ফকির লালনের বাণী : কৃষ্ণলীলা
২৫১.
তোমার পদে সব সঁপেছি কী আর বাকি রেখেছি
নিজহাতে দাসখত লিকে দিয়েছি
তাইতে বলি তোমারে।
২৫২.
লালন ভণে লুলিতা বিশাখা বিহনে
তুই তারে পায় ধরালি প্যারী।
২৫৩.
জানো নারে পরমকারণ
শ্যামা শূদ্রমেয়ে নয়,
সে ঘেরি করিয়ে কখনো কখনো
পুরুষ হয়।
২৫৪.
কভু হয় হরা কভু হয় হরি
কখনো হয় মা ধনুকধারী।
২৫৫.
কভু স্বরস্বতী কভু লক্ষ গোপী
কখনো কখনো জানকী হয়।
২৫৬.
কভু বৃন্দাবনে রাখালেরই সনে
কাননে ধেনু চরায় কভু কুঞ্জবনে।
২৫৭.
কভু বৃন্দাবনে আসি, বাজায় বাঁশী
ব্রজজনার মন হরে নেয়।
২৫৮.
যে ভাবে যে করে ভজন
সে সেইভাবে পায় দর্শন।
২৫৯.
তাই জেনে ফকির লালন ভণে
ছলনায় সেরূপ লুকায়ে দেখায়।
২৬০.
প্রেম শিখলাম যার হাত ধরি।
দেখ দেখ সজনী দিবা রজনী
তার প্রেমে এখন জ্বলে মরি।
২৬১.
ওরে মন প্রেম শিখাইলি যারে
সে প্রেম তোরে বাঁধিয়া মারে।
২৬২.
নয়নে নয়নে সন্ধানে স্মরণে
মরমে বেঁধেছে এ কুলের নারী।
২৬৩.
অস্ত্রাাতের ব্যথা শুকাইলে যায়
প্রেম আঘাত করে জীবন সংহায়।
২৬৪.
তবু জীবন যায় না সে দেখে
দিবানিশি করে জ্বালাতন আমারি।
২৬৫.
আগে নাহি জানি এমন হবে
বাঘ শিকারীকে বাঘে ধরে খাবে।
২৬৬.
অনুরাগের বাঘে খেলো লালনরে
যেমন গর্ভে ধরে অসৎ নারী।
২৬৭.
বিদায় কর গো উহার নামে মোর কাজ নাই।
কাল গতনিশি রাখালরাজ ছিলি কোথায়।
২৬৮.
যমুনার জলে আমি চান করিতে যাবো না
মাথায় আছে কালো কেশ তাও তো রাখবো না।
২৬৯.
কালো কাজল ভালো নয়, সে জনা নয়নে দেয়
কালসাপে দংশিলে বিষে অঙ্গ জ্বলে যায়।
২৭০.
কালো কোকিলের ধ্বনি না শুনিব কর্ণে
ঘ্যানোর ঘ্যানের কথা না শুনিব শ্রবণে
যে দেবে অন্তরে ব্যথা সইবে না এ যুগের রাই।
২৭১.
কালার সাথে প্রেম করে জনম গেলো কাঁদিতে
জন্মবধি অপরাধী হলাম কালীর পদেতে।
২৭২
দেহ করলাম সমর্পণ, তবু পাইনে কালার মন
মান ভাঙ্গিতে মন ভেঙ্গে যায় লালন ভনে তাই।
২৭৩.
তোমা ছাড়া বলো কবে রাই।
সেই কারণ্যলোভে ভেসেছিলাম একাই।
২৭৪.
সঙ্গে লয়ে হে তোমারই
তুমি হবে আমার আধাঁরি
মনে তোমারই স্মরণ করি
বটপত্ররূপে ভেসেছিলাম তাই।
২৭৫.
তোমারই কারণে গোষ্ঠে গোচরণে
নন্দের বাদা বয়ে মাথায়।
২৭৬.
সদাই বলি মনের সুখে জয় জয় রাধে
বৃন্দাবনে সদা বাঁশি বাজাই।
২৭৭.
পরেতে গোলোকে পরম পুলকে
মহারাসলীলা করি দুই জনে।
২৭৮.
সে মহারসের ধনী বিনোদিনী
লালন বলে সে হরি নন্দের কানাই।
২৭৯.
ললিতা সখি কই তোমারে
মন দিয়েছি যারে,
লোকে বলে বলুক মন্দ
লোকের কথায় যাবো না ফিরে।
২৮০.
তোমরা সখি বুঝাও যতো
মন আমার পাগরের মতো,
না দেখিলে তারে।
২৮১.
আমি ভুলিব মনে করি
অন্তর যে ভোলে না মোরে।
২৮২.
আমি যখন রাঁধতে বসি
কালা তখন বাজায় বাঁশি
নিকুঞ্জে কাননে।
২৮৩.
আমার শ্বাশুরি ননদী ঘরে
কেমন করে যাই বাইরে।
২৮৪.
ঐ কালা কী মন্ত্রে মন ভোলালো
এখন আমার ঘরে থাকা দায় হলো
বলো সখি কি করিরে।
২৮৫.
সকালবেলা চিকন কালা
এলে কী মনে করে,
তুমি এলে হে নিশিজাগা
রাধার দ্বারে।
২৮৬.
তোমার আসাতে রে ভাই
আমরা গোপীগণ সবাই,
মনের সুখে বাসরঘর সাজাই
ওহে রাখালরাজ মজালে কুলবঁধু রাধারে।
২৮৭.
শ্যাম তোমার বুঝবে কে লীলে
বলো তো গতনিশি কার কুঞ্জেতে ছিলে।
২৮৮.
তোমার বদনবিধ শুকায়ে গেছে
শ্যাম তোমার দিয়েছে দফা মেরে।
২৮৯.
পোহায়ে গেছে নিশি
ও শ্যাম তুমি হয়েছো দোষী।
২৯০.
আর বাজাইও না ভুয়ো বাঁশি
লালন বলে কিশোর বসে আছে মান ভরে।
২৯১.
প্রেম করে বাড়িল দ্বিগুণ জ্বালা।
ছল করে প্রাণ হরে নিলো কালা।
২৯২.
সখীরে আমি যখন রাঁধতে বসি
ও সে কালা বাজায় বাঁশি।
২৯৩.
মন হয় যে তখন উদাসী
কি করি ভেবে মরি এ কি করিল কালা।
২৯৪.
সখীরে আমার লাগি ঐ না কালা
প্রেমের হাট বসালো কদমতলা।
২৯৫.
কদমতলায় করেছি লীলা
তাইতে হলো বুঝি জীবন কালা।
২৯৬.
সখিরে শুইলে স্বপনে দেখি
শ্যাম কাছে বসে ধরে আঁখি।
২৯৭.
হেঁসে হেঁসে বলছে কথা চাঁদমুখি
লালন বলে রাই পরিয়েছিলো শ্যামের গলে মালা।
২৯৮.
কৃষ্ণপ্রেমের পোড়াদেহ
কী দিয়ে জুড়াই গো সখী।
২৯৯.
কে বুঝবে অন্তরের ব্যথা
কে মুছবে আঁখি।
৩০০.
যে দেশে গেছে বন্ধু কালা
সে দেশে নিয়ে যাব ফুলের মালা।