-প্রবাল চক্রবর্তী
হিংসায় উন্মত্ত পৃথিবীতে শান্তি খুঁজছেন? সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ আপনাকে প্রতিনিয়ত ক্ষতবিক্ষত করছে? আধুনিক জীবনযাপন আপনাকে ক্লান্ত, বিষন্ন করে তুলছে প্রতিদিন? একটি প্রশ্নেরও উত্তর যদি হয় ‘হ্যাঁ’ তাহলে এই লেখাটি আপনারই জন্য…
হাওড়া থেকে গোঘাট লোকালে চড়ে (সারাদিনে মাত্র পাঁচটি) গোঘাট স্টেশনে নেমে আমরা পৌঁছে গিয়েছিলাম ওই স্টেশন থেকে ৯.৫ কিমি দূরত্বে আনুড় গ্রামের গুরুছায়া আশ্রমে। আশ্রমের প্রাণপুরুষ শ্রদ্ধেয় ফকির সাদেক আলীর সঙ্গে পরিচয় না হলে জানতেই পারতাম না শান্তির ঠিকানা, আধ্যাত্মিকতার জীবন্ত দর্শন।
ছোট্ট জমির ওপর পুকর ঘেঁষে সবুজে সবুজময় গুরুছায়া আশ্রম। ধর্ম, বর্ণ, জাতি, লিঙ্গ, বয়স, পেশা, কোনও ভেদ নেই এই আশ্রমের। কেবল মদ্যপান এবং গোমাংস ভক্ষন কঠোরতমভাবে নিষিদ্ধ।
আশ্রমে হাওড়ার লিলুয়া থেকে এসেছিলেন লোকসঙ্গীতশিল্পী শ্রী সঞ্জয় রায়। তাঁর মতে, “ফকির সাদেক আলীর কাছে এসে আমি খুঁজে পাচ্ছি তত্বগানের জীবন্ত অর্থ।” বাঁকুড়ার কোতুলপুর থেকে আসা পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষকের মতে,
“ফকির সাদেক আলীর মতন সহজভাবে আধ্যাত্মিক জ্ঞানকে এত সরল ভঙ্গিতে জনসাধারণের কাছে পরিবেশন করতে দেখিনি কাউকে; শুনেছি মহাত্মা যীশু আর যুগাবতার শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ দেব নাকি এভাবেই আধ্যাত্মিক প্রচার করতেন। আশ্রমিক রোশনারা খাতুন বলেন, ফকির সাহেবই আমার ইষ্ট।
অথচ বছর পঁচিশেক আগেও সাদেক ছিলেন আর পাঁচজনের মতন গৃহী মানুষ। স্ত্রী এক পুত্র ও এক কন্যা নিয়ে বাস করতেন হুগলি জেলার আরামবাগে। চাকরি করতেন পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ পর্ষদে। অফিসে সুনাম ছিল সততা ও সাহসিকতার জন্য। দীর্ঘদিন চাকরি করেছেন সাফল্যের সঙ্গে।
চলুন না একবার ঘুরে আসা যাক এই জীবনতীর্থে। প্রতিবছরের ন্যায় আগামী আট ও নয়ই ফেব্রুয়ারি গুরুছায়া আশ্রমের মহামিলন উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। এই উৎসবে গুরুছায়া আশ্রমে সকলের অবারিত দ্বার।
অবশেষে এলো দয়ালের ডাক। বীরভূমের পাথরচাপুরির দাতা বাবার মাজারে সম্পূর্ণ এক চিল্লা কপর্দকশূন্য অবস্থায় পরমানন্দে কাটানোর পর উপলব্ধি করেন পরম করুনাময়ের অস্তিত্ব। রহমান কথা রাখেন। ভক্তকে বুকে রাখেন, তাঁর সমস্ত দুঃখ কষ্ট মোচন করেন, এই বিশ্বাস দৃঢ় হতেই সরাসরি অফিসে গিয়ে পদত্যাগ করেন!!
চমকে যান কর্তৃপক্ষ, “কী এমন গুপ্তধন পেয়েছেন সাদেকবাবু যে এক কথায় সরকারি চাকরি ছেড়ে দিতে কুণ্ঠা করলেন না?” বসানো হলো বিভাগীয় তদন্ত কমিশন।
গুপ্তধনের কথা শুনে চমকে গেলেন অফিসাররা। সাদেক আলীর ফকিরি জীবন শুরু হলো। দারিদ্র, বিপদ, দুর্নাম, বিবিধ আগুনে পুড়িয়ে পরমদয়াল তাঁকে তৈরি করে নিয়েছেন নিজের নিশানবাহক হিসেবে।
বহু জায়গা ঘুরে বিগত ষোল বছর ধরে গুরুছায়া আশ্রম চলছে হুগলিজেলার কামারপুকুরের (শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের জমস্থান) আনুড় গ্রামে। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশে দৃষ্টিনন্দন আশ্রমে পাঁচটি গরু আর শতাধিক শ্বেতকপোতকে অপত্যস্নেহে পালন করছেন সাদেক সাহেব।
চলুন না একবার ঘুরে আসা যাক এই জীবনতীর্থে। প্রতিবছরের ন্যায় আগামী আট ও নয়ই ফেব্রুয়ারি গুরুছায়া আশ্রমের মহামিলন উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। এই উৎসবে গুরুছায়া আশ্রমে সকলের অবারিত দ্বার।
দুটি ঈদ, শব-এ-বরাত, শব-এ-কদর, শব-এ-মেরাজ, আশুরা ও রবিউল আউয়াল অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ অনুষ্ঠান। এছাড়াও প্রতি মাসে সাধুসঙ্গ এবং বিভিন্ন বৈষ্ণব উৎসব উদযাপিত হয়।
……………………………….
ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদ-সাধুগুরু নিয়ে লিখুন ভবঘুরেকথা.কম-এ
লেখা পাঠিয়ে দিন- voboghurekotha@gmail.com
……………………………….
………………….
আরও পড়ুন-
গুরুছায়া আশ্রম
রহস্যময় কামাখ্যা মন্দির
রহস্যময় জ্ঞানগঞ্জ