ভবঘুরেকথা
হরিচাঁদ ঠাকুর

-মূর্শেদূল কাইয়ুম মেরাজ

মতুয়া দ্বাদশ আজ্ঞা:

১১ মার্চ ১৮১২ সালে অবিভক্ত বাংলার গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী থানার ওঢ়াকাঁন্দির সফলাডাঙ্গা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন হরিচাঁদ ঠাকুর। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ না হলেও নিজের বৈষ্ণব পরিবার ও বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করার সুবাদে সনাতন ও বৌদ্ধ শাস্ত্র সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেন। তাঁর প্রচলিত প্রেমময় সাধন পদ্ধতিকে বলা হতো মতুয়া বা মতুয়াবাদ।

তার অনুসারিরা বিশ্বাস করেন শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর কলি যুগের শেষ এবং শ্রীহরির পূর্ণ অবতার। তাই তাকে পূর্ণব্রহ্ম বলা হয়। তিনি সমাজের নিপিড়িত, অত্যাচারিত ও বঞ্চিত মানুষের ত্রাণকর্তারূপে ধরাধামে আসেন। তার অনুসারীদের জন্য তিনি প্রেমভক্তিতে হরিনামে মাতোয়ারা হওয়ার যে সহজতম সাধন পদ্ধতি প্রবর্তন করেছেন তা আজো তার ভক্তদের মাতোয়ারা করে রেখেছে।

শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের জীবনী নিয়ে কবি রসরাজ তারকচন্দ্র সরকার শ্রীশ্রীহরিলীলামৃত নামক গ্রন্থ রচনা করেন। গ্রন্থে মতুয়া মতে অবশ্য পালনীয় শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের বারটি আদেশের বর্ণনা পাওয়া যায়। এই আদেশসমূহই মতুয়া দ্বাদশ আজ্ঞা নামে পরিচিত-

১. সদা সত্য কথা বলিবে।
২. পরস্ত্রীকে মাতৃজ্ঞান করিবে।
৩. পিতা-মাতাকে ভক্তি করিবে।
৪. জগৎকে প্রেম করিবে।
৫. চরিত্র পবিত্র ব্যক্তির প্রতি জাতিভেদ করিবে না।
৬. কাহারও ধর্ম নিন্দা করিবে না।
৭. বাহ্য অঙ্গ সাধু সাজ ত্যাগ করিবে।
৮. হাতে কাজ মুখে নাম করিবে।
৯. শ্রী শ্রী হরি মন্দির প্রতিষ্ঠা করিবে।
১০. ষড়রিপু হইতে সাবধান থাকিবে।
১১. দৈনিক প্রার্থনা করিবে।
১২. ঈশ্বরকে আত্মদান করিবে।

শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের দ্বাদশ আজ্ঞা শ্রীভগবান চন্দ্র বিশ্বাস ছন্দে লিখেছেন-

সদা সত্য বলো, সৎ পথে চলো, সত্যের করো সাধন।
পর নারী প্রতি, রাখিও ভকতি, জননী তুল্য ধারণা।।
মাতা পিতা গুরু, তথা হ’তে শুরু, করিবে ভক্তি শিক্ষা।
জগতের জীবে, প্রেম আচরিবে, লইবে প্রেমেতে দীক্ষা।।


জাতি ভেদ জ্ঞান, জানিও অজ্ঞান, সাধুজনে হবে নত।
সাধনার বলে, ষড় রিপু দলে, সবে কর বশীভূত।।
পর ধর্ম প্রতি, সম অনুভূতি, প্রকাশিতে নিও শিক্ষা।
বহিরঙ্গ শোভা, নহে মনোলোভা, হৃদয়ে ধর্মের দীক্ষা।।


কাজ ক’রো হাতে, হরিনাম সাথে, মুখে জপ ত্যজি লাজ।
করো ঘরে ঘরে, হৃদয় বাহিরে, হরি মন্দিরের কাজ।।
প্রতি দিবসেতে, হরি প্রেমে মেতে, প্রার্থনা করিও সবে।
জগৎ ঈশ্বরে, আত্মদান করে, চির ধন্য হয়ে র’বে।।

https://youtu.be/Erl84jwAZOE
হরিচাঁদ ঠাকুর বারুণী উৎসব ২০১৭

সপ্ত নিষেধাজ্ঞা:
কবি রসরাজ তারকচন্দ্র সরকার রচিত শ্রীশ্রীহরিলীলামৃত নামক গ্রন্থ-এ দ্বাদশ আজ্ঞার পাশাপাশি পাওয়া যায় সাতটি নিষেধাজ্ঞা। যা সপ্ত নিষেধাজ্ঞা নামে পরিচিত-

১. ভিন্ন গুরু ও ভিন্ন দল না করা।
২. নারী দিয়ে অঙ্গ সেবা না করা।
৩. পরনারীকে মাতৃজ্ঞান করে দূরে থাকা।
৪. পরিহাস বাচালতা না করা।
৫. মদ গাঁজা সেবন না করা ও চুরি না করা।
৬. তাস-দাবা-জুয়া না খেলা।
৭. কাউকে (অর্থাৎ দেব-দেবীর প্রতি) ভয় না করা।

https://youtu.be/f2FdqBnASs0
হরিচাঁদ ঠাকুর বারুণী উৎসব ২০১৭

……………………………
আরো পড়ুন:
গুরুচাঁদের বারো গোঁসাই: এক
গুরুচাঁদের বারো গোঁসাই: দুই
গুরুচাঁদের বারো গোঁসাই: তিন

শ্রীশ্রী গুরুচাঁদ ঠাকুর ও নবযুগের যাত্রা: এক
শ্রীশ্রী গুরুচাঁদ ঠাকুর ও নবযুগের যাত্রা: দুই
শ্রীশ্রী গুরুচাঁদ ঠাকুর ও নবযুগের যাত্রা: তিন

তারকচাঁদের চরিত্রসুধা
অশ্বিনী চরিত্রসুধা
গুরুচাঁদ চরিত
মহান ধর্মগুরু হরিচাঁদ নিয়ে প্রাথমিক পাঠ
হরিলীলামৃত
তিনকড়ি মিয়া গোস্বামী
শ্রী ব্রজমোহন ঠাকুর

……………………………
আরো পড়ুন:

মতুয়া ধর্ম দর্শনের সারমর্ম
মতুয়া মতাদর্শে বিবাহ ও শ্রদ্ধানুষ্ঠান
মতুয়াদের ভগবান কে?
নম:শূদ্রদের পূর্ব পরিচয়: এক
নম:শূদ্রদের পূর্ব পরিচয়: দুই
মতুয়া মতাদর্শে সামাজিক ক্রিয়া

Related Articles

1 Comment

Avarage Rating:
  • 0 / 10
  • Jasamanta Halder , সোমবার ২৭ মার্চ ২০২৩ @ ৮:০৫ অপরাহ্ণ

    Joyhoribol, IWants some books about matua.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!