বড় বড় মহাপুরুষরা দেখবে প্রায়ই মৌনী হয়ে থাকেন। বাকসংযমের ফলে তাঁদের এমন শক্তি এসে যায় যে, দেখা যায়, মৌনী থাকার পর তাঁরা যাকে যা বলেন সেটা ফলে যায়। সাধু মহাপুরুষ ছাড়াও, অধ্যাত্ম জগতের বাইরেও অর্থাৎ জাগতিক ক্ষেত্রেও যাঁরা বড় হয়েছেন, মহাপুরুষের পর্যায়ে উন্নীত হয়েছেন, তাঁদের জীবনেও দেখবে অনেকেই কিছু সময় করে মৌনব্রত অবলম্বন করেছেন, মৌন থাকা অভ্যাস করেছেন।
মহাত্মা গান্ধী তো প্রত্যেক বছর কিছুদিন করে মৌনী থাকতেন। আবার বেশি কথা বলার কত দোষ দেখো- আশ্রমে থিয়েটার হচ্ছে- তোমাদের মতই সব অল্প বয়সের ছেলেরা দেখছে, কিন্তু থিয়েটার কি দেখছে? কেবল কলরোল করছে। সামনে দিয়ে কেউ বেরিয়ে গেল, তা তাকে উদ্দেশ্য ক’রে ঠাট্টা করল কি অযথা একটা কিছু বলে দিল।
অনর্গল বকে যাচ্ছে, কী যে বলছে তা হয়ত নিজেরাই বোঝে না- নিজেরাও দেখছে না, পরকেও দেখতে দেয় না। শত চেষ্টা ক’রেও তাদের থামানো যায় না। ফলে ড্রপ ফেলে দিতে হল। কি অভদ্রতা বলো তো? তোমাদেরই আনন্দ দেবার জন্যে থিয়েটার হচ্ছে, কিন্তু তোমরাই দেখতে পেলে না। সব পণ্ড হল কেবল অনর্গল বৃথা কথা বলার জন্যে।
শিশুরা একরকম কলরোল করে- তারা কিছু বোঝে না। শিশুমন, কাজেই সেটা মেনে নেওয়া যায়- কিন্তু তোমরা তো ঠিক শিশু নও, তোমাদের বোধ হয়েছে, তোমরা যদি শিশুদের মত কলরোল কর তো সেটা কি শোভনীয় হয়?
ভালো আলোচনা করবে, যার যেদিকে taste সে সেই বিষয়েরই আলোচনা করবে।
অভদ্র ভাষা ব্যবহার, অলস সময় কাটানো এগুলো যেন এখন মজ্জাগত হয়ে গেছে। এগুলো থেকে সাবধান হবে। এখানে আমাদের এই আশ্রমের স্কুলে যারা পড়ছ তাদের কাছে এটুকু আশা করব যে, তারা অলস ছেলেদের মত এরকম অভদ্র আচরণ করবে না, বিশেষ ক’রে মায়েদের প্রতি তোমাদের যেন একটা সম্ভ্রম বোধ সব সময় বজায় থাকে।
আমাদের একটি সাধু ছেলে সেদিন দিল্লী থেকে ঘুরে এসে বললে, সেখানে একদিন বাঙালী পল্লী দিয়ে তারা বেড়াতে যাচ্ছিল, সেই পাড়ার কতকগুলি ছেলে তাদের গেরুয়াধারী দেখে ব্যঙ্গের সুরে একটা remark করল।
অথচ অন্য যে সব অবাঙালী পাড়ার মধ্যে দিয়ে তারা যাতায়াত করেছে সে সব পাড়ার সর্বত্র অবাঙালী ছেলেরা তাদের দেখা মাত্র “নমস্তে মহারাজ” বলে কত ভদ্রভাবে সম্বোধন করেছে।
যে সাধুটিকে বাঙালী ছেলেরা অপমান করেছিল সে সাধুটি সঙ্গে সঙ্গে ওদের জিজ্ঞাসা করেছিল- তোমরা বোধ হয় বাঙালী? ছেলেগুলি প্রশ্ন করলে, কী ক’রে বুঝলেন? সাধুটি বললো, তোমাদের ভাষায়।
কি লজ্জার কথা বল তো! এতে কি আমাদের খুব সুনাম হচ্ছে? এ-সবই ঐ বেশি কথা বলার ফল- স্বভাব খুব হাল্কা হলে- ভাল চিন্তা সৎ চিন্তা করতে পারে না।
তিনি সত্য-শিব-সুন্দর, তাহলে এই অসত্য অশিব অসুন্দর এসব এল কোথা থেকে? সমুদ্রে যদি কিছুটা নর্দমার জল গিয়ে পড়ে তাহলে সেটাও সমুদ্রের রূপ পেয়ে যায়, সমুদ্র হয়ে যায়, তার নিজের অস্তিত্ব কিছু থাকে না। তেমনি তাঁর ভেতর কী আছে বলা যাবে না। যদি অসত্য অশিব অসুন্দর কিছু থাকেও তাহলে সেটাও হয়ে যাবে সত্য শিব সুন্দরেরই রূপ।
………………………………….
শ্রীঅর্চনাপুরী মাতার ‘ছড়ানো মুক্তো’থেকে বর্তমান পত্রিকা থেকে সংকলিত
আরও আধ্যাত্মিক তথ্য পেতে ভারতের সাধক-সাধিকা
পুণঃপ্রচারে বিনীত-প্রণয় সেন