ভবঘুরেকথা
মহাত্মা ফকির লালন সাঁইজি

ফকির লালনের বাণী : সাধকদেশ

৪৫১.
ধুঁড়ে হদ্দ মেনে আছি
এখন বসে খেদায় মাছি।

৪৫২.
লালন বলে মরে বাঁচি
কোন কার্যেতে।

৪৫৩.
আপন মনের বাঘে যারে খায়।
কোনখানে পালালে বাঁচা যায়।

৪৫৪.
বন্ধ ছন্দ করি এঁটে
ফস করে যায় সকলি কেটে।

৪৫৫.
অমনি সে গর্জিয়ে উঠে
মন পাখিরে হানা দেয়।

৪৫৬.
মরার আগে যে জন মরে
বল কোন বাঘে কি করতে পারে।

৪৫৭.
মরা কি সে আবার মরে
মরিলে সে অমর হয়।

৪৫৮.
মরার আগে জ্যান্তে মরা
ওগো গুরুরূপে নোঙর করা।

৪৫৯.
মন জানে না মনের ভেদ
এ কি কারখানা।

৪৬০.
এইমনে ঐমন করছে ওজন
কোথা সে মনের থানা।

৪৬১.
মন দিয়ে মন ওজন করায়
দুইমনে একমন লেখে খাতায়।

৪৬২.
তারে ধরে যোগ সাধনে
ধর গে আসল নিশানা।

৪৬৩.
মন এসে মনহরণ করে
লোকে ঘুম বলে তারে,
কতো আনকা শহর আনকা
নহর ভ্রমিয়ে দেখায় তক্ষণা।

৪৬৪.
সদাই সে মন বাইরে বেড়ায়
বদ্ধ সে তো রয় না আড়ায়,
ফকির লালন বলে সন্ধি
জেনে কর গে মনের ঠিকানা।

৪৬৫.
কে বুঝিতে পারে সাঁইয়ের কুদরতি।
অগাধ জলের মাঝে জ্বলছে বাতি।

৪৬৬.
বিনা কাষ্ঠে অনল জ্বলে
জল রয়েছে বিনা স্থলে।

৪৬৭.
আখের হবে জলানলে
প্রলয় অতি।

৪৬৮.
অনলে জল উষ্ণ হয় না
জলে সে অনল নেভে না।

৪৬৯.
এমনি সে কুদরত কারখানা
দিবারাতি।

৪৭০.
যেদিন জলে ছাড়বে হুংকার
নিভে যাবে আগুনের ঘর।

৪৭১.
শহরে ষোলজনা বোম্বেটে।
করিয়ে পাগলপারা তারা নিল সব লুটে।

৪৭২.
রাজ্যেশ্বর রাজা যিনি
চোরের শিরোমণি।

৪৭৩.
নালিশ করিব আমি
কো্নখানে কার নিকটে।

৪৭৪.
পাঁচজনা ধনী ছিল
তারা সব ফতুর হল,
কারবারে ভঙ্গ দিল
কখন যেন যায় উঠে।

৪৭৫.
গেলো ধন মালনামায়
খালি ঘর দেখি জমায়,
লালন কয় খাজনারি দায়
কখন যেন যায় লাটে।

৪৭৬.
কী আজব কলে
রসিক বানিয়েছে কোঠা,
শূন্যভরে পোস্তা করে
তার ওপরে ছাদ আঁটা।

৪৭৭.
অনন্ত কুঠির স্তরে স্তরে
চারিদিকে আয়নামহল তার,
হাওয়ার বারাম নাই রূপ দেখা
যায় মণিমানিক্যের ছটা।

৪৭৮.
যেদিন রসিক চাঁদ যাবে সরে
হাওয়া প্রবেশ হবে না সেই ঘরে,
নিভে যাবে রসের বাতি
ভেঙে যাবে সবঘটা।

৪৭৯.
দেখিতে বাসনা যার হয়
দেলদরিয়ায় ডুবলে দেখা যায়,
লালন বলে সত্যাসত্য
কারে আর দেখবি কেঠা।

৪৮০.
ধন্য ধন্য বলি তারে।
বেঁধেছে এমনও ঘর
শূন্যের উপর পোস্তা করে।

৪৮১.
সবে মাত্র একটি খুঁটি
খুঁটির গোড়ায় নাইকো মাটি,
কিসে ঘর রবে খাঁটি
ঝড়ে তুফান এলে পরে।

৪৮২.
মুলাধার কুঠুরি নয়টা
তাহার উপর চিলেকোঠা,
তাহে এক পাগলা বেটা
বসে একা একেশ্বরে।

৪৮৩.
উপর নীচে সারি সারি
সাড়ে নয় দরজা তারি,
লালন কয় যেতে পারি
কোন দরজা খুলে ঘরে।

৪৮৪.
সপ্ততলা ভেদ করিলে
হাওয়ার ঘরে যাওয়া যায়।

৪৮৫.
হাওয়ার ঘরে গেলে পরে
অধর মানুষ ধরা যায়।

৪৮৬.
হাওয়াতে হাওয়া মিশায়ে
যাওরে মন উজান বেয়ে।

৪৮৭.
জলের বাড়ি লাগবে নারে
যদি গুরুর দয়া হয়।

৪৮৮.
গুরুপদে যার মন ডুবেছেরে
সে কি ঘরে রইতে পারে।

৪৮৯.
রত্ন থাকে যত্নের গরে
কোন সন্ধান ধরবি তায়।

৪৯০.
মৃণালের পর আছে স্থিতি
রূপের ছটা ধরবি যদি,
লালন কয় তাঁর গতাগতি
সেইখানে চাঁদ উদয় হয়।

৪৯১.
দেখ নারে ভাবনগরে ভাবের ঘরে ভাবের কিস্তি।
জলের ভিতর ও মন জ্বলছে বাতি।

৪৯২.
ভাবের মানুষ ভাবের খেলা
ভাবে বসে দেখ নিরালা,
নীরে ক্ষীরেতে ভেলা
বায় কি জুতি।

৪৯৩.
রতিতে জ্যোতির উদয়
সামান্যে কি তাই জানা যায়,
তাতে কত রূপ দেখা যায়
হীরে লাল মতি।

৪৯৪.
নিঃশব্দে শব্দ খাবে
ভাবের খেলা ভেঙ্গে যাবে,
লালন কয় দেখবি তবে
হয় কি গতি।

৪৯৫.
প্রেমবাজারে কে যাবি তোরা আয় গো আয়।
প্রেমের গুরু কল্পতরু প্রেমরসে মেতে রয়।

৪৯৬.
প্রেমের রাজা মদনমোহন
নিহেতু প্রেম সাধনে ধরে
শ্যাম রাধার যুগল চরণ;
প্রেমের সহচরী হয় গোপীগণ
গোপীর দ্বারে বাঁধা হয়।

৪৯৭.
অবিম্বু উথলিয়ে নীর
পুরুষ-প্রকৃতি হরে কার
দোহার প্রেমশৃঙ্গার;
প্রেমশৃঙ্গারে উভয় মেতে
শেষে লেনাদেনা হয়।

৪৯৮.
নির্মল প্রেম করে সাধন
শম্ভুরসে করে স্থিতি
সামান্য রতি নিরূপণ;
সিরাজ সাঁই কয় শোন রে লালন
তাতে শ্যাম অঙ্গ গৌরাঙ্গ হয়।

৪৯৯.
যদি উজান বাঁকে তুলসী ধায়।
খাঁটি তার পূজা বটে
চরণচাঁদে পায়।

৫০০.
তুলসী দেয় যতো
ভাটিয়ে যায় ততো,
কোথায় সে অটল পদ
তুলসী কোথায়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!