ভবঘুরেকথা
ফকির লালন

১.
বলরে নিমাই বল আমারে,
রাধা বলে অ-জাগরে,
কাঁদলি কেন ঘুমের ঘোরে।

২.
সে যে রাধার কী মহিমা
বেদে দিতে নারে সীমা।

৩.
ধ্যানে যারে পায় না ব্রহ্মা
কিরূপ জানলি সে রাধারে।

৪.
রাধে তোর কী হয় নিমাই
সত্য করে বল গো আমায়।

৫.
তুমি শিশু ছেলে আমা
মা হয়ে ভেদ পাইনে তোর।

৬.
ধন্য মায়ের নিমাই ছেলে।
এমন বয়সে নিমাই ঘর ছেড়ে ফকিরি নিলে।

৭.
ধন্য রে ভারতী যিনি
সোনার অঙ্গে দেয় কোপনি,
শিখায়েছিল হরিধবনি
করেতে করঙ্গ দিলে।

৮.
ধন্য পিতা বলি তারি
ঠাকুর জগন্নাথ মিশ্রি,
ঘরে যার গৌরাঙ্গ হরি
মানুষরূপে জন্মাইলে।

৯.
ধন্য রে নদীয়াবাসী
হেরিল গৌরাঙ্গ শশী,
যে বলে জীব সন্ন্যাসী
লালন কয় সে ফ্যারে প’লে।

১০.
কি ভাব নিমাই তোর অন্তরে।

১১.
মা বলিয়ে চোখের দেখা
তাতে কি তোর ধর্ম যায় রে।

১২.
কল্পতরু হাওরে যদি
তবু মা বাপ গুরুনিধি,
এ গুরু ছাড়িয়া বিধি
কে তোরে দিয়েছে হারে।

১৩.
আগে যদি জানতে ইহা
তবে কেন করলে বিয়া
এখন সেই বিষ্ণুপ্রিয়া
কেমনে রাখিব ঘরে।

১৪.
নদীয়া ভাবের কথা
অধীন লালন কি জানে তা।

১৫.
প্রেম করা কি কথার কথা
প্রেমে মজে হরি
নিলো গলায়ে কাঁথা।

১৬.
একদিন রাধে মান করিয়ে
ছিলেন ধনী শ্যাম ত্যাজিয়ে।

১৭.
মানের দায়ে শ্যাম যোগী হয়ে
মুড়ালে মাথা।

১৮.
আর এক প্রেমে মজে ভোলা
শ্মশানে মশানে খেলা।

১৯.
গলে শুদ্ধ হাড়ের মালা
পাগল অবস্থা।

২০.
রূপ সনাতন উজির ছিলো
প্রেমে মজে ফকির হলো।

২১.
যে ভাবের ভাব মোর মনে।
সেই ভাবের ভাব আছে বলবো না তা কারো সনে।

২২.
জন্মের ভাগি অনেকজনা
কর্মের ভাগি কেউ তো হয় না।

২৩.
কাদি সেই দিনের কান্না
বাঁধা ওই রাধার ঋণে।

২৪.
ঘরের বধূ বিষ্ণুপ্রিয়া
রেখে এলাম ঘুমাইয়া,
নিতাই এসে জল ঢালিয়া
শান্ত করবে আপন প্রাণে।

২৫.
মায়ের বুকে প্রবোধ দিয়া
নিমাই যায় সন্ন্যাসী হইয়া।

২৬.
কাজ নাই আমার দেখে দশা।
ব্রজের যত ভালবাসা
সার হলো যাওয়া আসা।

২৭.
পরনেতে পড়িব কোপিন
অঙ্গেতে চৈতনের চিন
কাদি আমি বলে ও দিন
মনে আমার বড় বাঞ্ছা।

২৮.
কেউ কারো সঙ্গে না যাবে
সঙ্গের সাথী করে লবে।

২৯.
এলাম রে নদীয়া ভাবে
খেলব এবার প্রেমের পাশা।

৩০.
ভুল নাই ভাই ওরে ছিদাম
সকল কথা তোরে কইলাম,
লালন বলে নদেয় এলাম
হই নে যেন নৈরাশা।

৩১.
সে নিমাই কি ভোলা ছেলে ভবে।
ভুলেছে ভারতীর কথায়
এমন কথা কেন বলে সবে।

৩২.
যখন ব্রজবাসী ছিল
ব্রজের সব ভুলাইল,
সেই না গোরা নদেয় এল
দেখ না রে কারে না ভুলাবে।

৩৩.
আপনি হই কপট ভোলা
ত্রিজগতের মনছলা।

৩৪.
কে বোঝে তার লীলাখেলা
বুঝিতে গেলে সেই যে ভুলে যাবে।

৩৫.
তারে ছেড়ে এলো যে লোক সকল
সে পাগল তার বংশপাগল।

৩৬.
লালন কয় আমি এক পাগল
গুরু ছেড়ে বেড়াই গৌর ভেবে।

৩৭.
কানাই কার ভাবে তোর এ ভাব দেখি রে।
ব্রজের সে ভাব তো দেখি না রে।

৩৮.
পরনে ছিল পীতধড়া
মাথায় ছিল মহনচুড়া
করে বাশি রে।

৩৯.
আজ দেখি তোমার,
করোয়া কৌপীন সার
ব্রজের সে ভাব কোথা রাখলি রে।

৪০.
দাসদাসী ত্যাজিয়ে কানাই
একা একাই ফিরছে রে ভাই
কাঙ্গাল বেশ ধরে।
৪১.
ভিখারি হলি, কেথাঁ সার করলি
কিসের অভাব রে।

৪২.
ব্রজবাসির হয়ে নিদয়
আসিয়ে ভাই এই নদীয়ায়
কি সুখ পালি রে।

৪৩.
লালন বলে আর, কার বা রাজ্য কার
আমি সব দেখি আজ মিছে রে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!