ভবঘুরেকথা
মুক্তির প্রত্যাশা আত্মদর্শন স্বরূপদর্শন ত্যাগ

জীবাত্মা ও পরমাত্মা

-মেঘনা কুণ্ডু

আজ আমরা একটি বিতর্কমূলক বিষয়ের আংশিক দিক নিয়ে আলোচনা করবো। এর পরিধি বৃহৎ। আর এটিকে ‘বিতর্কমূলক’ বলার কারণ হলো, এই বিষয়টিকে নিয়ে অনেকের অন্তরেই দ্বন্দ্ব রয়েছে। কারণ এটি সম্পূর্ণ বিশ্বাসযোগ্য বিষয় হওয়া সত্ত্বেও বিশ্বাস করেই উঠতে পারেন না,কেনো করেন না, এ নিয়ে পরে বলছি।

যে বিষয়টি আজকের আলোচ্য সেটি হলো ‘জীবাত্মা’।

এই ‘জীবাত্মা’ শব্দের অর্থ কি?

’জীবাত্মা’ শব্দটির দু’ধরণের অর্থ হতে পারে।

১. এর আক্ষরিক অর্থ।
২. এর অন্তর্নিহিত অর্থ।

 

১. আক্ষরিক অর্থ:

‘জীবাত্মা’ শব্দের আক্ষরিক অর্থ হলো, জীবের মধ্যে থাকা এক অদ্ভুত শক্তি, অর্থাৎ যার দ্বারা জীব জীবন্ত, তাই হলো- ‘জীবাত্মা’।

 

২. অন্তর্নিহিত অর্থ:

ঈশ্বর কর্তৃক সৃষ্ট এমন সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম এক বিষয়, যা জীবের চেতনা বৃত্তির কারণস্বরূপ, তাই হলো ‘জীবাত্মা’। আর জীবাত্মা বিষয়টিকে উপলব্ধি করার এক এবং একমাত্র মার্গ হলো হৃদয়।

 

জীবাত্মার পরিভাষা:

যদি এই ‘জীবাত্মা’ শব্দটিকে বিশ্লেষণ করে দেখি তাহলে- জীব + আত্মা = জীবাত্মা।

জীবাত্মা’কে জানতে হলে, ‘আত্মা’ সম্পর্কে ধারণা থাকা আবশ্যক। অনেকেই মনে করেন যে, আত্মা’কে চোখে দেখা যায় না বলে হয়তো আত্মার অস্তিত্ব নেই। কিন্তু এটি সত্য নয়। কারণ, বায়ুকেও আমরা চোখে দেখতে পাই না।

যখন জোরালো বায়ুর প্রভাবে গাছের পাতাগুলো নড়ে ওঠে, তখনই বিশ্বাস করি যে বায়ু অস্তিত্ব আছে। কিন্তু সর্বদা তো বায়ুর শক্তি একপ্রকার থাকে না। তাই আর গাছের পাতাগুলোও নড়ে না। তখন কি ভাবা উচিৎ যে বায়ু অস্তিত্বহীন?

উত্তর- নাহ্। প্রকৃতপক্ষে এ পৃথিবীপৃষ্ঠে এবং এর বাইরে এমন অনেক কিছুই রয়েছে যা খালি চোখে দেখা যায় না। এমন কিছু, যার কোনো চাক্ষুষ প্রমাণ নেই, যা শুধু অনুভব’ই করা যেতে পারে। তারমধ্যে ‘আত্মা’-ও একটি রহস্যজনক বিষয়, যার তল খুঁজে পাওয়া যায় না।

তবে ‘আত্মা’ সূক্ষ্ম হলেও এটি ‘মূর্ত’। অর্থাৎ ‘concrete’। আর ‘জীবাত্মা’ হলো, ‘মূর্ত প্রেত’, অর্থাৎ ‘figured soul’। ‘জীবাত্মা’ হলো জীবদেহের পরিচালক।

 

ঈশ্বর ও আত্মা:

এবার প্রশ্ন হলো, ঈশ্বর ও আত্মা কি এক না ভিন্ন?

এর উত্তর হলো- ঈশ্বর এবং আত্মা এক; ভিন্ন নয়। কারণ, ঈশ্বরের অপর নাম পরমাত্মা। অর্থাৎ পরম + আত্মা = পরমাত্মা।

পরমাত্মা হলো যে আত্মা পরম অর্থাৎ supreme বা চূড়ান্ত ও প্রেমময় এবং সর্বশক্তিমান। এই পরমাত্মা সর্বোত্তম ও সর্বোচ্চ স্তরের ‘আত্মা’। তাই ঈশ্বর ও আত্মার মধ্যে কোনো তফাৎ নেই।

 

পরমাত্মা ও জীবাত্মা:

এই পরমাত্মা থেকেই জীবাত্মার সৃষ্টি। প্রতিটি জীবাত্মার মূলেই রয়েছেন পরমাত্মা। আমাদের পৃথিবীতে বসবাসকারী প্রতিটি জীবদেহ জীবাত্মা দ্বারা পরিচালিত হয়। পরমাত্মা প্রতিটি জীবাত্মাকে ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্যপূর্তির জন্য প্রেরণ করেন এই ধরাধামে।

বিখ্যাত লেখক খোরশেদ ভাবনগরীর ‘The Laws of Spirit World’-বইটিতে বলা হয়েছে, সম্ভাব্য ৩টি বিশেষ কারণের জন্য জীবাত্মার পৃথিবীতে অবতরণ ঘটে। এগুলি হলো-

১. প্রিয়জনের রক্ষা করতে।
২. পূর্বজন্মের অসমাপ্ত কাজের সমাপ্তি ঘটাতে।
৩. আধ্যাত্মিক কার্যক্রমের তথা পাপ-পুণ্যের ফলভোগ করবার জন্য।

 

জীবাত্মার উদ্দেশ্য:

আমাদের পৃথিবী একটি পাঠশালা। এই পাঠশালায় জীবাত্মা খুব কম সময়ের জন্যই প্রেরিত হয়ে থাকে। খুব কম সময়ের জন্যই প্রেরিত হয় বলে জীবাত্মার মূল উদ্দেশ্য হলো বহুমূল্যবান সময়ের অপচয় না করে ঈশ্বরপ্রদত্ত কর্মজীবন সাধন করা। পৃথিবীতে ঘটমান বিষয়গুলোর প্রভাবে জীবাত্মাকে দুটি স্তরে বিভক্ত করা যেতে পারে-

১. উচ্চ।
২. দুষ্ট।

কোনো জীবাত্মা’ই জন্মগতভাবে দুষ্ট হয় না, পৃথিবীর কুপ্রভাবে তারা দুষ্ট হয়। এ পৃথিবীতে মিলেমিশে বসবাস করা সম্ভব নয়, তবে বোঝাপড়া করে থাকা সম্ভব। কারণ দুষ্ট ও উচ্চ-আত্মা কখনোই মিলে থাকতে পারে না। পৃথিবীতে দুষ্ট আত্মার উদ্দেশ্য হলো, নিজের পাপকর্মগুলোকে স্বীকার করে আনন্দের সাথে তার ফলভোগ করা ও ঈশ্বরসেবার মাধ্যমে আত্মশুদ্ধিকরণ।

আর উচ্চ-আত্মার উদ্দেশ্য হলো, নিজেকে আরও উচ্চতর করা এবং এই দুষ্ট আত্মার প্রতি নিঃস্বার্থ ভালোবাসার সহিত সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ ও তাদের উর্ধ্বমুখী করে তুলতে সহযোগীতা করা।

এই ছিল জীবাত্মা’র আংশিক আলোচনা। পরমাত্মার কাছে আপনাদের সুস্থতা কামনা করি, সকলে সাবধানে থাকবেন। ধন্যবাদ।।

…………………………………
পুনঃপ্রচারে বিনীত -মেঘনা কুণ্ডু

…………………….
আপনার গুরুবাড়ির সাধুসঙ্গ, আখড়া, আশ্রম, দরবার শরীফ, অসাম্প্রদায়িক ওরশের তথ্য প্রদান করে এই দিনপঞ্জিকে আরো সমৃদ্ধ করুন- voboghurekotha@gmail.com

……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….

Related Articles

1 Comment

Avarage Rating:
  • 0 / 10
  • aashish Karmakaar , সোমবার ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২ @ ১০:২৭ অপরাহ্ণ

    Mohaaprosad হল parom atma এর খাদ্য

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!