সুখী মানুষ
-বার্ট্রান্ড রাসেল
একথায় কোনও দ্বিধা নেই যে, সুখের কিছু অংশ বাইরের ঘটনাবলী এবং কিছু অংশ নিজের ওপর নির্ভরশীল। এই বইতে আমি যে অংশ আমাদের নিজের ওপর নির্ভরশীল তা নিয়ে আলোচনা করেছি এবং তার ফলে, এই মতে উপনীত হয়েছি যে, এই অংশ সম্পর্কিত যে সমস্যা তার সমাধানের ব্যবস্থাপত্র অত্যন্ত সহজ। অনেকে মনে করেন, যার মধ্যে আমরা অবশ্যই মিস্টার ক্রাচকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারি, যার কথা আমরা পূর্বের কোনও অধ্যায়ে তুলে ধরেছি, কোনও না কোনও ধর্মবিশ্বাস ছাড়া সুখ অসম্ভব।
অনেকে মনে করেন, যারা নিজেরা অসুখী, তাদের দুঃখের কারণ খুব জটিল এবং উচ্চ বুদ্ধিবৃত্তিসূত্রজাত। আমি বিশ্বাস করি না এসব জিনিস সুখের অথবা দুঃখের কারণ হতে পারে। আমার মনে হয় সেসব শুধুই লক্ষ্মণ। যে ব্যক্তি অসুখী তিনি সাধারণত এমন এক ধর্মীয় মতবাদে বিশ্বাসী হবেন যা দুঃখের, পক্ষান্তরে যিনি সুখী তিনি সুখের কোনও ধর্ম বিশ্বাসে বিশ্বাসী হবেন।
প্রত্যেকেই তাদের সুখের এবং দুঃখের জন্যে দায়ী করেন তাঁদের বিশ্বাসকে। কিন্তু আসলে কার্যকারণ ঠিক এর বিপরীত। কিছু জিনিস অধিকাংশ লোকের সুখের জন্যে অপরিহার্য। কিন্তু এসব খুব সহজ জিনিস : খাদ্য এবং বাসস্থান, স্বাস্থ্য, ভালবাসা, সফল কাজ এবং নিজেদের সমাজের শ্রদ্ধা, কারো কারো কাছে সন্তানলাভও প্রয়োজন। যেখানে এসবের অভাব সেখানে একমাত্র ব্যতিক্রমী ব্যক্তি সুখ পেতে পারেন।
যদি এটি আমাদের কোনও ক্ষতি করে অথবা আমাদের অহংবোধ অতৃপ্ত রাখে। ভয় হচ্ছে প্রধান কারণ যার জন্যে মানুষ সত্যকে স্বীকার করতে চায় না এবং কল্পলোকের মিথ্যার আরামদায়ক আবরণে নিজেকে জড়িয়ে রাখতে ব্যস্ত হয়।
কিন্তু যেখানে এসবের ভোগ করা যাবে অথবা সুপরিচালিত প্রচেষ্টায় পাওয়া সম্ভব, সেখানেও যদি মানুষ অসুখী থাকে তবে বুঝতে হবে তিনি কোনও মনস্তাত্ত্বিক সমন্বয়হীনতায় ভুগছেন এবং তা যদি খুব গভীর হয় তাহলে তাকে মনোচিকিৎসকের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু তা যদি সাধারণ হয়, তবে সঠিক পথ অনুসরণ করলে রোগী নিজেই তা সারাতে পারবেন।
যদি বাইরের ঘটনাবলী নিশ্চিতভাবে দুর্ভাগ্যজনক না হয়, সেখানে সুখকে লাভ করা সম্ভব, যদি না তার প্রবৃত্তি এবং আকর্ষণ অন্তর্মুখী না হয়ে বহির্মুখী হয়। সুতরাং শিক্ষা এবং পারিপার্শ্বিকতার সাথে মানিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা থাকা উচিত আমাদের যাতে আমরা আত্মকেন্দ্রিক প্রবণতাকে এড়িয়ে যেতে পারি এবং সেই ভালবাসা এবং সেই আকর্ষণকে অর্জন করতে পারি যা আমাদের অবিরাম নিজের বিষয়ে ভাবনাকে দূরে রাখতে পারে।
কোনও মানুষই কারাগারে থাকার সময় সুখী হয় না এবং সেসব প্রবৃত্তি যে আমাদের নিজেদের মধ্যেই বন্দী করে রাখে, তা যে কোনও খারাপ কারাগারের সমতুল্য। এইসব প্রবৃত্তির মধ্যে কিছু কিছু খুবই সাধারণ। যেমন ভয়, ঈর্ষা, পাপের চেতনা, আত্মকরুণা এবং আত্মপ্রশংসা। এর সবগুলিতেই আমাদের কামনা নিজেকে ঘিরেই কেন্দ্রীভূত হয়, যার অর্থ বাইরের পৃথিবী নিয়ে যথার্থ কোনও আকর্ষণ থাকে না, থাকে শুধু দুশ্চিন্তা।
যদি এটি আমাদের কোনও ক্ষতি করে অথবা আমাদের অহংবোধ অতৃপ্ত রাখে। ভয় হচ্ছে প্রধান কারণ যার জন্যে মানুষ সত্যকে স্বীকার করতে চায় না এবং কল্পলোকের মিথ্যার আরামদায়ক আবরণে নিজেকে জড়িয়ে রাখতে ব্যস্ত হয়।
যদি এই অসুবিধা বাস্তব হয় এবং তার সঠিক কারণ নির্ণয় করা যায়, তাহলে তার বিশেষ কিছু করার নেই। দৃষ্টান্তস্বরূপ যদি তার কষ্ট কোনও সচেতন অথবা অচেতন পাপবোধ থেকে আসে, সে প্রথমে নিজের সচেতন মনকে এই বলে প্রবোধিত করবে যে তার নিজেকে পাপকারী বলে ভাবার কোনও কারণ নেই।
কিন্তু যে কাঁটা এসে সেই আবরণ ছিঁড়ে দেয় এবং সেই ছেঁড়া জায়গা দিয়ে ঠাণ্ডা ঝাঁপটা গায়ে লাগে এবং যে মানুষ এ ধরনের আরামে অভ্যস্ত সে অনেক বেশি কষ্ট পায় তার তুলনায় যে মানুষ প্রথম থেকে নিজেকে এসব বিষয়ে সইয়ে নিয়েছে। তার ওপর যারা নিজেদের প্রতারণা করে, তারা মনে মনে জানে তারা। কি করছে এবং তারা সবসময় একটা আতঙ্কে থাকে। যদি কোনও বিরূপ ঘটনায় তারা অনভিপ্রেত সত্যকে মেনে নিতে বাধ্য হয়।
আত্মকেন্দ্রিক প্রবৃত্তির একটা বড় ক্রটি হচ্ছে, তা জীবনে কোনও বৈচিত্র্য ঘটায় না। যে মানুষ শুধু নিজেকেই ভালবাসে, সে কারো প্রতি আসক্তির দিক থেকে উচ্ছল হয় না এ কথা সত্যি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার একাগ্রতা একই জিনিসের ওপর অপরিবর্তনীয় থাকার জন্যে তাকে বাধ্য হয়ে অসহনীয় একঘেয়েমিজনিত ক্লান্তিতে ভুগতে হয়।
যে মানুষ পাপ-চেতনায় পীড়িত হয়, মনে করতে হবে সে একধরনের আত্মপ্রেমে ভুগছে। এই বিশাল পৃথিবীতে তার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্যবোধ হচ্ছে নিজেকে পাপহীন রাখা। প্রচলিত কয়েকটি ধর্মমতের একটি বড় ত্রুটি হচ্ছে তারা এই বিশেষ ধরনের আত্মমগ্নতায় উৎসাহিত করে।
সেই মানুষ সুখী, যে বস্তুগতভাবে বাঁচেন যার স্নেহ ভালবাসা অবারিত, আকর্ষণ ও উৎসাহ বিস্মৃত, যে এর ভিতর দিয়ে এবং বিপরীতভাবে নিজেও বহু লোকের স্নেহ-ভালবাসা এবং আকর্ষণ-উৎসাহের পাত্র হয়ে ওঠে, তার ভিতর দিয়েও সুখের সন্ধান করে। ভালবাসার পাত্র হওয়া সুখের একটি প্রবল কারণ।
কিন্তু যে মানুষ ভালবাসা দাবি করে তার ওপর তা বর্ষিত হয় না। সহজভাবে বলতে গেলে যে মানুষ ভালবাসা দেয় সেই ভালবাসা পায়। কিন্তু সুদে অর্থ ধার দেওয়ার হিসাবের সাথে ভালবাসা দেওয়ার তুলনা অর্থহীন। যে পায় সেও তাকে নিখাদ ভালবাসা বলে মনে করে না।
যে মানুষ আপন খাঁচায় বন্দী থাকার জন্যে অসুখী, সে তাহলে কী করবে? যতদিন সে নিজের দুঃখের কারণ নিয়ে চিন্তা করবে, ততদিন সে আত্মকেন্দ্রিক হয়েই থাকবে, সুতরাং সে এই আবর্ত-চক্র থেকে বাইরে আসতে পারবে না। যদি তাকে এর বাইরে আসতে হয়, তাহলে বাইরের আকর্ষণ যথার্থ হওয়া চাই, কৃত্রিম উপায়ে ওষুধের মতো কোনও আকর্ষণকে প্ররোচকরূপে প্রয়োগ করা চলবে না।
যদি এই অসুবিধা বাস্তব হয় এবং তার সঠিক কারণ নির্ণয় করা যায়, তাহলে তার বিশেষ কিছু করার নেই। দৃষ্টান্তস্বরূপ যদি তার কষ্ট কোনও সচেতন অথবা অচেতন পাপবোধ থেকে আসে, সে প্রথমে নিজের সচেতন মনকে এই বলে প্রবোধিত করবে যে তার নিজেকে পাপকারী বলে ভাবার কোনও কারণ নেই।
সুখী জীবন উন্নত জীবনের এক অসাধারণ বিস্তৃতি। বৃত্তিজীবী নীতিবাদীরা আত্মবঞ্চনা নিয়ে খুব বাড়াবাড়ি করেছেন এবং তা করতে গিয়ে ভুল জায়গায় গুরুত্ব দিয়েছেন। সচেতন আত্মবঞ্চনা মানুষকে আত্মমগ্ন হতে শেখায় এবং সে কী ত্যাগ করেছে সে বিষয়ে অতিরিক্ত সচেতন করে তোলে।
এরপর, আমরা আগের অধ্যায়সমূহে যেভাবে পথের নির্দেশ দিয়েছি, সেইভাবে তার যৌক্তিক বিশ্বাসকে অচেতন মনে রোপিত করার দিকে এগিয়ে যাবো। এইসময় সে কম হোক বা বেশি মনকে প্রভাবিত করে এমন কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখবে। যদি সে পাপবোধ মন থেকে দূর করতে পারে, তা হলে সম্ভবত স্বতঃস্ফূর্তভাবে তার মনে বস্তুগত যথার্থ আকর্ষণ জাগরিত হবে।
যদি আত্মকরুণাই তার কষ্টের কারণ হয়, তাহলে তার প্রতিকারও সে একইভাবে করতে পারে, কিন্তু প্রথমে তাকে ভেবে নিতে হবে তার ক্ষেত্রে এই ব্যাপারে অসাধারণ দুর্ভাগ্যের কিছুই নেই। যদি কষ্টটা ভয় থেকে জন্ম নেয়, তাহলে তার এমন কিছু অনুশীলন করা উচিত যাতে সাহস বৃদ্ধি পায়।
স্মরণাতীত কাল থেকে যুদ্ধে সাহস দেখানো একটা বড় গুণ বলে বিবেচিত হচ্ছে এবং বালক ও যুবকদের প্রশিক্ষণের একটি বড় অংশ এমন চরিত্র গঠনের চেষ্টা করে আসছে যা যুদ্ধে নির্ভীকতা প্রদর্শন করতে পারে। কিন্তু নৈতিক সাহস এবং বুদ্ধিমত্তার সাহস এই দুটি অনেক কম চর্চিত হয়েছে, কিন্তু এদেরও নিজস্ব কৌশল রয়েছে।
আপনি প্রতিদিন অন্তত নিজের কাছে একটি করে বেদনাদায়ক সত্যকে স্বীকার করুন যা বয়স্কাউটদের প্রতিদিনের একটি করে ভাল কাজ করার মতোই প্রয়োজনীয়। এই কথাটি নিজেকে অনুভব করতে শেখান যে, সৎগুণে এবং বুদ্ধিমত্তায় আপনি আপনার সব বন্ধুদের চেয়ে অপরিসীম না হলেও, যদিও আপনি সত্যি তাঁদের চেয়ে উন্নত, তারপরও জীবন সুন্দর।
কয়েক বছর ধরে এইভাবে অনুশীলন করতে পারলে আপনি শেষ পর্যন্ত দেখবেন সত্য কথা স্বীকারে আপনার আর কোনও কুণ্ঠা নেই এবং এই অবস্থায় আপনি একটি বিস্তীর্ণ ভীতির সাম্রাজ্য থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন।
আত্মমগ্নতা দূর হলে বস্তুগত আকর্ষণ কীসে কীসে হবে তার ভার ছেড়ে দিতে হবে আপনার মনের স্বাভাবিক স্বতঃস্ফূর্ত কাজ এবং বাইরের সামগ্রিক অবস্থার ওপর। আগে থেকেই মনে করবেন না, “ডাকটিকিট সংগ্রহে মনোনিবেশ করলে সুখী হতে পারতাম।”
এবং তারপর ডাকটিকিট সংগ্রহ করতে শুরু করলেন, কিন্তু এমনও হতে পারে যে, এ কাজটা আপনার কাছে মোটেই আনন্দদায়ক হল না। যাতে যথার্থভাবেই আপনার আকর্ষণ, একমাত্র তাই আপনার কোনও কাজে লাগতে পারে। কিন্তু এ বিষয়ে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন আত্মমগ্নতা ছাড়ার সাথে সাথে যথার্থ বস্তুগত আকর্ষণ জন্ম নেবে।
সুখী জীবন উন্নত জীবনের এক অসাধারণ বিস্তৃতি। বৃত্তিজীবী নীতিবাদীরা আত্মবঞ্চনা নিয়ে খুব বাড়াবাড়ি করেছেন এবং তা করতে গিয়ে ভুল জায়গায় গুরুত্ব দিয়েছেন। সচেতন আত্মবঞ্চনা মানুষকে আত্মমগ্ন হতে শেখায় এবং সে কী ত্যাগ করেছে সে বিষয়ে অতিরিক্ত সচেতন করে তোলে। যার ফলে সে প্রায়ই নির্ধারিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে না এবং প্রায় চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়।
যে বল অন্য বলের সাথে সংঘর্ষ ছাড়া অন্য কোনও সম্পর্ক রাখতে পারে না। সব দুঃখ কোনও না কোনও বিছিন্নতা অথবা অবিচ্ছিন্নতার অভাবের ওপর নির্ভরশীল। চেতন এবং অচেতন মনের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব হলে নিজের সাথে সমাজের যে সংহতি তা নষ্ট হয়ে যায়। তখন বাইরের আকর্ষণ এবং ভালবাসা এই দুটিকে এক সূত্রে বেঁধে রাখা যায় না।
যা প্রয়োজন তা আত্মবঞ্চনা নয়। কিন্তু কোনও মানুষকে নিজের সদগুণের সাধনায় রত থেকে বাইরের আকর্ষণের দিকে নিয়ে চলা, যাতে প্রয়োজন সচেতন আত্মবঞ্চনা। আমি এই বইটি রচনা করেছি সুখবাদীর ভূমিকা নিয়ে; অর্থাৎ যে মানুষ সুখকেই মঙ্গল মনে করে, তার ভূমিকা নিয়ে। কিন্তু সুখবাদীর দৃষ্টিতে যেসব পথের কথা বলা হয়, তা সাধারণভাবে স্থির মস্তিষ্ক নীতিবাদীর পথের অনুরূপ।
নীতিবাদীরা অধিকাংশ সময়, সবক্ষেত্রে সত্য না হলেও, মনের অবস্থার ওপর। গুরুত্ব আরোপ না করে কাজের ওপর গুরুত্ব দেন। যে কাজ করে তার ওপর কাজের যে প্রতিক্রিয়া হয় তা সেই সময়ের তার মানসিক অবস্থার ওপর নির্ভরশীল। তাই ভিন্ন ভিন্ন মানসিক অবস্থায় কাজের প্রতিক্রিয়া এক নয়। যদি আপনি কোনও শিশুকে ডুবে যেতে দেখেন এবং সাহায্যের সহজাত প্রবৃত্তি থেকে তাকে উদ্ধার করেন তাহলে নৈতিকভাবে আপনাকে খারাপ ভাবা চলবে না।
পক্ষান্তরে যদি আপনি ভাবেন : ‘অসহায়কে উদ্ধার করবে”, তাহলে আপনি আগে যা ছিলেন তার চেয়ে নিকৃষ্ট হয়ে যাবেন। এই চরম উদাহরণের ক্ষেত্রে যা প্রযোজ্য, সে কথা অনেক সহজ-সরল এবং সাধারণ ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। জীবনের প্রতি যে দৃষ্টিভঙ্গী আমি অনুমোদন করছি এবং প্রচলিত নীতিবাদীরা যা অনুমোদন করেন তার মধ্যে একটা পার্থক্য রয়েছে এবং সে পার্থক্য আরো সূক্ষ্ম।
উদাহরণস্বরূপ, প্রথাগত নীতিবাদী বলবেন, ভালবাসায় স্বার্থহীন হওয়া উচিত। একদিক থেকে দেখলে কথাটা যথার্থ। বলা যায় একটা নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত তাতে কোনও স্বার্থ থাকবে না। কিন্তু এটা নিঃসন্দেহে এমন প্রকৃতির হবে যাতে এর সাফল্যের সাথেই জড়িয়ে থাকে নিজের সুখ।
যদি কোনও পুরুষ আন্তরিকভাবে কোনও নারীকে বিয়ে করতে চান তাঁর সুখ কামনা করে এবং সেই সাথে এটাও ইচ্ছা করেন যে সেই নারী খুশী হবেন কিনা তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। নিঃসন্দেহে আমরা যাদের ভালবাসি তাদের সুখী দেখতে চাই। কিন্তু তা আমাদের সুখের বিকল্প হতে পারে না।
বাস্তব সত্য হচ্ছে, যে বিরোধাভাস অহং এবং অবশিষ্ট পৃথিবীর মধ্যে বিরাজমান, যা রূপায়িত আত্মত্যাগ নীতির মধ্যে, তা শূন্যে বিলীন হয়ে যাবে যখন আমরা নিজেদের বাইরে অন্য মানুষ এবং জিনিসের মধ্যে যথার্থ আকর্ষণ খুঁজে পাব। এইসব আকর্ষণের মধ্যেই মানুষ বুঝতে পারে জীবন প্রবাহের একটা অংশ, যা বিলিয়ার্ড বলের মতো কঠিন কোনও আলাদা জিনিস নয়।
যে বল অন্য বলের সাথে সংঘর্ষ ছাড়া অন্য কোনও সম্পর্ক রাখতে পারে না। সব দুঃখ কোনও না কোনও বিছিন্নতা অথবা অবিচ্ছিন্নতার অভাবের ওপর নির্ভরশীল। চেতন এবং অচেতন মনের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব হলে নিজের সাথে সমাজের যে সংহতি তা নষ্ট হয়ে যায়। তখন বাইরের আকর্ষণ এবং ভালবাসা এই দুটিকে এক সূত্রে বেঁধে রাখা যায় না।
সেই মানুষই সুখী মানুষ যে এই দুইটির ঐক্য সাধনে ব্যর্থ হয় না, যার ব্যক্তিত্ব নিজের বিরুদ্ধেও খণ্ডিত হয়নি, পৃথিবীর বিরুদ্ধেও প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠে নি। এই মানুষই নিজেকে বিশ্বের নাগরিক বলে অনুভব করেন এবং এই বিশ্বের সব দৃশ্য এবং আনন্দ মুক্তভাবে ভোগ করেন, সে মানুষ মৃত্যুর ভয়ে ভীত নন, কারণ তিনি কখনো পরবর্তী প্রজন্ম থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন মনে করেন না। জীবন ধারার সাথে এই ধরনের অন্তর্নিহিত প্রবৃত্তিকে যুক্ত করার মধ্যেই পরম সুখ পাওয়া যায়।
……………………
সুখের সন্ধানে- বার্ট্রান্ড রাসেল।
অনুবাদক- আতা-ই-রাব্বি।
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….
……………….
আরও পড়ুন-
মানুষ কী কারণে অসুখী হয়?
বায়রনীয় অ-সুখ
বিরক্তি এবং উত্তেজনা
অবসাদ
ঈর্ষা
পাপের চেতনা
সুখলাভ কি তবু সম্ভব?
উদ্দীপনা
স্নেহ-ভালবাসা
সুখী মানুষ