ভবঘুরেকথা
ফকির লালন

ফকির লালনের বাণী : প্রবর্তদেশ

৭০১.
মন আমার আজ প’লি ফেরে।
দিনে দিনে পিতৃধন তোর গেল চোরে।

৭০২.
মায়ামদ খেয়ে মনা
দিবানিশি ঝোঁক ছোটে না,
পাছবাড়ির উল হলো না
কে কি করে।

৭০৩.
ঘরের চোরে ঘর মারে মন
যায় না ঘোর জানবি কেমন,
একদিনও দিলে না নয়ন
আপন ঘরে।

৭০৪.
ব্যাপার করতে এসেছিলে
আসলে বিনাশ হলে,
লালন কয় হুজুরে গেলে
বলবি কি রে।

৭০৫.
আপনার আপনিরে মন
না জান ঠিকানা
পরের অন্তর
কোটি সুমুদ্দুর
কিসে যায়রে জানা।

৭০৬.
আত্মা ও পরমেশ্বর
গুরুরূপে অটল বিহার
দ্বিদলে বারামখানা
শতদল সহস্রদলে
অনন্ত শাঁইয়ের করুণা।

৭০৭.
কেশের আড়েতে যৈছে
পাহাড় লুকায় তৈছা
দরশন হলো না
হেঁট নয়ন যাঁর
নিকটে তাঁর
সিদ্ধি হয় কামনা।

৭০৮.
সিরাজ শাঁই বলেরে লালন
গুরুপদে ডুবেরে মন
আত্মার ভেদ জানলে না
জীবাত্মা পরমাত্মা
ভিন্ন ভেদ জেন না ।

৭০৯.
কতোদিন আর রইবি রঙ্গে।
বাড়িতেছে বেলা ধরো এই বেলা
যদি বাঁচতে চাও তরঙ্গে।

৭১০.
নিকটে বিকটে বেশেতে শমন
দাঁড়াইয়া আছে হরিতে জীবন,
মানিবে না কারে, কেশ ধরে তারে
লয়ে যাবে সে জন আপন সঙ্গে।

৭১১.
দারা সূত আদি যত প্রিয়জনে
বক্ষমাঝে যাদের রাখ সর্বক্ষণে,
আমার আমার, বল বারে বার
তখন হেরিবে না কেহ অপাঙ্গে।

৭১২.
অতএব শোন থাকিতে জীবন
করো অন্বেষণ পতিতপাবন,
সিরাজ সাঁই কয় লালন, অধম তারণ
বাঁচো এখন পাপ আতংকে।

৭১৩.
আগে জানো নারে মন বাজি হারাইলে পতন
লজ্জায় মরন শেষে কাঁদলে কী আর হয়।

৭১৪.
খেলা খেলে মন খেলাডু ভাবিয়ে
শ্রীগুরু অধোপথে যেন যায় না মারা।

৭১৫.
ঐই দেশেতে যতো জুয়োচরের খেলা
টোটকায় দিয়ে ফটকায় ফেলে ওরে মনভোলা।

৭১৬.
তাই বলি মন তোমারে খেলা খেলো
হুশিয়ারে নয়নে নয়ন বাঁধিয়ে সদাই।

৭১৭.
চোরের সঙ্গে খাটে না কোনো ধর্মদাঁড়া
হাতের অস্ত্র কভু করো না হাতছাড়া।

৭১৮.
তাই অনুরাগের অস্ত্র ধরে দুষ্ট দমন করে
স্বদেশে গমন করো ত্বরায়।

৭১৯.
চুয়ানি বাঁধিয়ে খেলে যেজনা
সাধ্য কার আছে তার অঙ্গে দেয় হানা।

৭২০.
লালন বলে আমি তিনতেরো না জানি
বাজি সেরে যাওয়া ভার হলোরে আমার।

৭২১.
মধুর দেল-দরিয়ায় ডুবে কর রে ফকিরি।
ছাড় ফিকির হলো আখেরি।

৭২২.
শুনতে পাই দেহের চৌদ্দ ঘর
আঠারো চারিতে করিয়ে বিচার।

৭২৩.
লা-মোকাম আছে তাহারি উপর
মওলার নিজ আসন সেই পুরি।

৭২৪.
আল্লার তক্ত বান্দার দেল যথা
কোরানে বলেছে আপে খোদ খোদা।

৭২৫.
আজাজিলের পর হইল খাতা
না বুঝে দেল গভীরি।

৭২৬.
দেল-দরিয়ায় ডুবারু হয় যে
আলখানার ভেদ পাইবে সে।

৭২৭.
আলে আজব কাম দ্বিদলে বারামে
লালন হাতছাড়া বাহিরি।

৭২৮.
দ্বীনের ভাব যেদিন উদয় হবে
সে দিন মন তোর ঘোর অন্ধকার ঘুঁচে যাবে।

৭২৯.
মনিহারা ফণী যেমন এমনি ভাব রাগের করণ
অরুণ বসন ধারণ বিভূতি ভূষণ লবে।

৭৩০.
হাদিসে লিখেছে প্রমাণ আপনারে আপনি কে জান
কোথা হতে কি রূপে সে কহিছে জবান।

৭৩১.
না করলি মন সে সব দিশে তরিকার মঞ্জিলে বসে
তিনেতে তিন আছে মিশে ভাবুক হলে জানতে পাবে।

৭৩২.
ভাব শুন্য হৃদয় মুখে পড় কালাম আল্লার
তাই কি মন পাবি নিস্তার ভেবেছ এবার।

৭৩৩.
অঙ্গে ধারণ কর বেহাল হৃদে জ্বালো প্রেমের মশাল
দুই নয়ন হইবে উজ্জ্বল মুরশিদ বস্তু দেখতে পাবে ।

৭৩৪.
একের যুতে তিনের লক্ষণ তিনের ঘরে আছে সে ধন
তিনের মর্ম সাধিলে হয় স্বরূপ দর্শন।

৭৩৫.
সাঁই সিরাজের হক্কের বচন ভেবে বলে ফকির লালন
কথায় কি তোর হয় আচরণ সাথী হও মন দীনের ভাবে।

৭৩৬.
কোন দেশে যাবি মনা চল দেখি যাই
কোথা পীর হও তুমি রে।

৭৩৭.
তীর্থে যাবি কী ফল পাবি
সেখানে কি পাপী নাই রে।

৭৩৮.
কেউ নারী ছেড়ে জঙ্গলেতে যায়
স্বপ্নদোষ কি হয় নারে সেথায়।

৭৩৯.
মনের বাঘে যাহারে খায়
কে ঠেকায় তারে।

৭৪০.
সঙ্গে আছে রিপু ষোলজন
তারা সদাই করে জ্বালাতন,
যথা যাবি তথা পাগল
করবে তোরে।

৭৪১.
ভিমরে বারো বশে তের
তাওতো সদাই শুনে ফেরো,
সিরাজ সাঁই কয় লালন তোর
বুদ্ধি নাই রে।

৭৪২.
গুরুবস্তু চিনে নে না ।
অপারের কান্ডারী গুরু
তা বিনে কেউ কূল পাবে না।

৭৪৩.
হেলায় হেলায় দিন ফুরালো
মহাকালে ঘিরে এলো,
আর কতদিন বাঁচবি বলো
রঙমহলে পড়লে হানা।

৭৪৪.
কী বলে এই ভবে এলি
কিনা কর্ম করে গেলি,
মিছে মায়ায় ভুলে র’লি
সে কথা তোর মনে হয় না।

৭৪৫.
এখনও চলছে পবন
হতে পারে কিছু সাধন,
সিরাজ সাঁই কয় অবোধ লালন
এবার গেলে আর হবে না।

৭৪৬.
গুরুর চরণ অমূল্য ধন
বাঁধো ভক্তি রসে,
মানব জনম সফল হবে
গুরুর উপদেশে।

৭৪৭.
হিংসা নিন্দা তমঃ ছাড়ো
মরার আগেতে মরো,
তবে যাবে ভবপারে
ঘুচবে মনের দিশে।

৭৪৮.
ষোলকলা পূর্ণরতি
হতে হবে ভাবপ্রকৃতি,
গুরু দেবেন পূর্ণরতি
হৃদকমলে বসে।

৭৪৯.
পারাপারের খবর জানো
মহর গুরুকে মানো,
লালন কয় ভাবছো কেন
পড়ে মায়ার ফাঁসে।

৭৫০.
গুরু বিনে কী ধন আছে।
কী ধন খুঁজিস ক্ষ্যাপা কার কাছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!