ফকির লালনের বাণী : প্রবর্তদেশ
৫১.
নয়নে নয়ন বুকে বুক
উভয় মিলে হইল কৌতুক।
৫২.
তবে যে দেখলো না সে রূপ
নবীর নজরে।
৫৩.
তুণ্ডে তুণ্ড করিল কাহার
সেই কথাটি শুনতে চমৎকার।
৫৪.
সিরাজ সাঁই কয় লালন তোমার
বোঝো জ্ঞানদ্বারে।
৫৫.
নবী মেরাজ হতে এলেন ঘুরে
কই নিকাশের ভেদ কাহার তরে।
৫৬.
শুনে আলী কহেছে তখন
দেখে এলেন আললাহ কেমন।
৫৭.
নবী কন ঠিক তোমার মতন
কর মালুম আমি বল যারে।
৫৮.
আবুবকর সিদ্দিক বলে
আললাহ কেমন দেখে এলেন,
ঠিক রূপ কি তা দিবেন বলে
নবী বলে তুমি দেখ তোমারে।
৫৯.
তারপর কহিছে ওমর কেমন
আললাহর আকার-প্রকার,
নবী কন ঠিক তোমার আনাল
হক কোরান ফুকারে।
৬০.
পরে জিজ্ঞাসে ওসমানগণি
আললাহ কেমন বল শুনি,
নবী কন ঠিক আললাহ তুমি
যেমন ঠিক পরোয়ারে।
৬১.
নবীজী মেরাজে গিয়ে
যে ভেদ তিনি এলেন পেয়ে,
চার জনা চার গোলে পল
লালন পলো বিষম ফেরে।
৬২.
না পড়িলে দায়েমী নামাজ
সে কি রাজি হয়।
৬৩.
কোথায় খোদা কোথায় সেজদা
করি সদায়।
৬৪.
বলেছে তার কালাম কিছু
আন্তা আবুদ ফান্তা রাহু।
৬৫.
এক আয়াতে কয় তাফাক্কারুন
বোঝ তাহার মানে কেমন,
কুলুর বলদের মতন
ঘুরার কাজ নয়।
৬৬.
আধার ঘরা সাপ ধরা
সাপ নাই প্রত্যয় করা।
৬৭.
লালন তেমনি বুদ্ধিহারা
পাগলের প্রায়।
৬৮.
পড়োরে দায়েমী নামাজ এই দীন হলো আখেরী।
মাশুক রূপ হৃৎকমলে, দেখো আশেক বাতি জ্বেলে
কিবা সকাল কি বৈকাল দায়েমীর নাই অবধারি।
৬৯.
সালেকের বাহ্যপনা, মজ্জবী আশেক দেওয়ানা
আশকে দেল করে ফানা, মাশুক বৈ অন্যে জানে না
আশাঝুলি লয়ে সে না মাশুকের চরণ ভিখারী।
৭০.
কেফায়া আইন যিন্নী, এহি ফরজ জাত নিশানী
দায়েমী ফরজ আদায়, যে করে তার নাই জেতের ভয়
জাত এলাহীর ভাবে সদাই, মিশেছে সে জাত নূরী।
৭১.
আইনির অদেখা তরিক, দায়েমী বরজোখ নিরিখ
সিরাজ সাঁইর হকের বচন, ভেবে কয় ফকির লালন
দায়েমীর নামাজী যে জন, শমন আর আজ্ঞাকারী।
৭২.
হুজুরের নামাজ এমনি ধারা।
ইবলিসের সেজদার দায় ঠাঁই,
চাই ঠাঁই ছেড়ে ঠাঁই সেজদা করা।
৭৩.
সেতো করেছে সেজদা
স্বর্গ মর্ত্য পাতাল জোড়া,
কোনখানে বাদ রাখলো
এবার দেখ না তোরা।
৭৪.
জায়গার মাহাত্ম বুঝে,
সেজদা দিতে পারে যারা,
আগমে কয় তাদের
হবে নামাজ সারা।
৭৫.
কিসে হবে আসল নামাজ,
করো সেই কাজ ভাই সকলরা
লালন বলে আখের যেন
না যায় মারা।
৭৬.
ঢোঁড় আজাজিল রেখেছে
সেজদা বাকি কোনখানে,
করোরে মন করো সেজদা
সেই জায়গা চিনে।
৭৭.
জগত জুড়ে করিল সেজদা
তবু ঘটলো দুরবস্থা,
ইমান না হইল পোস্তা
থোড়াই জমিনে।
৭৮.
এমনি মহোত্ম্য সে জায়গায়
সেজদা দিলে মকবুল হয়,
আজাজিলের বিশ্বাস নয়
লানত সেই জন্যে।
৭৯.
আজাজিলের সেজদার উপর
সেজদা দিলে কি ফল হয় তার,
লালন বলে এহি বিচার
ত্বরায় লও জেনে।
৮০.
পড়গে নামাজ জেনে শুনে,
নিয়ত বাঁধগা মানুষ মক্কা পানে।
৮১.
মানুষে মনস্কামনা
সিদ্ধি কর বর্তমানে,
খেলছে খেলা লা-শরীকালা
এই মানুষের তন ভুবনে।
৮২.
শতদল কমলে কালা
আসন শূন্য সিংহাসনে,
চৌভুবন ফিরয়ে নিশান
ঝলক দিচ্ছে নয়ন কোণে।
৮৩.
মুরশিদের মেহেরে যার
খুলেছে সেইত জানে,
তাই বলছে ফকির লালন
ঘর ছেড়ে মন খুজিস কি তুই বনে বনে।
৮৪.
নজর একদিক দিলে
আর একদিকে অন্ধকার হয়,
নূর নীর দুটি নিহার কোনটারে
ঠিক রাখা যায়।
৮৫.
নবী আইন করলেন
জগতজোড়া সেজদা হারাম খোদা ছাড়া,
৮৬.
সামনে মুর্শিদ বরজোখ খাড়া
সেজদার সময় থুই কোথায়।
৮৭.
সকল রাবেতা বলে
বরজোখ লিখলো দলিলে।
৮৮.
তুমি কারে থুয়ে কারে নিলে
একমনে দুই কই দাঁড়ায়।
৮৯.
যদি বেলায়েতের হতো
বিচার ঘুঁচে যেতো মনের আঁধার।
৯০.
লালন ফকির এশারও
ধার দোধারাতে খাবি খায়।
৯১.
মন তোর বাকির কাগজ
গেলো হুজুরে।
৯২.
কখন জানি আসবে
শমন সাধের অন্তঃপুরে।
৯৩.
যখন ভিটেয় হয় বসতি
দিয়েছিলে খোশ কবুলতি।
৯৪.
হরদমে নাম রাখবো
স্থিতি এখন ভুলেছো তাঁরে।
৯৫.
আইনমাফিক নিরিখ দেনা
তাতে কেন ইতরপনা।
৯৬.
যাবেরে মন যাবে
জানা জানা যাবে আখেরে।
৯৭.
সুখ পেলে হও সুখভোলা
দুখ পেলে হও দুখ উতলা,
লালন কয় সাধনের
খেলা কিসে জুত ধরে।
৯৮.
বলি সব আমার আমার
কে আমি তাই চিনলাম না।
৯৯.
কর কাছে যাই কারে শুধাই
সেই উপাসনা।
১০০.
আমার আমি চিনি নে
কিরূপ আছি কোনখানে।