে অন্বেষণ।।
যে ঘরেতে সে যাদব লুকাইয়া ছিল।
তথা হতে যাদবেরে খুঁজিয়া আনিল।।
অপরাধী মনে ভাবি যাদব তখন।
ছল ছল আখি দু’টি ঝরে দুনয়ন।।
তারকের নিকটেতে যখন আসিল।
অমনি তারক চন্দ্র উঠিয়া দাঁড়াইল।।
পৃষ্ঠদেশ দেখাইয়া বলিল তখন।
মম পৃষ্ঠে চেয়ে দেখ ওরে বাছাধন।।
মা’কে তুমি করিয়াছ দারুণ প্রহার।
হরিচাঁদ রাখিয়াছে মম পৃষ্ঠ ‘পর।।
তাই দেখে সে যাদব চরণে পড়িল।
চরণ ধরিয়া শেষে কান্দিতে লাগিল।।
কেন্দে বলে ওগো বাবা চরণে জানাই।
এই জন্যে আমি কোন বেদনা না পাই।।
হেন বাক্য যখনেতে যাদব শুনিল।
নারীর চরণে পড়ে কান্দিতে লাগিল।।
করিয়াছি অপরাধ তোমাকে জানাই।
তোমা হেন নারী যেন জম্মে জম্মে পাই।।
তাই দেখে শ্রীতারক সবাকে সান্তাল।
শান্ত হয়ে দুই জনে সেবা করাইল।।
গুরুসেবা করি তারা আনন্দে মাতিল।
কান্দিয়া বিনোদ বলে হরি হরি বল।।