ভবঘুরেকথা
শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব

শ্রীরামকৃষ্ণ কাপ্তেন, নরেন্দ্র প্রভৃতি ভক্তসঙ্গে দক্ষিণেশ্বরে
১৮৮৫, ১৩ই জুন

ঠাকুরের গলার অসুখের সূত্রপাত
শ্রীরামকৃষ্ণ দক্ষিণেশ্বরে কালীমন্দিরে সেই পূর্বপরিচিত ঘরে বিশ্রাম করিতেছেন। আজ শনিবার, ১৩ই জুন, ১৮৮৫, (৩২শে জৈষ্ঠ, ১২৯২) জৈষ্ঠ শুক্লা প্রতিপদ, জ্যৈষ্ঠ মাসের সংক্রান্তি। বেলা তিনটা। ঠাকুর খাওয়া-দাওয়ার পর ছোট খাটটিতে একটু বিশ্রাম করিতেছেন।

পণ্ডিতজী মেঝের উপর মাদুরে বসিয়া আছেন। একটি শোকাতুরা ব্রাহ্মণী ঘরের উত্তরের দরজার পাশে দাঁড়াইয়া আছেন। কিশোরীও আছেন। মাস্টার আসিয়া প্রণাম করিলেন। সঙ্গে দ্বিজ ইত্যাদি। অখিলবাবুর প্রতিবেশীও বসিয়া আছেন। তাঁহার সঙ্গে একটি আসামী ছোকরা।

ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ একটু অসুস্থ আছেন। গলায় বিচি হইয়া সর্দির ভাব। গলার অসুখের এই প্রথম সূত্রপাত।

বড় গরম পড়াতে মাস্টারেরও শরীর অসুস্থ। ঠাকুরকে সর্বদা দর্শন করিতে দক্ষিণেশ্বরে আসিতে পারেন নাই।

শ্রীরামকৃষ্ণ – এই যে তুমি এসেছ। বেশ বেলটি। তুমি কেমন আছ?

মাস্টার – আজ্ঞা, আগেকার চেয়ে একটু ভাল আছি।

শ্রীরামকৃষ্ণ – বড় গরম পড়েছে। একটু একটু বরফ খেও। আমারও বাপু বড় গরম পড়ে কষ্ট হয়েছে। গরমেতে কুলপি বরফ – এই সব বেশি খাওয়া হয়েছিল। তাই গলায় বিচি হয়েছে। গয়ারে এমন বিশ্রী গন্ধ দেখি নাই।

“মাকে বলেছি, মা! ভাল করে দাও, আর কুলপি খাব না।

“তারপর আবার বলেছি, বরফও খাব না।”

[শ্রীরামকৃষ্ণ ও সত্যকথা – তাঁহার জ্ঞানী ও ভক্তের অবস্থা ]

“মাকে যেকালে বলছি ‘খাব না’ আর খাওয়া হবে না। তবে এমন হঠাৎ ভুল হয়ে যায়। বলেছিলাম, রবিবারে মাছ খাব না। এখন একদিন ভুলে খেয়ে ফেলেছি।

“কিন্তু জেনে-শুনে হবার জো নাই। সেদিন গাড়ু নিয়ে একজনকে ঝাউতলার দিকে আসতে বললুম। এখন সে বাহ্যে গিছল, তাই আর-একজন নিয়ে এসেছিল। আমি বাহ্যে করে এসে দেখি যে, আর-একজন গাড়ু নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে গাড়ুর জল নিতে পারলুম না। কি করি? মাটি দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলুম – যতক্ষণ না সে এসে জল দিলে।

“মার পাদপদ্মে ফুল দিয়ে যখন সব ত্যাগ করতে লাগলাম, তখন বলতে লাগলাম, ‘মা! এই লও তোমার শুচি, এই লও তোমার অশুচি; এই লও তোমার ধর্ম, এই লও তোমার অধর্ম; এই লও তোমার পাপ, এই লও তোমার পুণ্য; এই লও তোমার ভাল, এই লও তোমার মন্দ; আমায় শুদ্ধাভক্তি দাও।’ কিন্তু এই লও তোমার সত্য, এই লও তোমার মিথ্যা – এ-কথা বলতে পারলাম না।”

একজন ভক্ত বরফ আনিয়াছিলেন। ঠাকুর পুনঃপুনঃ মাস্টারকে জিজ্ঞাসা করিতেছেন, “হাঁগা খাব কি?”

মাস্টার বিনীতভাবে বলিতেছেন, “আজ্ঞা, তবে মার সঙ্গে পরামর্শ না করে খাবেন না।”

ঠাকুর অবশেষে বরফ খাইলেন না।

শ্রীরামকৃষ্ণ – শুচি-অশুচি – এটি ভক্তি ভক্তের পক্ষে। জ্ঞানীর পক্ষে নয়। বিজয়ের শাশুড়ী বললে, ‘কই আমার কি হয়েছে? এখনও সকলের খেতে পারি না!’ আমি বললাম, ‘সকলের খেলেই কি জ্ঞান হয়? কুকুর যা তা খায়, তাই বলে কি কুকুর জ্ঞানী?’

(মাস্টারের প্রতি) – “আমি পাঁচ ব্যান্নন দিয়ে খাই কেন? পাছে একঘেয়ে হলে এদের (ভক্তদের) ছেড়ে দিতে হয়।

“কেশব সেনকে বললাম, আরও এগিয়ে কথা বললে তোমার দলটল থাকে না!

“জ্ঞানীর অবস্থায় দলটল মিথ্যা – স্বপ্নবৎ।…

“মাছ ছেড়ে দিলাম। প্রথম প্রথম কষ্ট হত, পরে তত কষ্ট হত না। পাখির বাসা যদি কেউ পুড়িয়ে দেয়, সে উড়ে উড়ে বেড়ায়; আকাশ আশ্রয় করে। দেহ, জগৎ – যদি ঠিক মিথ্যা বোধ হয়, তাহলে আত্মা সমাধিস্থ হয়।

“আগে ওই জ্ঞানীর অবস্থা ছিল। লোক ভাল লাগত না। হাটখোলায় অমুক একটি জ্ঞানী আছে, কি একটি ভক্ত আছে, এই শুনলাম; আবার কিছুদিন পরে শুনলাম, ওই সে মরে গেছে! তাই আর লোক ভাল লাগত না। তারপর তিনি (মা) মনকে নামালেন, ভক্তি-ভক্ততে মন রাখিয়ে দিলেন।”

মাস্টার অবাক্‌, ঠাকুরের অবস্থা পরিবর্তনের বিষয় শুনিতেছেন। এইবার ঈশ্বর মানুষ হয়ে কেন অবতার হন, তাই ঠাকুর বলিতেছেন।

[অবতার বা নরলীলার গুহ্য অর্থ – দ্বিজ ও পূর্বসংস্কার ]

শ্রীরামকৃষ্ণ (মাস্টারের প্রতি) – মনুষ্যলীলা কেন জান? এর ভিতর তাঁর কথা শুনতে পাওয়া যায়। এর ভিতর তাঁর বিলাস, এর ভিতর তিনি রসাস্বাদন করেন।

“আর সব ভক্তদের ভিতর তাঁরই একটু একটু প্রকাশ! যেমন জিনিস অনেক চুষতে চুষতে একটু রস, ফুল চুষতে চুষতে একটু মধু। (মাস্টারের প্রতি) তুমি এটা বুঝেছ?”

মাস্টার – আজ্ঞা হাঁ, বেশ বুঝেছি।

ঠাকুর দ্বিজর সহিত কথা কহিতেছেন। দ্বিজর বয়স ১৫।১৬, বাপ দ্বিতীয় পক্ষে বিবাহ করিয়াছেন। দ্বিজ প্রায় মাস্টারের সঙ্গে আসেন। ঠাকুর তাঁহাকে স্নেহ করেন। দ্বিজ বলিতেছিলেন, বাবা তাঁকে দক্ষিণেশ্বরে আসিতে দেন না।

শ্রীরামকৃষ্ণ (দ্বিজর প্রতি) – তোর ভাইরাও? আমাকে কি অবজ্ঞা করে?

দ্বিজ চুপ করিয়া আছেন।

মাস্টার – সংসারের আর দু-চার ঠোক্কর খেলে যাদের একটু-আধটু যা অবজ্ঞা আছে, চলে যাবে।

শ্রীরামকৃষ্ণ – বিমাতা আছে, ঘা (blow) তো খাচ্ছে।

সকলে একটু চুপ করিয়া আছেন।

শ্রীরামকৃষ্ণ (মাস্টারের প্রতি) – একে (দ্বিজকে) পূর্ণর সঙ্গে দেখা করিয়ে দিও না।

মাস্টার – যে আজ্ঞা। (দ্বিজর প্রতি) – পেনেটিতে যেও।

শ্রীরামকৃষ্ণ – হাঁ, তাই সব্বাইকে বলছি – একে পাঠিয়ে দিও; ওকে পাঠিয়ে দিও। (মাস্টারের প্রতি) তুমি যাবে না?

ঠাকুর পেনেটির মহোৎসবে যাইবেন। তাই ভক্তদের সেখানে যাবার কথা বলিতেছেন।

মাস্টার – আজ্ঞা, ইচ্ছা আছে।

শ্রীরামকৃষ্ণ – বড় নৌকা হবে, টলটল করবে না। গিরিশ ঘোষ যাবে না?

[‘হাঁ’ ‘না’ “Everlasting Yea – Everlasting Nay” ]

ঠাকুর দ্বিজকে একদৃষ্টে দেখিতেছেন।

শ্রীরামকৃষ্ণ – আচ্ছা এত ছোকরা আছে, এই বা আসে কেন? তুমি বল, অবশ্য আগেকার কিছু ছিল!

মাস্টার – আজ্ঞা হাঁ।

শ্রীরামকৃষ্ণ – সংস্কার। আগের জন্মে কর্ম করা আছে। সরল হয়ে শেষ জন্মে। শেষ জন্মে খ্যাপাটে ভাব থাকে।

“তবে কি জানো? – তাঁর ইচ্ছা। তঁর ‘হাঁ’তে জগতের সব হচ্চে; তঁর ‘না’তে হওয়া বন্ধ হচ্চে। মানুষের আশীর্বাদ করতে নাই কেন?

“মানুষের ইচ্ছায় কিছু হয় না, তাঁরই ইচ্ছাতে হয় – যায়!

“সেদিন কাপ্তেনের ওখানে গেলাম। রাস্তা দিয়ে ছোকরারা যাচ্ছে দেখলাম। তারা একরকমের। একটা ছোকরাকে দেখলাম, উনিশ-কুড়ি বছর বয়স, বাঁকা সিঁতে কাটা, শিস দিতে দিতে যাচ্ছে! কেউ যাচ্ছে বলতে বলতে, ‘নগেন্দ্র! ক্ষীরোদ!’

“কেউ দেখি ঘোর তমো; – বাঁশী বাজাচ্ছে, – তাতেই একটু অহংকার হয়েছে। (দ্বিজর প্রতি) যার জ্ঞান হয়েছে, তার নিন্দার ভয় কি? তার কূটস্থ বুদ্ধি – কামারের নেয়াই, তার উপর কত হাতুড়ির ঘা পড়েছে, কিছুতেই কিছু হয় না।

“আমি (অমুকের) বাপকে দেখলাম রাস্তা দিয়ে যাচ্চে।”

মাস্টার – লোকটি বেশ সরল।

শ্রীরামকৃষ্ণ – কিন্তু চোখ রাঙা।

[কাপ্তেনের চরিত্র ও শ্রীরামকৃষ্ণ – পুরুষ-প্রকৃতি যোগ ]

ঠাকুর কাপ্তেনের বাড়ি গিয়াছিলেন – সেই গল্প করিতেছেন। যে-সব ছেলেরা ঠাকুরের কাছে আসে, কাপ্তেন তাহাদের নিন্দা করিয়াছিলেন। হাজরামহাশয়ের কাছে বোধ হয় তাহাদের নিন্দা শুনিয়াছিলেন।

শ্রীরামকৃষ্ণ – কাপ্তেনের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। আমি বললাম পুরুষ আর প্রকৃতি ছাড়া আর কিছুই নাই। নারদ বলেছিলেন, হে রাম, যত পুরুষ দেখতে পাও, সব তোমার অংশ; আর যত স্ত্রী দেখতে পাও, সব সীতার অংশ।

“কাপ্তেন খুব খুশি। বললে, ‘আপনারই ঠিক বোধ হয়েছে, সব পুরুষ রামের অংশে রাম, সব স্ত্রী সীতার অংশে সীতা!’

“এই কথা এই বললে, আবার তারই পর ছোকরাদের নিন্দা আরম্ভ করলে! বলে, ‘ওরা ইংরাজী পড়ে, – যা তা খায়, ওরা তোমার কাছে সর্বদা যায়, – সে ভাল নয়। ওতে তোমার খারাপ হতে পারে। হাজরা যা একটি লোক, খুব লোক। ওদের অত যেতে দেবেন না।’ আমি প্রথমে বললাম, যায় তা কি করি?

“তারপর প্যাণ (প্রাণ) থেঁতলে দিলাম। ওর মেয়ে হাসতে লাগল। বললাম, যে লোকের বিষয়বুদ্ধি আছে, সে লোক থেকে ঈশ্বর অনেক দূর। বিষয়বুদ্ধি যদি না থাকে, সে ব্যক্তির তিনি হাতের ভিতর – অতি নিকটে।

“কাপ্তেন রাখালের কথায় বলে যে, ও সকলের বাড়িতে খায়। বুঝি হাজরার কাছে শুনেছে। তযন বললাম, লোকে হাজার তপজপ করুক, যদি বিষয়বুদ্ধি থাকে, তাহলে কিছুই হবে না; আর শূকর মাংস খেয়ে যদি ঈশ্বরে মন থাকে, সে ব্যক্তি ধন্য! তার ক্রমে ঈশ্বরলাভ হবেই। হাজরা এত তপজপ করে, কিন্তু ওর মধ্যে দালালি করবে – এই চেষ্টায় থাকে।

“তখন কাপ্তেন বলে, হাঁ, তা ও বাৎ ঠিক হ্যায়। তারপরে আমি বললাম, এই তুমি বললে, সব পুরুষ রামের অংশে রাম, সব স্ত্রী সীতার অংশে সীতা, আবার এখন এমন কথা বলছ!

“কাপ্তেন বললে, তা তো, কিন্তু তুমি সকলকে তো ভালবাস না!

“আমি বললাম, ‘আপো নারায়ণঃ’ সবই জল, কিন্তু কোনও জল খাওয়া যায়, কোনটিতে নাওয়া যায়, কোনও জলে শৌচ করে যায়। এই যে তোমার মাগ মেয়ে বসে আছে, আমি দেখছি সাক্ষাৎ আনন্দময়ী! কাপ্তেন তখন বলতে লাগল, ‘হাঁ, হাঁ, ও ঠিক হ্যায়’! তখন আবার আমার পায়ে ধরতে যায়।”

এই বলিয়া ঠাকুর হাসিতে লাগিলেন। এইবার ঠাকুর কাপ্তেনের কত গুণ, তাহা বলিতেছেন।

শ্রীরামকৃষ্ণ – কাপ্তেনের অনেক গুণ। রোজ নিত্যকর্ম, – নিজে ঠাকুর পূজা, – স্নানের মন্ত্রই কত! কাপ্তেন খুব একজন কর্মী, – পূজা জপ, আরতি, পাঠ, স্তব এ-সব নিত্যকর্ম করে।

[কাপ্তেন ও পাণ্ডিত্য – কাপ্তেন ও ঠাকুরের অবস্থা ]

“আমি কাপ্তেনকে বকতে লাগলাম; বললাম, তুমি পড়েই সব খারাপ করেছ। আর পোড়ো না!

“আমার অবস্থা কাপ্তেন বললে, উড্ডীয়মান ভাব। জীবাত্মা আর পরমাত্মা; জীবাত্মা যেন একটা পাখি, আর পরমাত্মা যেন আকাশ – চিদাকাশ। কাপ্তেন বললে, ‘তোমার জীবাত্মা চিদাকাশে উড়ে যায়, – তাই সমাধি’; (সহাস্যে) কাপ্তেন বাঙালীদের নিন্দা করলে। বললে, বাঙালীরা নির্বোধ! কাছে মাণিক রয়েছে চিনলে না!”

[গৃহস্থভক্ত ও ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ – কর্ম কত দিন ]

“কাপ্তেনের বাপ খুব ভক্ত ছিল। ইংরেজের ফৌজে সুবাদারের কাজ করত। যুদ্ধক্ষেত্রে পূজার সময়ে পূজা করত, – একহাতে শিবপূজা, একহাতে তরবার-বন্দুক!

(মাস্টারের প্রতি) “তবে কি জানো, রাতদিন বিষয়কর্ম! মাগছেলে ঘিরে রয়েছে, যখনই যাই দেখি! আবার লোকজন হিসাবের খাতা মাঝে মাঝে আনে। এক-একবার ঈশ্বরেও মন যায়। যেমন বিকারের রোগী; বিকারের ঘোর লেগেই আছে, এক-একবার চটকা ভাঙে! তখন ‘জল খাব’ ‘জল খাব’ বলে চেঁচিয়ে উঠে; আবার জল দিতে দিতে অজ্ঞান হয়ে খায়, – কোন হুঁশ থাকে না! আমি তাই ওকে বললাম, – তুমি কর্মী। কাপ্তেন বললে, ‘আজ্ঞা, আমার পূজা এই সব করতে আনন্দ হয় – জীবের কর্ম বই আর উপায় নাই।

“আমি বললাম, কিন্তু কর্ম কি চিরকাল করতে হবে? মৌমাছি ভনভন কতক্ষণ করে? যতক্ষণ না ফুলে বসে। মধুপানের সময় ভনভনানি চলে যায়। কাপ্তেন বললে, ‘আপনার মতো আমরা কি পূজা আর আর কর্ম ত্যাগ করতে পারি?’ তার কিন্তু কথার ঠিক নাই, – কখনও বলে, ‘এ-সব জড়।’ কখনও বলে, ‘এ-সব চৈতন্য।’ আমি বলি, জড় আবার কি? সবই চৈতন্য!”

[পূর্ণ ও মাস্টার – জোর করে বিবাহ ও শ্রীরামকৃষ্ণ ]

পূর্ণর কথা ঠাকুর মাস্টারকে জিজ্ঞাসা করিতেছেন।

শ্রীরামকৃষ্ণ – পূর্ণকে আর-একবার দেখলে আমার ব্যাকুলতা একটু কম পড়বে! – কি চতুর! – আমার উপর খুব টান; সে বলে, আমারও বুক কেমন করে আপনাকে দেখবার জন্য। (মাস্টারের প্রতি) তোমার স্কুল থেকে ওকে ছাড়িয়ে নিয়েছে, তাতে তোমার কি কিছু ক্ষতি হবে?

মাস্টার – যদি তাঁরা (বিদ্যাসাগর) – বলেন, তোমার জন্য ওকে স্কুল থেকে ছাড়িয়ে নিলে, – তাহলে আমার জবাব দিবার পথ আছে।

শ্রীরামকৃষ্ণ – কি বলবে?

মাস্টার – এই কথা বলব, সাধুসঙ্গে ঈশ্বরচিন্তা হয়, সে আর মন্দ কাজ নয়; আর আপনারা যে বই পড়াতে দিয়েছেন, তাতেই আছে – ঈশ্বরকে প্রাণের সহিত ভালবাসবে।

ঠাকুর হাসিতেছেন।

শ্রীরামকৃষ্ণ – কাপ্তেনের বাড়িতে ছোট নরেনকে ডাকলুম। বললাম, তোর বাড়িটা কোথায়? চল যাই। – সে বললে, ‘আসুন’। কিন্তু ভয়ে ভয়ে চলতে লাগল সঙ্গে, – পাছে বাপ জানতে পারে! (সকলের হাস্য)

(অখিলবাবুর প্রতিবেশীকে) – “হ্যাঁগা, তুমি অনেক কাল আস নাই। সাত-আট মাস হবে।”

প্রতিবেশী – আজ্ঞা, একবৎসর হবে।

শ্রীরামকৃষ্ণ – তোমার সঙ্গে আর-একটি আসতেন।

প্রতিবেশী – আজ্ঞা হাঁ, নীলমণিবাবু।

শ্রীরামকৃষ্ণ – তিনি কেন আসেন না? – একবার তাঁকে আসতে বলো, তাঁর সঙ্গে দেখা করিয়ে দিও। (প্রতিবেশীর সঙ্গী বালক দৃষ্টে) – এ-ছেলেটি কে?

প্রতিবেশী – এ-ছেলেটির বাড়ি আসামে।

শ্রীরামকৃষ্ণ – আসাম কোথা? কোন্‌ দিকে?

দ্বিজ আশুর কথা বলিতেছেন। আশুর বাবা তার বিবাহ দিবেন। আশুর ইচ্ছা নাই।

শ্রীরামকৃষ্ণ – দেখ দেখ, তার ইচ্ছা নাই, জোর করে বিবাহ দিচ্ছে।

ঠাকুর একটি ভক্তকে জ্যেষ্ঠভ্রাতাকে ভক্তি করিতে বলিতেছেন, – “জ্যেষ্ঠ-ভাই, পিতা সম, খুব মানবি।”

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!