ভবঘুরেকথা
ফকির লালন শাহ্

ফকির লালনের বাণী : সাধকদেশ

৫০১.
তুলসী গঙ্গাজলে
উজাবে কোনকালে,
মনতুলসী হলে
অবশ্য হয়।

৫০২.
প্রেমের ঘাটে বসি
ভাসাও মনতুলসী,
লালন কয় তার দাসী
লেখে খাতায়।

৫০৩.
মন আমার গেল জানা।
কারো রবে না এ ধন জীবন যৌবন
তবে কেন মন এত বাসনা।

৫০৪.
একবার সবুরের দেশে বয় দেখি দম কষে
উঠিস নারে ভেসে পেয়ে যন্ত্রণা।

৫০৫.
যে করে কালার চরণের আশা
জানোনারে মন তার কী দুর্দশা।

৫০৬.
ভক্তবলী রাজা ছিল, সর্বস্ব ধন নিল
বামুনরুপে প্রভু করে ছলনা।

৫০৭.
প্রহ্লাদ চরিত্র দেখ চিত্রধামে
কত কষ্ট হল সেই কৃষ্ণনামে।

৫০৮.
তারে অগ্নিতে জ্বালালো জলে ডুবাইল
তবু না ছাড়িল শ্রীরূপসাধনা।

৫০৯.
কর্ণরাজা ভবে বড় দাতা ছিল
অতিথিরূপে তার সবংশ নাশিল।

৫১০.
তবু কর্ণ অনুরাগী, না হইল দুখী
অতিথির মন করল সান্ত্বনা।

৫১১.
রামের ভক্ত লক্ষণ ছিল সর্বকালে
শক্তিশেল হানিল তার বক্ষস্খলে,
তবু রামচন্দ্রের প্রতি, লক্ষণ না ভুলিল ভক্তি
লালন বলে কর এ বিবেচনা।

৫১২.
পিরিতি অমূল্যনিধি,
বিশ্বাসমতে কারো হয় যদি।

৫১৩.
এক পিরিত শক্তিপদে
মজেছিলো চণ্ডীচাঁদে।

৫১৪.
জানলে সে ভাব মনকে বেঁধে
ঘুঁচে যেতো পথের বিবাদী।

৫১৫.
এক পিরিত ভবানীর সনে
করেছিলো পঞ্চাননে,
নাম রটিল ত্রিভুবনে
কিঞ্চিত্‍ ধ্যানে মহাদেব সিদ্ধি।

৫১৬.
এক পিরিত রাধা অঙ্গ
পরশিয়ে শ্যাম গৌরাঙ্গ,
করো লালন এমনই সঙ্গ
সিরাজ শাঁই কয় নিরবধি।

৫১৭.
শুদ্ধপ্রেম না দিলে ভজে কে তাঁরে পায়,
ও সে না মানে আচার না মানে বিচার।

৫১৮.
শুদ্ধপ্রেমরসের রসিক দয়াময়,
জানো না মন শুকনা কাষ্ঠে কবে তার মালঞ্চ ফোটে।

৫১৯.
প্রেম নাই যাহার চিত্তে তেমনই,
কাষ্ঠ সে পরসুখের জন্যে নিজপুত্র বলি দেয়।

৫২০.
সে প্রেমের রসিক যাঁরা ফণী যেমন মণিহারা,
দেখলে তাঁর মুখ হৃদয়ে বাড়ে সুখ।

৫২১.
সেই দয়াল চাঁদ তাহার থাকে সদয়,
যোগীন্দ্র মনীন্দ্রাদি যোগ সেধে না পায় নিধি।

৫২২.
শুদ্ধপ্রেম দিয়ে তাঁরে ভজে গোপীর দ্বারে,
লালন বলে সে প্রেম ঘটবে কি আমায়।

৫২৩.
সামান্যে কি সেই প্রেম হবে।
গুরু পরশিলে সে প্রেম
আপনি উদয় দিবে।

৫২৪.
যে প্রেমে রাই হবে কৃষ্ণের মন
অকৈতব সেই প্রেমের করণ।

৫২৫.
সে যোগ্য অনুসার মর্ম জানে তার
অযোগ্য পাত্রে কি ভার সম্ভবে।

৫২৬.
বলব কি সেই প্রেমের বাণী
কামে থেকে হয় নিস্কামিনী।

৫২৭.
সে যে শুদ্ধ সহজরস করিয়ে বশ
দোহার মন বহে দোহার ভাবে।

৫২৮.
অরুণ কিরণে হয় যমন
কমলিনী প্রফুল্ল বদন।

৫২৯.
সে যে লক্ষযোজন অন্তে দোহার প্রেম একান্তে
লালন কয় রসিকের প্রেম তমনি ভবে।

৫৩০.
আল্লা কে বোঝে তোমার অপার লীলে,
তুমি আপনি আল্লা ডাকো আল্লা বোলে।

৫৩১.
নৈরাকারে তুমি নূরী
ছিলে ডিম্ব অবতারি,
তুমি সাকারে সৃজন গঠলেন ত্রিভুবন
এসে আকারে চমৎকার ভাব দেখালে।

৫৩২.
নৈরাকারে নিগম্বুর ধসি
সেওতো সত্য সবাই জানি।

৫৩৩.
তুমি আগমের ফুল, নিগুমের রাসুল
এসে আদমের ধড়ে জান হইলে।

৫৩৪.
আরতত্ত জানে যারা
সাইর নিগুঢ় লীলা দেখছে তারা।

৫৩৫.
তুমি নীরে নিরঞ্জন অকৈতব ধন
লালন খুজে বেড়ায় বন জঙ্গলে।

৫৩৬.
যা যা ফানার ফিকিরি জানগে যারে।
যদি দেখা বাঞ্চা হয়, সে চাদেঁরে।

৫৩৭.
ফিকিরি কিসের ফিকি
কিসের ফিকিরী।

৫৩৮.
নিজে হও ফানা
ভাব রব্বানা দেখে শমন যাক ফিরে।

৫৩৯.
নিজরুপ মুরশিদরুপ মাঝার
আছে ফনার বিধি মনরে আমার।

৫৪০.
বিছে মরিশিদরুপ, মনরে সে স্বরূপ
মিশাও সাইঁর অটল নূরে।

৫৪১.
ফানার ফিকির মরশিদের ঠাইঁ
তাই মুশিদ ভজন আইন ভেজলেন সাইঁ।

৫৪২.
যে জানে ফানার ফিকির সেই তো ফকির।
ফকির হয় কি করলে নাম জিকির।

৫৪৩.
আছে এমতো ফানার ধরন জানতে হয় তার বিবরণ,
ফানা ফিল্লাহ ফানা ফির রসুল আখের।

৫৪৪.
আখেরে অকারণ হবি কানা প্রাপ্ত ফানা তাও হলো না,
মুড়িয়ে মাথা জেনে শুনে ফকিরি পথ করো জাহির।

৫৪৫.
ফানা হয় মুর্শিদের যে মাওলারে পায় অনায়াসে,
সিরাজ সাঁই কয় লালন তোমায় ফকিরি নয় ফাঁক ফিকির।

৫৪৬.
ফানা ফিল্লায় মোশাহেদায় মশগুল রয়।
মোরাকাবায় দাখিল হলে
ইরফানি৩কোরান তারে শোনায়।

৫৪৭.
আবির কুবির জানলে পরে
চাররঙ যায় আপনি সরে।

৫৪৮.
শেষে আবার লালরঙ ধরে
তারে কি হাতে ধরা যায়।

৫৪৯.
নফসের জ্যোতি আসলে পরে
বিজলীর চটক ঝরে।

৫৫০.
সেই নফস সাধন না করে
তারে কি সাধক বলা যায়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!