ভবঘুরেকথা
বাউল গান সাধু ফকির বয়াতী

ব্রহ্মাকারা আনন্দধারা সহস্রারে

ব্রহ্মাকারা আনন্দধারা সহস্রারে দীপ্তাকার।
তাতে ব্রহ্ম-ক্ষেত্র নিত্যভূমি, আনন্দময় সুধার ধার।।

আছে ত্রিকোণরূপে মহাযন্ত্র, বিম্ব-ঢাকা চমৎকার।
তাহে পুরুষ-নারী রূপ-মাধুরী, শম্ভু-অম্বু-বিন্দু-পার।।

হংস-তত্ত্ব, সাধন-তত্ত্ব, সোহং-তত্ত্ব সাধ্য তার।
তাতে নাড়ীমূলে ত্রিশূল ফেলে, শিবের আসন চমৎকার।।

কি মা-শক্তি রক্তবরণ, অতুলন রূপ-প্রচার।
আছে পুরুষরতন শুভ্রবরণ, যোগাযোগে কর্ণধার।।

ভাবের ভাবুক পায় না ভাবি’, ঘরে দেখে অন্ধকার।
হাউড়ে ভেবে বলে, সেই কমলে গ’লে যাওয়া সন্ধি তার।।

……………………
অধ্যাপক উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের ‘বাংলার বাউল ও বাউল গান’ গ্রন্থ থেকে এই পদটি সংগৃহিত। ১৩৬৪ বঙ্গাব্দে প্রথম প্রকাশিত এই গ্রন্থের বানান অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। লেখকের এই অস্বাধারণ সংগ্রহের জন্য তার প্রতি ভবঘুরেকথা.কম-এর অশেষ কৃতজ্ঞতা।

এই পদটি সংগ্রহ সম্পর্কে অধ্যাপক উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য মহাশয় লিখেছেন- হাউড়ে গোঁসাই ব্যক্তিগত শিক্ষাদীক্ষা, পাণ্ডিত্য ও বংশগৌরবে এই শ্রেণীর সাধকদের মধ্যে একটা লক্ষণীয় স্বাতন্ত্র্যের অধিকারী। তাঁহার গানে সংস্কৃত-ভাষাজ্ঞান, পাণ্ডিত্য এবং শিব-শক্তিবাদের গভীর তত্ত্বোপলব্ধির নিদর্শন পাওয়া যায়।

তিনি প্রথমে শাক্তমতবাদের উপাসক ছিলেন, পরে প্রহ্লাদচাঁদ গোস্বামীর উপদেশ ও প্রভাবে রসপন্থানুায়ী বৈষ্ণব সহজ-সাধনা গ্রহণ করেন। পশ্চিবঙ্গের বাউলদের মধ্যে তাঁহার নাম গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে উল্লিখিত হয়।

হাউড়ে গোঁসাই দীর্ঘজীবী ছিলেন। তাঁহার রচনায় ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধের বাংলা কাব্যের সুপরিচিত অনুপ্রাস, শ্লেষ, যমক প্রভৃতি লক্ষিত হয়।

হাউড়ে গোঁসাই-এর প্রধান শিষ্য ছিলেন নাদবিন্দু গোস্বামী। এই নাদবিন্দু গোস্বামীর জনৈক শিষ্য আমাকে ‘তত্ত্ব-সাধন-গীতাবলী’ নামে হাউড়ে গোঁসাইর কতকগুলি গানের এক ক্ষুদ্র মুদ্রিত পুস্তক ও তৎসঙ্গে হাউড়ে গোঁস্বামীর রচিত কতকগুলি গানের হস্তলিখিত সংগ্রহ-খাতা হইতে কয়েকটি গান গ্রহণ করা হইলো।

ঐ মুদ্রিত পুস্তক হইতে রচয়িতার পরিচয় উদ্ধৃত হইল- বর্ধমানের অন্তর্গত মেড়তলা নিবাসী পূজ্যপাদ হঁলধর সান্যালের ঔরসে ও পূজনীয়া শ্যাঁমাসুন্দরী দেবীর গর্ভে সন ১২০২ সালের ১৪ই আষাঢ় জন্মগ্রহণ করেন। ইনি বাল্যে নিষ্ঠাবান ও ধী-শক্তিসম্পন্ন ছিলেন।

তখন ইঁহার নাম মতিলাল সন্যাল ছিল। ইনিই পিতামাতার জ্যেষ্ঠ সন্তান ছিলেন। …বাল্যে গ্রাম্য পাঠশালাতেই প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করিয়া ১৬ বৎসর বয়সে স্বীয় জননীর নিকট দীক্ষামন্ত্র গ্রহণ করেন।

পরে স্বগ্রামনিবাসী শ্রীমৎ বশিষ্ঠানন্দ স্বামীর নিকট সংস্কৃত শাস্ত্র এবং বেদ ও তন্ত্রাদি অধ্যয়ন করিয়া শেষে শ্রীমৎ সনকানন্দ স্বামী নাম গ্রহণ করেন এবং পূর্ণাভিষিক্ত হয়েন।

…কিছুদিন পরে নদীয়া জেলার অন্তর্গত রুকুণপুর গ্রাম-নিবাসী শ্রীমৎ প্রহ্লাদানন্দ গোস্বামীর নিকট ভাগবতাদি আলোচনা এবং বৈষ্ণব ধর্ম বিষয়ে উপদেশাদি গ্রহণ করেন ও হাউড়ে গোঁসাই নাম ধারণ করেন। …কলিকাতার সন্নিকটবর্তী ইটালির পূর্বস্থিত কামারডাঙ্গা নামক স্থানে মঁধুসূদন রায়ের কৃত আশ্রমে সন ১৩১৭ সালের বৈশাখী পূর্ণিমার দিন তাঁহার ভক্তমণ্ডলীকে কাঁদাইয়া নিত্যধাম গমন করেন।

…………………….
আপনার গুরুবাড়ির সাধুসঙ্গ, আখড়া, আশ্রম, দরবার শরীফ, অসাম্প্রদায়িক ওরশের তথ্য প্রদান করে এই দিনপঞ্জিকে আরো সমৃদ্ধ করুন-
voboghurekotha@gmail.com

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!