-স্বামী বিবেকানন্দ
[১৮৯৯ খ্রীষ্টাব্দের মার্চ মাসে স্বামীজী এই লেখাটি মায়াবতী (আলমোড়া, হিমালয়)
অদ্বৈত আশ্রমের পরিচয়-পুস্তিকায় (Prospectus) প্রকাশ করার জন্য পত্রযোগে প্রেরণ করেন]
যাঁহার মধ্যে এই ব্রহ্মাণ্ড, যিনি এই ব্রহ্মাণ্ডে অবস্থিত, আবার যিনিই এই ব্রহ্মাণ্ড; যাঁহার মধ্যে আত্মা, যিনি এই আত্মার মধ্যে অবস্থিত, এবং যিনিই এই মানবাত্মা; তাঁহাকে, অতএব এই ব্রহ্মাণ্ডকে, আত্মস্বরূপ বলিয়া জানিলে আমাদের সমস্ত ভয় ও দুঃখের অবসান হয় এবং পরম মুক্তিলাভ হয়। যেখানেই প্রেমের প্রসারণ কিম্বা ব্যক্তিগত বা সমষ্টিগত সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের উন্নতি দেখা যায়, সেখানেই উহা-‘সর্বপ্রাণীর একত্ব’রূপ শাশ্বত সত্যের উপলব্ধি, প্রত্যক্ষানুভূতি ও কার্যকারিত্বের মধ্য দিয়াই প্রকাশিত হইয়াছে। পরাধীনতাই দুঃখ; স্বাধীনতাই সুখ।
অদ্বৈতই একমাত্র সাধনপ্রণালী, যাহা মানুষকে তাহার পূর্ণ স্বাবলম্বন প্রদান করে, এবং তাহার সমস্ত পরাধীনতা ও তৎসংশ্লিষ্ট সকল কুসংস্কার দূর করিয়া আমাদিগকে সর্বপ্রকার দুঃখ সহ্য করিবার ক্ষমতা ও কার্য করিবার সাহস প্রদান করে; পরিশেষে উহাই আমাদিগকে পরম মুক্তি লাভ করিতে সক্ষম করে।
দ্বৈতভাবের দুর্বলতা হইতে সম্পূর্ণ মুক্ত করিয়া এতদিন এই মহান্ সত্য প্রচার করা সম্ভবপর হয় নাই। এই কারণে আমাদের ধারণা-এই ভাব মানবসমাজের কল্যাণে সম্যক প্রচারিত হয় নাই।
এই মহান্ সত্যকে ব্যক্তিগত জীবনে স্বাধীন ও পূর্ণতর প্রকাশের সুযোগ দিয়া মানব-সমাজকে উন্নত করিতে আমরা হিমালয়ের ঊর্ধ্ব প্রদেশে-যেখানে ইহা প্রথম উদ্গীত হইয়া- ছিল-এই অদ্বৈত আশ্রম স্থাপন করিতেছি।
এখানে সমস্ত কুসংস্কার এবং বলহানিকারক মলিনতা হইতে অদ্বৈত ভাব মুক্ত থাকিবে, আশা করা যায়। এখানে শুধু ‘একত্বের শিক্ষা’ ছাড়া অন্য কিছুই শিক্ষা দেওয়া বা সাধন করা হইবে না। যদিও আশ্রমটি সমস্ত ধর্মমতের প্রতি সম্পূর্ণ সহানুভূতিসম্পন্ন, তবুও ইহা অদ্বৈত-কেবলমাত্র অদ্বৈত-ভাবের জন্যই উৎসর্গীকৃত হইল।
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….