ভবঘুরেকথা
ফকির লালন শাহ্

ফকির লালনের বাণী : সাধকদেশ

১৩৫১.
আয়না আঁটা রূপের ছটা
চিলেকোঠায় ঝলক মারে।

১৩৫২.
বর্তমানে দেখো ধরি
নরদেহে অটলবিহারী।

১৩৫৩.
মরো কেন হড়িবড়ি
কাঠের মালা টিপে হারে।

১৩৫৪.
স্বরূপ রূপে রূপকে জানা
সেই তো বটে উপাসনা।

১৩৫৫.
গাঁজায় দম চড়িয়ে মনা
ব্যোমকালী আর বলিস নারে।

১৩৫৬.
দেল ঢুঁড়ে দরবেশ যাঁরা
রূপ নিহারে সিদ্ধ তাঁরা।

১৩৫৭.
লালন কয় আমার ফেরা
ডেংগুলিটি সার হলোরে।

১৩৫৮.
মন দুঃখে বাঁচি না সদাই।
সাড়ে তিন কাঠা জমির প্রমাণ তাই।

১৩৫৯.
কোনদিকে হয় খুশির বাগান
কতখানি হয় তার পরিমাণ।

১৩৬০.
কতখানি হয় অতিত-পতিত
কতখানি সে জলাময়।

১৩৬১.
কেবা করে দফাদারি
কেবা করে চৌকিদারি।

১৩৬২.
তার হিসাব রাখে কোন কাচারি
হর সময়।

১৩৬৩.
বত্রিশ ফুল কারে বলে
দেহের বাও-বাতাসে কোনদিক চলে।

১৩৬৪.
ফকির লালন কয় দেহের মূল
কোনদিকে রয়।

১৩৬৫.
আমি তো নইরে আমার
সকলই পর আমি আমার না।

১৩৬৬.
কার কাছে কইরে আমি আমি
বলতে আমার না।

১৩৬৭.
আমি যদি আমার হতাম
কুপথে নাহি যেতাম।

১৩৬৮.
সরল পথে থেকে মন
দেখতাম আপন কল কারখানা।

১৩৬৯.
আমি এলাম পরে পরে
পরেরে নিয়ে বসত করে।

১৩৭০.
আজ আমার কেউ নাইরে
পরের সঙ্গে দেখাশোনা।

১৩৭১.
পরে পরে কুটুম্বিলি
পরের সঙ্গে দিন কাটালি।

১৩৭২.
ভেবে কয় ফকির লালন
না ভাবলাম পারের ভাবনা।

১৩৭৩.
অকুল পাড় দেখে মোদের লাগেরে ভয়।
মাঝি বেটা বড় ঠেঁটা
হাল ছেড়ে দিয়ে বগল বাজায়৷৷

১৩৭৪.
উজানভাটি তিনটি নালে
দমদমা দম বেদম কলে
তারা পুরো ঘাটে একশব্দ হয়।

১৩৭৫.
গুরুর গুরু পবন গুরু
প্রেম আনন্দে সাঁতার খেলে৷৷

১৩৭৬.
সামনেতে অপার নদী
পার হয়ে যায় ছয়জন বাদী
শ্রীরূপ লীলাময়।

১৩৭৭.
লালন বলে ভাব জানিয়ে
ডুব দিয়ে সে রত্ন উঠায়৷৷

১৩৭৮.
প্রেম-ইন্দ্রবারি অনুরাগ
নইলে কি যায় ধরা।

১৩৭৯.
যে বারি পরশে জীবের
যাবে ভব জ্বরা।

১৩৮০.
বারি মানে বার এলাহি
নাহিরে তুলনা নাহি।

১৩৮১.
সহস্র দলেতে সেহি
মৃণাল গতি বহে ধারা।

১৩৮২.
ছায়াহীন এক মহামনি
বলব কি রে তার করণি।

১৩৮৩.
প্রকৃতি হয় তিনি বারি
সেধে অমর গোড়া।

১৩৮৪.
আসমানে বরিষণ হলে
জল দাঁড়ায় মৃত্তিকা স্থলে।

১৩৮৫.
লালন ফকির ভেবে বলে
মাটি চিনবে ভাবুক যারা।

১৩৮৬.
মানিক ভাই উজান চালাও তরী।
ও রে অকূল সমুদ্দুরী।

১৩৮৭.
গঙ্গা যমুনা আদি
আর সরস্বতী নদী।

১৩৮৮.
উঠছে কেউ পাতাল ভেদী
হায় রে হায় মরি।

১৩৮৯.
ভাটি বাঁকে পাকের গোলায়
কতজন তরী ডুবায়।

১৩৯০.
সামাল সামাল মনুরায়
থেক হুঁশিয়ারী।

১৩৯১.
অনুরাগের মাস্তুলেতে
ভাবকাপড় লাগাও তাতে।

১৩৯২.
লালন কয় জ্ঞান কপিতে
বাঁধ ভক্তির ডুরি।

১৩৯৩.
জাল ফেলে মাছ ধরবে যখন।
কাতলা পোনা চুনো-চানা
কেউ বাকি থাকবে না তখন।

১৩৯৪.
হাডুম হুডুম দাডুম দডুম
লাফালাফি করছো এখন।

১৩৯৫.
আসছে শমন খেপলা ফেলে
করবে তুলে খালুই পূরণ।

১৩৯৬.
অগাধ জলে হেসে ভেসে
উল্লাসে কাল করছো যাপন।

১৩৯৭.
রাজার হুকুম হলে আর কি চলে
শুনবে না সে কারো বারণ।

১৩৯৮.
সংসার জলে নানাবিধ
হইয়াছে মীনের গঠন।

১৩৯৯.
ও তাই ভাবছি আমি জগত স্বামী
একটা কেউ নহে বিস্মরণ।

১৪০০.
অধীন লালনের এই নিবেদন
ধরি সিরাজ সাঁইয়ের চরণ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!