ফকির লালনের বাণী : কৃষ্ণলীলা
৫১.
করে কঠোর ব্রত ক্ষীরোদার
কূলে কুল ভাসিয়ে দিয়েছে অকুলে।
৫২.
সেই কুলের কাঁটা করিলে যে কুলটা
গোপীকুলের যতো ব্রজাঙ্গনা।
৫৩.
গেলো গেলো কুল করিলে ভুল
অকুল পাথারে ভাসায়ে দুকুল।
৫৪.
কেঁদে হয় আকুল পেলো না সে কুল
কুলে এসে কুল ধ্বংস করো না।
৫৫.
করিয়ে ঘটা বাঁধাইলে যে ল্যাটা
এখন সবাই মোরে তোরে ঝাঁটা।
৫৬.
তাই লালন ভনে মরেছে বঁধু নিজগুণে ,
কুল ভেঙ্গে অকুলে যেয়ে করলো মহাঘটনা।
৫৭.
ওগো রাইসাগরে নামলো শ্যামরাই।
তোরা ধর গো হরি ভেসে যায়।
৫৮.
রাইপ্রেমের তরঙ্গ ভারি
তাতে ঠাঁই দিতে কি পারবেন হরি।
৫৯.
ছেড়ে রাজত্ব প্রেমে উন্মত্ত
কৃষ্ণের ছিন্ন কাঁথা উড়ে গায়।
৬০.
চার যুগেতে ঐ কেলেসোনা
তবু শ্রীরাধার দাস হতে পারলো না।
৬১.
যদি হতো দাস যেতো অভিলাষ
তবে আসবে কেন নদীয়ায়।
৬২.
তিনটি বাঞ্ছা অভিলাষ করে
হরি জন্ম নিলেন সতীর উদরে।
৬৩.
সেই কালার প্রেম করা কথার কথা নয়।
৬৪.
ভালো হলে ভালোই ভালো
নইলে ল্যাটা হয়।
৬৫.
সামান্যে কি এই জগতে
পারে কি সেই প্রেম যাজিতে।
৬৬.
প্রেমিক নাম পাড়ায়ে সে যে
মিছে দুকূল হারায়।
৬৭.
এক প্রেমের ভাব অশেষ প্রকার
প্রাপ্তি হয় সে ভাব অনুসার।
৬৮.
ভাব জেনে ভাব না দিলে তাঁর
প্রেমে কি ফল পায়।
৬৯.
যোগী যেমন প্রেম আচারী
যাতে বাঁধা বংশীধারী।
৭০.
আর তো কালার সে ভাব নাইকো সই।
৭১.
ত্যাজিয়ে মদন প্রেম-পাথারে
খেলছে সদায় প্রেম ঝাঁপাই।
৭২.
অগুরু চন্দন ভূষিত যে সদায়
সেই কালাচাঁদ ধুলায় লুটায়।
৭৩.
কিংশুক বিরিঞ্চি আদি যার
অঁচলা ঝোলা করুয়া কোপিন সার,
শেষ লীলে করলেন প্রচার
আনক আইন দেখনা ঐ।
৭৪.
বেদবিধি ত্যজিয়ে দয়াময়
গোরা ভাব আনলেন নদীয়ায়।
৭৫.
সে ভাব সবাই কি জানে।
যে প্রেমে শ্যাম আছে বাঁধা
ব্রজগোপীদের সনে।
৭৬.
শুদ্ধ অমৃত সেবা
গোপী বিনে জানে কেবা,
পাপপুণ্যের জ্ঞান থাকে না
কৃষ্ণ দরশনে।
৭৭.
গোপীর অনুগত যারা
ব্রজের সে ভাব জানে তারা,
নিহেতু প্রেম অধর ধরা
গোপীদের সনে।
৭৮.
টলে জীব অটলে ঈশ্বর
তাতে কি হয় রসিক শিখর।
৭৯.
আর কি আসবে সেই কেলে সোনা
এই গোকুলে।
৮০.
ননীচোরা বলে অমনি
মারল তারে নন্দরাণী,
আরো কতরূপ অপমানি
করিলে।
৮১.
অনাদির আদি সেই গৌরাঙ্গ
তারে রাখাল বানায় নন্দ,
আরো কত রাখালগণ
কান্ধে চড়িলে।
৮২.
হারাইলে চায় পেলে নেয় না
লালন কয় দৃষ্টি হয় না
এই নর নিলে।
৮৩.
রাধার তুলনা পিরিত সামান্যে কেউ যদি করে।
মরিয়ে না মরে পাপী অবশ্য যায় ছারেখারে।
৮৪.
দেখ কোন প্রেমে সেই ব্রজহরি
বিভোরা কিশোর-কিশোরী।
৮৫.
গোপীর অনুগত যারা
ব্রজের সে ভাব জানে তারা।
৮৬.
কামের ঘরে সুরকি মারা
মরাই মরে ধরাই ধরে।
৮৭.
পুরুষ প্রকৃতি স্মরণ
থাকতে কি হয় প্রেমের করণ।
৮৮.
সিংহের দায় দিয়ে লালন
শৃগালের কাজ করে ফেরে।
৮৯.
সেই কালাচাঁদ নদেয় এসেছে
ও সে বাজিয়ে বাঁশি ফিরছে সদাই,
কূলবতীর কূলনাশে।
৯০.
মজবি যদি কালার পিরিতি
আগে জান গে যা তাঁর কেমন রীতি।
৯১.
প্রেম করা নয় প্রাণে মরা-
অনুমানে বুঝিয়েছে।
৯২.
ঐ পদে কেউ রাজ্য যদিও দেয়
তবু কালার মন নাহি পাওয়া যায়।
৯৩.
রাধা বলে কাঁদছে এখন-
তাঁরে কতো কাঁদিয়েছে।
৯৪.
ব্রজে ছিল জলদ কালো
কী সাধনে গৌর হলো।
৯৫.
কানাই একবার ব্রজের দশা দেখে যা রে।
তোর মা যশোদ কি হালে আছে রে।
৯৬.
শোকে তোর পিতা নন্দ
কেঁদে কেঁদে হল অন্ধ,
গোপীগণ সবাই ধন্দ
হয়েছে রে।
৯৩.
বালক যুবা বৃদ্ধ আদি
নিরানন্দ নিরবধি,
না দেখে চরণনিধি
তোরে রে।
৯৪.
না শুনে তোর বাঁশির গান
পশুপাখী উচাটন,
লালন বলে ছিদাম হেন
বিনয় করে রে।
৯৫.
দাঁড়া কানাই একবার তোরে দেখি,
কে আজ তোরে করিলো
বেহাল হলিরে কোন দুঃখের দুঃখী।
৯৬.
পরনে ছিল ক্রীতধরা
মাথায় ছিল মোহনচূড়া,
সে বেশ কানাই হইলি ছাড়া
বেহাল বেশ নিলি কোন সুখে সুখী।
৯৭.
ধেণু চড়াতে মোদের সাথে
আবাই আবাই ধ্বনি দিতে,
এখন এসে এই নদীয়াতে
হরির ধ্বনি দাও এ ভাব কি।
৯৮.
ভুল বুঝি পড়েছে ভাই তোর
আমি যে তোর ছিদাম নফর।
৯৯.
কার ভাবে এ ভাব হারে
জীবনও কানাই,
তোমার করে বাঁশি
মাথায় চূূড়া নাই।
১০০.
ক্ষীর সর ননী খেতে
বাঁশিটি সদায় বাজাতে,
কি অসুখ পেলি তাতে
ফকির হলি ভাই।