ভবঘুরেকথা
ঋষি অরবিন্দ

বীর যোদ্ধা করে তোল আমাদের, আমরা তাই হতে চাই। অতীত আরো বেঁচে থাকতে চায়, তার বিরুদ্ধে যে ভবিষ্যৎ জন্ম নিতে চলেছে তার মহাযুদ্ধ আমরা যেন সফল করে তুলতে পারি- যাতে নূতন সব জিনিসের প্রকাশ হয়, আমরাও তাদের গ্রহণ করবার জন্য প্রস্তুত থাকি।

আমরা যা শিক্ষা দিতে চাই তা কেবল একটি মানসিক আদর্শ নয়, এ জীবন সম্বন্ধে এক নূতন ধারণা এবং চেতনার স্পষ্ট এক উপলব্ধি। এই উপলব্ধি সবার কাছে নূতন এবং অন্যকে শিক্ষা দেওয়ার একমাত্র সত্যকার পদ্ধতি হবে নিজে এই নূতন চেতনায় বাস করা এবং নিজেকে এর দ্বারা রূপান্তরিত হতে দেওয়া।

আমাদের অতীত ও বর্ত্তমানের যে সমস্ত বিন্যাসের ফলে সাধারণ প্রাকৃত ও বুদ্ধিবৃত্তিযুক্ত মানুষ গড়ে উঠেছে সে সবকে খণ্ড বিখণ্ড করা এবং আমাদের মধ্যে নতুন এক অন্তর্দৃষ্টির কেন্দ্র ও নতুন কর্মধারার এক জগত সৃষ্টি করা- ন্যূনকল্পে তাই হবে আমাদের যোগের প্রস্তাবনা।

ক্রমোন্নতি করতে হলে তোমাকে পুরানো সমস্ত সংস্কার ভেঙে ফেলতে হবে এবং আগে থেকে গড়ে তোলা ধারণাসমূহ নির্মমভাবে চূর্ণ করে ফেলতে হবে। পূর্বকল্পিত ধারণাসমূহ হল অভ্যাসগত মানসিক গঠনাবলী যার মধ্যে তুমি বাস কর।

এগুলি দৃঢ়প্রতিষ্ঠ এবং দুর্ভেদ্য দূর্গ স্বরূপ হয়ে ওঠে এবং যেহেতু এগুলি দৃঢ়স্থায়ী, আর অগ্রগতি হতে পারে না। দৃঢ়স্থায়ী যা কিছু তার প্রগতি সম্ভব নয়। সেজন্য উপদেশ হল যে সমস্ত পূর্বকল্পিত ধারণা ও দৃঢ় মানসিক বিন্যাসসমূহ নষ্ট করে ফেলা। আর তাই হবে নতুন ভাব ও চিন্তারাজির সৃষ্টি করার সত্যকার উপায়; যে চিন্তাধারা হবে সক্রিয় এবং সৃজনশীল।

আমরা পৃথিবীর ইতিহাসের এক চরম সন্ধিক্ষণে উপস্থিত। পৃথিবী এখন অতিমানসিক সত্তার আবির্ভাবের জন্য তৈরি হচ্ছে। ফলে জীবনযাত্রার পুরানো ধারাগুলি অর্থহীন হয়ে যাচ্ছে। ভাবীকালের এই পথে তোমাকে সাহসের সঙ্গে মনপ্রাণ দিয়ে প্রবৃত্ত হতে হবে- এই পথের অনেক নূতন শর্ত থাকা সত্ত্বেও। যে সব ক্ষুদ্র মনোবৃত্তি এক সময়ে সহ্য করা হয়েছে আর তা করা হবে না, নিজেকে প্রসারিত করতে হবে- যা জন্মলাভ করতে যাচ্ছে তাকে গ্রহণ করবার জন্য।

প্রকৃতির মধ্যে আছে এক ঊর্ধ্বমুখী ক্রমগতি- তা চলেছে প্রস্তর থেকে উদ্ভিদে, উদ্ভিদ থেকে পশুতে, পশু থেকে মানুষে। আপাততঃ এই ঊর্ধ্বগতির শেষ ধাপে বলে মানুষ নিজেকে উন্নতির চরম অবস্থা বলে মনে করে, মনে করে পৃথিবীতে তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ আর কিছু হতে পারে না।

এক্ষেত্রে সে ভ্রান্ত। স্থূল প্রকৃতিতে এখনো সে প্রায় পুরোপুরি পশুই, একটা চিন্তাশীল বাক্যশীল পশু, কিন্তু তবুও পশু শারীরিক অভ্যাসে এবং প্রবৃত্তিতে।

প্রকৃতি এই ত্রুটিপূর্ণ পরিণতি নিয়ে কিছুতেই সন্তুষ্ট থাকতে পারেন না; তাঁর প্রয়াস এমন জীব গড়ে তুলতে যার সঙ্গে মানুষের পার্থক্য হবে মানুষ আর পশুর মধ্যেকার পার্থক্যেরই মত, এমন জীবন যা বাহ্য আকারে থাকবে মানুষ, কিন্তু তার চেতনা মন ছাড়িয়ে, অজ্ঞানের দাসত্ব মুক্ত হয়ে বহুদূরে উঠে যাবে।

মানুষের কাছে এই সত্যটি উদ্‌ঘাটন করতেই শ্রীঅরবিন্দ এসেছিলেন পৃথিবীতে। তিনি বলেছেন মানুষ মধ্যস্তরের জীব- রয়েছে মানস চেতনায়, তবে সে অর্জন করতে পারে একটা নূতন চেতনা, ঋৎ-চিৎ, পেতে পারে একটা সম্পূর্ণ সুসমঞ্জস, শ্রেয়স্কর এবং সুন্দর, আনন্দময় এবং পূর্ণ সচেতন জীবন।

যতদিন পৃথিবীতে ছিলেন, ততদিন শ্রীঅরবিন্দ এই চেতনাকে, যার নাম তিনি দিয়েছেন অতিমানস, নিজের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করতে এবং তাঁর আশ্রিতদেরও এটি পেতে সাহায্য করতে তাঁর সবখানি সময় নিয়োগ করেছিলেন।

…………………………….
শ্রীঅরবিন্দ ও শ্রীমায়ের ‘নব চেতনার উন্মেষে নূতন শিক্ষাধারা’ বাণী

আরও আধ্যাত্মিক তথ্য পেতে ও জানতে : ভারতের সাধক-সাধিকা

পুণঃপ্রচারে বিনীত -প্রণয় সেন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!