ভবঘুরেকথা

-মোতওয়াল্লী চিলু ভূঁইয়া জালালী

: জালালী দর্শন বা উপাসনা :

মানবগণ সব সময়েই স্বর্গে বা নরকে আছে। জালালী দর্শনে কর্মই কারণ। যে যেমন কর্ম করছে, সে তেমন ফল ভোগ করছে। ধ্বংস-সৃষ্টি প্রকৃতির খেলা। ইহা বিধির বিধান। এই বিধান লংঘন সাধারণ জ্ঞান দ্বারা সম্ভব নয়।

এই সুখ-দুঃখ স্রোতের গতি কে রুদ্ধ করিবে? এমন অ-মানুষি চরিত্র কি তোমার আছে? মানবই স্বর্গ, মানবই নরক; ‘মানব আকৃতিই স্বর্গীয় আকৃতি’। ‘গাছের ফলমূল থেকে শুরু করে; চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, তারা, নদীর জল, বাঘ ভল্লুক, পশু-পাখি, বন-জঙ্গল সবই মানুষের তাবেদারী করে’।

আবার মানুষই স্বর্গ ও নরক নির্মাণ করে। সুখ দুঃখ দুইটাই তমগুণ ও রজগুণ মিশ্রিত। ইহা কেবলই জীব মনের স্রোত মাত্র। এই সুখও দুঃখ উভয়ই বর্জনীয়। নিষ্কাম কর্ম দ্বারা স্বভাবকে শুদ্ধ করতে পারলেই সকল সুখ-দুঃখ গতি রোধ করা সম্ভব।

কামনা শূন্য হইয়া আবশ্যক কর্ম করিতে হয়। জালালী (সূক্ষ্ম্ম জ্ঞান) উপাসনার দ্বারা মানব মনের অবিদ্যা জনিত অন্ধকার দূরীভূত হইয়া যায়। মানব খণ্ডে অখণ্ড শক্তির বিকাশ হইয়া মহাশক্তিতে পরিণত হয়। মানব স্রষ্টাতে বিলীন হইয়া যায়।

চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ-তারা, নদীর জল, তাঁহারই আদেশে চলে ইহা কি তোমরা জানো না? তাঁহারই আদেশে নদীর জল শুকায়ে যায়। তাঁহারই আদেশে জীবন, তাঁহারই আদেশে মরণ; এ সব কেবলই মিথ্যা? না! বিন্দুমাত্র নয়। তিনিই বিশ্ব পিতা বা বিশ্বের মা; অতীন্দ্রিয় সত্বাধারী।

এরূপ অতিমানব এক কোটির মধ্যে ৫জন মাত্র। ইন্দ্রিয় ও অতীন্দ্রিয় এই উভয় জগতের বাদশা। তাহারাই সীমালঙ্ঘনকারী ব্যক্তিদের শাস্তি দিয়ে থাকে। আবার বিপদগ্রস্থ ব্যক্তিরা তাঁহাদের নিকট প্রার্থনা করিলে যদি তাঁহাদের দয়া হয় বিপদ মুক্ত করেন। অতীন্দ্রিয় জগতেও দুই জাহানের পরিচালনার সংসদ আছে। ইহা কখনও ভেবেছ কি?

এই বায়ুময় ব্রহ্মাণ্ডেই মৃত্যুর পরে মানব নিষ্কাম দেহ বা শরীর নিয়ে চলিয়া যায়। আর কোথাও নয়! যদিও এই ইন্দ্রিয় চোখে উহা দেখতে পায় না। তবে ইহা সত্য। যেমন- ‘শব্দেরও শরীর আছে’ তেমনই ‘স্বভাবেরও একটি শরীর আছে, যখন কেহ কথা বলে তখন একটি শরীর হইয়া কর্ণে প্রবেশ করে’।

যাঁরা জালালী বা সূক্ষ্ম জ্ঞানের উপাসনা করে নাই ;ইহারা এক কোটির মধ্যে নিরানব্বই লাখ মানুষ শব্দময় ব্রহ্মাণ্ডে শব্দময় শরীর নিয়ে বায়ু সমুদ্রের মাঝেই থাকে। ইহাই নরক। ইহার ঊর্দ্ধে আর যায় না। তাঁরা আত্মজ্ঞান উপাসনা করে নাই, বিধায় ইহারা নিম্নগতি প্রাপ্ত হয়।

আর যাঁরা জালালী উপাসনা বা সূক্ষ্ম জ্ঞানের উপাসনা করিয়া ঐশ্বরিক শক্তি জাগ্রত করিয়াছেন তাহাদেরকেই অতিমানব বলে। তবে কোন ভক্ত যদি সত্যই কোনও অতীন্দ্রিয় জগতের অতিমানবকে প্রভু বলে বিশ্বাস করে ও সরল, সহজভাবে ডেকে ডেকে তাঁহাকে ভালোবাসার দ্বারা জয় করতে পারে, সেও মৃত্যুকালে তাঁর প্রভুর সাহায্যে তার আত্ম চৈতন্য জাগ্রত থাকে।

তবে যাই বলা হউক না কেন! এই বায়ুময় ব্রহ্মাণ্ডেই সবাই বিরাজিত কীটপতঙ্গ, মানব-দানব, অতিমানব, হযরত মুহাম্মদ, পবিত্র যীশু, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব, মা তাঁরা সবই, স্বর্গ আর নরক সব এখানেই।

সে স্বভাবময় ব্রহ্মাণ্ডে বাস করে। এরূপ ভক্ত এক কোটির মধ্যে এক লাখ মঙ্গলময় চরণে আশ্রয় পায়। ‘কোথায় স্বর্গ, কোথায় নরক, কে বলে তা বহুদূর! মানুষেতে স্বর্গ নরক, মানুষেতে শূরা সুর’। কর্মফল দাতা আর কেহ নয়। মানবই তার নিজ কর্ম ফল দাতাও সে আবার ভোক্তাও সে।

এই অনন্ত বায়ুময় ব্রহ্মাণ্ডেই স্বর্গ ও নরক; যিনি সয়ংম্ভু। বিশ্বপিতা ও বিশ্বমাতা এই বায়ুময় ব্রহ্মাণ্ডেই অকপটময় স্বর্গ নির্মাণ করতে সক্ষম! যেমন ব্রম্মলোক, বিষ্ণুলোক- বিষ্ণুর ভক্তদের বিষ্ণু স্বর্গে নিয়ে যাবে বা নিজ জ্ঞানময় ব্রহ্মাণ্ডেই ভক্তদের ধারণ করবেন।

শিবলোক অবস্থান করবে অথবা- মহাদেবের সূক্ষ্ম জ্যোতির্ময় শরীরে ভক্তদের ধারণ করবেন। বেহেশত অথবা- মুহম্মদ এসে তার অনুসারী ভক্তদের তার নূরানী দেহে ধরণ করে রাখবেন।

কেবল একটি আলো বা নূরের বর্ণনা ইতিহাসে প্রমাণ পাওয়া যায়। আর এই আলো যে কোনো ধর্মের অতিমানবদের ব্যবহার বা ঐ আলোতেই বিলীন দেখতে পাওয়া যায়।

তবে যাই বলা হউক না কেন! এই বায়ুময় ব্রহ্মাণ্ডেই সবাই বিরাজিত কীটপতঙ্গ, মানব-দানব, অতিমানব, হযরত মুহাম্মদ, পবিত্র যীশু, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব, মা তাঁরা সবই, স্বর্গ আর নরক সব এখানেই।

মৃত্যুর পরে যাঁর যাঁর উপাস্য প্রভুর আশ্রয়ে থাকেন। ইহা এই পৃথিবীর বাহিরেও যেমনটি হতে পারে, আবার অতীন্দ্রিয় মানবদের অপূর্ব আলোকময় বা জ্যোতির্ময় সত্তাতে হতে পারে। উভয়টিই সম্ভব।

মূল বিষয় মানুষের মধ্যেই লুকিয়ে আছে জাগ্রত শক্তি। যেমনটি দেখেছি যীশু, কৃষ্ণ, মুহাম্মদ, মা দুর্গা বা কালীর অলৌকিক কার্যাবলীর দ্বারা। ওখানে ভগবান বা প্রভুর সরাসরিভাবে কোনও বাস্তবভিত্তিক প্রমাণ আজও পাওয়া যায় নাই।

কেবল একটি আলো বা নূরের বর্ণনা ইতিহাসে প্রমাণ পাওয়া যায়। আর এই আলো যে কোনো ধর্মের অতিমানবদের ব্যবহার বা ঐ আলোতেই বিলীন দেখতে পাওয়া যায়।

এই আলোর অধিকারীই অতীন্দ্রিয় বা পবিত্র মানব। তবে আবার যদি ভাগ্যগুণে অতীন্দ্রিয় জগতের মহাপ্রভুর সঙ্গে দেখার সুযোগ হয় ইহা ভাল করে জিজ্ঞাসা করে আপনাদের বলব। ইহা জালালী মত।

………………………………….……………..
জালালী দর্শন সম্পর্কে জানতে আরো পড়ুন-
মৃত্যু ও পরকাল

সৃষ্টিতত্ত্ব
পুনর্জন্ম
স্বর্গ
নরক
দ্বৈত-অদ্বৈত-বিশিষ্ট অদ্বৈত
আত্মজ্ঞান সাধনায় চারটি ধাপ বা স্তর
স্থূল
স্থূল-২

…………………………..
-জালালী উপাসনা বা দর্শন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!