ফকির লালনের বাণী : প্রবর্তদেশ
১৫১.
মনের ভাব বুঝে নবী মর্ম খুলেছে ৷
ও কেউ ঢাকা দিল্লি হাতড়ে ফেরে
কেউ দেখে কাছে।
১৫২.
ছিনা আর ছফিনার মানি
ফাঁকাফাঁকী দিন রজনী,
ও কেউ দেখে মত্ত কেউ শুনে
আকাশ ধেয়েছে।
১৫৩.
ছফিনায় শরার কথা
জানাইলে যথা তথা,
কারো ছিনায় ছিনায় ভেদ পুসিদায়
বলে গিয়েছে।
১৫৪.
নবুয়তে নিরাকার কয়
বিলায়েতে বর্জোখ দেখায়,
অধিন লালন পলো পূর্ণ ধোকায়
এই ভেদ মাঝে।
১৫৫.
হাতের কাছে মামলা থুয়ে
কেন ঘুরে বেড়াও ভেয়ে।
১৫৬.
ঢাকা শহর দিল্লী-লাহোর
খুঁজলে মেলে এই দেহে।
১৫৭.
মনের ধোঁকায় যেথায় যাবি
ধাক্কা খেয়ে হেথায় ফিরবি।
১৫৮.
এমনি ভাবে ঘুরে মরবি
সন্ধান না পেয়ে।
১৫৯.
গয়া-কাশী মক্কা-মদিনা
বাইরে খুঁজলে ধান্দা যায় না।
১৬০.
দেহরতি খুঁজলে পাবি
সকল তীর্থের ফল তাহে।
১৬১.
দেখ দেখি মন রে আমার
অবিশ্বাসের ধন প্রাপ্তি হয় কার।
১৬২.
যার বিশ্বাসের মন, নিকটে পায় ধন
লালন ফকির যায় কয়ে।
১৬৩.
খোদ খোদার প্রেমিক যে জনা।
মোর্শেদের রূপ হৃদয় রেখে
করে আরাধনা।
১৬৪.
আগে চাই রূপটি জানা
তবে যাবে খোদাকে চেনা।
১৬৫.
মুর্শিদকে না চিনিলে পরে হবে না
তোর ভজনা।
১৬৬.
আগে মনকে নিষ্ঠা কর
নবী নামের মালা গাঁথ,
অহর্নিশি চেতন থাক
কর কাল যাপনা।
১৬৭.
সিরাজ সাঁইয়ের চরণ ভুলে
অধীন লালন কেঁদে বলে,
চরণ পাই যেন অন্তিম কালে
আমায় ফেলো না।
১৬৮.
মুর্শিদের ঠাঁই নে নারে তার ভেদ বুঝে।
এ দুনিয়ার ছিনায় ছিনায়
কী ভেদ নবি বিলিয়েছে।
১৬৯.
ছিনার ভেদ ছিনায় ছিনায়
সফিনার ভেদ সফিনায়,
যার যেদিকে মন গেল ভাই
সেই সেভাবে দাঁড়িয়েছে।
১৭০.
কুতর্ক আর কুস্বভাবী
তারে ভেদ বলেনাই নবী,
ভেদের ঘরে দিয়ে চাবি
শরা মতে বুঝিয়েছে।
১৭১.
নেকতন বান্দারা যত
ভেদ পেলে আউলিয়া হতো,
যত নাদানেরা শূল যাচিত
মনসুর তার সাবুদ আছে।
১৭২.
তফসির হোসাইনি যার নাম
তাই ঢুঁরে পাই মসনবি কালাম,
ভেদ ইশারায় লিখা তামাম
লালন বলে নাই নিজে।
১৭৩.
মুর্শিদের মহৎ গুণ নেনা বুঝে।
যার কদম বিনে ধরমকরন মিছে।
১৭৪.
যতসব কলমা কালাম
ঢুঁড়িলে মেলে তামাম
কোরান বিছে।
১৭৫.
তবে কেন পড়া ফাজেল
মুর্শিদ ভজে।
১৭৬.
মুর্শিদ যার আছে নিহার
ধরিতে পারে অধর
সেই অনাসে;
মুর্শিদ খোদা ভাবলে জুদা
পড়বি প্যাঁচে।
১৭৭.
আলাদা বস্তু কি ভেদ
কিবা সে ভেদ মুর্শিদ
জগৎ মাঝে;
সিরাজ সাঁই কয় দেখরে লালন
আক্কেল খুঁজে।
১৭৮.
মুর্শিদ বিনে কি ধন আর আছেরে মন এ জগতে
যে নাম স্বরণ হলে তাপিত অঙ্গ শীতল করে,
ভব বন্ধন জালা যায়গো দূরে
জপ ঐ নাম দিবা রাতে ।
১৭৯.
মুর্শিদের চরণ সূধা পান করিলে যাবে ক্ষুদা
করোনা মন দিলে দ্বিধা
যেহি মুর্শিদ সেহি খোদা;
ভজো ওলিয়েম মুর্শিদা
আয়াত লেখা কোরআনেতে ।
১৮০.
আপনি আল্লাহ আপনি নবী
আপনি হন আদম সফি
অনন্ত রুপ করে ধারণ
কে বোঝে তাঁর লীলার করণ;
নিরাকারে হাকিম নিরঞ্জন
মুর্শিদ রুপ ঐ ভোজন পথে ।
১৮১.
কুল্লে সাঁই মোহিত আর
আলা কুলে সাঁইন কাদির
পড় কালাম লেহাজ কর
তবে সব জানতে পার;
কেন লালন ফাঁকে ফেরো
ফকিরি নাম পাড়াও মিথ্যে ।
১৮২.
কেবল বুলি ধরেছো মারেফতি,
তোমার বুদ্ধি নাইকো অর্ধরতি।
১৮৩.
মুখে মারেফত প্রকাশ করো
সুধালে হা করে পড়ো,
খবর কিছু বলতে পারো
কেবল কও সিনায় বসতি।
১৮৪.
চোরে যেমন চুরি করে ধরে
ফেললে দোষে পরে,
মারফতি সেই প্রকারে
চোরামালের মহারতি।
১৮৫.
অনুমানে বুঝলাম এখন
সেইজন্যে তা করো গোপণ,
লালন বলে এসব যেমন
মেয়েলোকের উপপতি।
১৮৬.
সরল হয়ে ভজ দেখি তাঁরে।
তোরে যে পাঠায়েছে
এই ভব সংসারে।
১৮৭.
ঠিক ভুলো না মন রসনারে
এলে করার করে,
সেই রকম করো, যোগাও এবার
অমূল্য ধন দিয়েরে।
১৮৮.
দমে নয়ন দিয়েরে
মন সদাই থাক হুঁশিয়ারে,
তোমার দ্বিদলে জপ, থাকবে না পাপ
আসান পাবি হুজুরে।
১৮৯.
দেল দিয়ে তাঁর হও তলবদার
মুর্শিদের বাগ ধরে,
কোথায় সে ধন, মিলবে লালন
শুদ্ধভক্তি জোরে।
১৯০.
দেখো দেখো নূর পেয়ালা
আগে থেকে কবুল কর।
নিজ জান পরিচয় করে
দেখো খোদা বলছো কার।
১৯১.
নূর মানে নিজ নবীর আত্মা
আপনার কলবে আছে তা,
হায়াতে সেই মোহম্মদা জিন্দা
এই চার যুগের উপর।
১৯২.
চিনতে যদি পারো সেই নবী
এলেম হাসেল সেই জনের হবি,
তোমার এই দ্বীনের খুবি
প্রকাশ হবে দীপ্তকার।
১৯৩.
ডুব না জেনে ডুবতে চাওরে মন
সমুদ্রে ভেসে বেড়াও কলাগাছ যেমন,
সিরাজ সাঁই কয়
অবোধ লালন গুরুচরণ সার কর।
১৯৪.
মনরে যে পথে সাঁইর আসা যাওয়া
তাতে নাই মাটি আর হাওয়া।
১৯৫.
আলীপুরে করে কাচারি
তার উপরে নিঃশবদপুরী
জীবের সাধ্য কিরে তার উল পাওয়া।
১৯৬.
নিগুম ঠাঁই সতত থাকে
যথা যে যা করে সব দেখে,
দেখতে নারে চর্ম চোখে
কেউ দেখেনা তার কায়া।
১৯৭.
মন যায় মনের উপরে
তবে অধর সাঁইকে ধরতে পারে,
অধীন লালন কয় বিনয় তরে
তে জানে তাহা।
১৯৮.
আপন খবর না যদি হয়।
যার অন্ত নাই তার খবর কে পায়।
১৯৯.
আত্মা রূপে আছে কেবা
ভান্ডে তে করে সেবা,
দেখ মন দেখ যে বা
হও সে মহাশয়।
২০০.
কে বা চালায় কে বা চলে
কে বা জাগে ধড়ে বলে,
দেখ মন বিচারস্থলে
কে বা ঘুমায়।